logo
Thursday , 7 March 2024
  1. সকল নিউজ

ব্রহ্মপুত্রের প্রতি কিলোমিটারে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার খনিজ

প্রতিবেদক
admin
March 7, 2024 9:37 am

কোথায় কীভাবে লুকিয়ে আছে সম্পদ বলা মুশকিল। পায়ের নিচে পড়ে আছে হাজার হাজার কোটি টাকার রত্ন। কেউ কোনোভাবেই অনুভব করতে পারেনি। আমার চিরচেনা ব্রহ্মপুত্র নদ বর্ষায় টইটম্বুর আর শুষ্ক মৌসুমে কেবলই বালি আর বালির স্তূপ। ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে যাওয়া অথবা বন্যার পানিতে একূল-ওকূল গড়াগড়ি করা বালিতে লুকিয়ে আছে অগাধ সম্পদ। তাও আবার মহামূল্যবান ৬টি খনিজ পদার্থ। এমন কল্পনা উত্তরের সাধারণ মানুষ তো নয়ই গবেষকরা কখনো করেননি। সেই বালিই এখন দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হাতছানি দিচ্ছে। ইতিমধ্যে এভারলাস্ট মিনারেলস লি. নামক অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি উত্তরের জেলা গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার বালাসীঘাট এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচরে এক্সপ্লোরেশন কাজ সম্পন্ন করেছে এবং মাইনিং লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।
উত্তরের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের বালিতে মূল্যবান ছয়টি খনিজ পদার্থের সন্ধান মিলেছে।বালির নিচে লুকিয়ে থাকা এসব খনিজ পদার্থ হচ্ছে- ইলমেনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজ। এসব খনিজের মধ্যে জিকরন সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও ছাঁচ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়। রঙ, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস, ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় রুটাইল। শিরিশ কাগজ উৎপাদনে ব্যবহার হয় গারনেট। চুম্বক, ইস্পাত উৎপাদনসহ বিভিন্ন কাজে লাগে ম্যাগনেটাইট। টিটেনিয়াম মেটাল, ওয়েল্ডিং রড ও রঙ উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় ইলমেনাইট। আর কাঁচ শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল কোয়ার্টজ।

গবেষণায় শনাক্তের পর ‘ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’ (আইএমএমএম) বলেছে প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের দাম ৩ হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি টাকা। গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের বালিতে প্রচুর পরিমাণে এসব খনিজ সম্পদ আছে নিশ্চিত করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।

খনিজ সম্পদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’র সদ্য বিদায়ী পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান মানবজমিনকে জানান, ‘কুড়িগ্রাম অংশে ব্রহ্মপুত্র নদের বালিতে পাওয়া গেছে ইলমিনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজের মতো মূল্যবান ছয়টি খনিজ। এখানকার বালিতে আরও খনিজ শনাক্তের কাজ করছেন গবেষকরা।’

ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১ বর্গ কিমি ও ১০ মি. গভীরতায় মাইনিং কার্যক্রম ও পৃথককৃত মিনারেলের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার বা ৩৬৩০ কোটি টাকা। দেশে বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন চরের খনিজ বালু নির্মাণ ও পূর্ত কাজের আওতায় ব্যবহার করে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয় হচ্ছে ৮০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে যদি ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী এলাকায় দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ী মহল কর্তৃক আনুমানিক ১৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খনিজ বালু প্রসেসিং সেন্টার স্থাপন করা হয় সেখান থেকে প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ টন খনিজ পাওয়া সম্ভব। যা ১০ বছরের মধ্যে মূলধন উঠে আসবে এবং ২২০০ জনবলের কর্মসংস্থান হবে এবং লাভজনক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, কর্মসংস্থান ও দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তা হবে।

ইতিমধ্যে এভারলাস্ট মিনারেলস লি. নামক অস্ট্রেলিয়ার একটি কোম্পানি গাইবান্ধা এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বালুচরে এক্সপ্লোরেশন কাজ সম্পন্ন করেছে এবং মাইনিং লাইসেন্সপ্রাপ্তি ও কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।
সূত্র থেকে জানা যায়, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন বালুচর থেকে ১ হাজার ৫শ’ টন বালু সংগ্রহ করা হয়। খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি টন বালি থেকে ২ কেজি ইলমিনাইট, ২শ’ গ্রাম রুটাইল, ৪শ’ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায়। গবেষকরা বলছেন- প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকা এবং ১০ মিটার (৩০ ফুট) গভীরতায় থেকে প্রাপ্ত খনিজের বাজার মূল্য ৩ হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি টাকা। এই সম্পদ কীভাবে উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াজাত করা যায় তা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা চিন্তা করছেন।

অপর আরেকটি সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণে গাইবান্ধায় ২ হাজার ২শ’ ৯৫ হেক্টর বালুচর লিজ চায় অস্ট্রেলিয়ান একটি প্রতিষ্ঠান। নিজ খরচে খনিজ আহরণের পর সরকারকে ৪৩ ভাগ দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে এভারলাস্ট লিমিটেড নামের অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানিটি বেশ কিছুদিন ধরে গাইবান্ধা সদর ও ফুলছড়ি উপজেলায় যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের ৪ হাজার হেক্টর বালুচরে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ করছে। বালাসীঘাট এলাকায় একটি প্লান্টও স্থাপন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এবার ফুলছড়ির বালাসীঘাট, সদরের মোল্লারচর এবং কামারজানি এলাকায় ২ হাজার ২৯৫ হেক্টর বালিচর লিজ চেয়ে খনিজ আহরণের আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে আহরণের পর সরকারকে ৪৩ ভাগ দেয়ার প্রস্তাব করেছে তারা। তবে এনিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

গবেষকরা বলছেন, ব্রহ্মপুত্র নদের অফুরন্ত এই সম্পদের বহুবিধ ব্যবহার যেমন সম্ভব। তেমনি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে সাশ্রয় হবে বৈদেশিক মুদ্রা। হতে পারে রপ্তানি আয়ও।

ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, ‘কুড়িগ্রামে প্রবেশ থেকে ডাউনস্ট্রিমে গাইবান্ধা পর্যন্ত এবং তিস্তা নদীর অববাহিকায় যেসব চর, সেগুলো নিয়ে আমরা জিওফিজিক্যাল সার্ভে করি। কোন জায়গায় কোন ধরনের মিনারেলস আছে, এটার প্রাথমিক স্টাডি ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়। এটি কার্যকরী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয় পাইলটিং করার নির্দেশনা দেন। এরপর ২০১৭ সালে একটি এটিপি প্রকল্প নেয়া হয়। সেই প্রকল্প অনুযায়ী জয়পুরহাটে একটি খনিজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এখানে গবেষণা করে ব্রহ্মপুত্র নদে মূল্যবান খনিজগুলোর সন্ধান মেলে।’

তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে বালিতে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি পাওয়ার পর ২০২০ সালে জয়পুরহাটে ‘ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারোলজি অ্যান্ড মেটালার্জি নামে খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। তারপর যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন এলাকা থেকে নমুনা বালি নিয়ে এসে এই কেন্দ্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এখানকার গবেষকরা এই বালিতে ছয়টি খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে বলে জানায়।

বিষয়টি নিয়ে পরিচালক (যুগ্মসচিব), খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো (বিএমডি) মো. আবুল বাসার সিদ্দিক আকনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় কোন প্রতিষ্ঠান এসব খনিজ আহরণ করবে- শিগগিরই তা নির্ধারণ করবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত