logo
Sunday , 5 November 2023
  1. সকল নিউজ

উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’

প্রতিবেদক
admin
November 5, 2023 4:24 pm

উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত আমদানিকৃত তেল খালাসের জন্য নির্মিত একমাত্র প্রকল্প ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং’। এর মাধ্যমে আমদানিকৃত পেট্রোলিয়াম জাহাজ থেকে স্টোরেজ হাউসে আনলোড করার নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে দেশ। এই প্রকল্পটি চালু হলে বড় জাহাজ থেকে আমদানি করা তেল খালাস প্রক্রিয়া ১০ থেকে ১১ দিনের জায়গায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় শেষ হবে। এতে করে যেমন বাঁচবে সময় তেমনি বাঁচবে পরিবহন ব্যয়ের বিপুল পরিমাণ অর্থ। আর নির্মাণকাজ শেষে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত প্রকল্পটি।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে এটির উদ্বোধন করবেন বলে কথা রয়েছে। সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের মাধ্যমে বছরে অপরিশোধিত তেল খালাস করা যাবে ৯ মিলিয়ন টন। এতে করে বছরে সরকারের সাশ্রয় হবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রায় ৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্পের প্রকল্পটি উদ্বোধনের জন্য নেওয়া হয়েছে সব ধরনের প্রস্তুতি। গত ২ জুলাই কমিশনিং করে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পে পরীক্ষামূলকভাবে সাগর থেকে জ্বালানি তেল খালাসের কার্যক্রম শুরু হয় উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে এর পুরোপুরি কর্মযজ্ঞ।
জানা যায়, বাংলাদেশ বছরে ৬০ লাখ টন অপরিশোধিত তেল এবং ১৩ লাখ মিলিয়ন টন পরিশোধিত তেল আমদানি করে। এই তেল দ্রুত এবং কম খরচে খালাস করতে প্রকল্প নির্মাণের কাজ শুরু করে সরকার।
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় ৮৩৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ও চীনের জিটুজি প্রকল্পের আওতায় ৯০ একরেরও বেশি জমিতে এসপিএম নির্মিত হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একবার এসপিএম চালু হয়ে গেলে বহির্নোঙর থেকে জ্বালানি ট্যাংকে পেট্রোলিয়াম পণ্যের পরিবহন খরচ কমবে। ফলে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এতে সময়ও বাঁচবে। প্রক্রিয়াটিতে ১.৮০ লাখ কিলোলিটার অপরিশোধিত তেল ধারণক্ষমতার তিনটি এবং ১.০৮ লাখ কিলোলিটার পরিশোধিত তেল ধারণ-ক্ষমতার তিনটি ট্যাংক ব্যবহার করা হবে।
বর্তমান অবকাঠামো ব্যবহার করে লাইটারেজ অপারেশনের মাধ্যমে পেট্রোলিয়াম তেল অফলোড করা অসম্ভব এবং প্রক্রিয়াটি খুব সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এ প্রকল্প তেল খালাসে নতুন যুগের সূচনা করবে উল্লেখ করে প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী বলেন, প্রকল্পের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগে আমদানি করা অপরিশোধিত তেল মাদার ভেসেল (সমুদ্রগামী বড় জাহাজ) থেকে লাইটার (ছোট) জাহাজে করে চট্টগ্রামে নেওয়া হতো। এতে ১০ থেকে ১১ দিন সময় লাগার পাশাপাশি সরকারের অনেক টাকা ব্যয় হতো। এই প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে তা ৪৮ ঘণ্টায় নেমে আসবে। বছরে সাশ্রয় হবে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা।
তিনি জানান, বর্তমানে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমুদ্রের ১৫ কিলোমিটার ভেতরে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং বয়ার মাধ্যমে মাদার ভেসেল থেকে তেল খালাস করা হবে। সাগরের তলদেশ দিয়ে দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল স্থলভাগে নির্মিত বিশাল আকৃতির ছয়টি ট্যাংকে সরবরাহ ও সংরক্ষণ করা হবে।
এসপিএম প্রতিবছর ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন তেল আনলোড করার ক্ষমতা রাখে জানিয়ে তিনি বলেন, সংরক্ষণ ট্যাংকগুলোর মধ্যে তিনটি ট্যাংকের প্রত্যেকটিতে ৩৬ হাজার কিলোলিটার ডিজেল এবং বাকি তিনটি ট্যাংকের প্রত্যেকটিতে ৬০ হাজার কিলোলিটার ক্রুড অয়েল সংরক্ষণ করা যাবে। পরে এসব ট্যাংক সেখান থেকে সারাদেশে পরিবহন ও সঞ্চালন করা হবে।
এর আগে গত বছরের শেষে প্রকল্প এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অপরিশোধিত তেল পরিশোধনের জন্য এসপিএম প্রকল্প থেকে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইএফএল) পর্যন্ত একটি ১২০ কিলোমিটার পাইপলাইনও তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজের অংশ হিসেবে প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার (কিমি) অফশোর পাইপলাইন এবং ৫৮ কিমি অনশোর পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে নির্মিত প্রকল্প বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনস্থ কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের বিষয়ে বিপিসি চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, বিপিসি বর্তমানে বড় মাদার ভেসেল থেকে তার উপকূলীয় ট্যাংকগুলোতে পেট্রোলিয়াম বহনের জন্য প্রধানত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের মালিকানাধীন লাইটারেজ বা ছোট জাহাজকে টনপ্রতি ৫.৫০ মার্কিন ডলার প্রদান করে থাকে। এসপিএম প্রকল্পটি বিপিসির এ খরচ বাঁচাবে। তিনিও জানান প্রকল্পটি চালু হলে আগে ১১ দিনে যে পরিমাণ জ্বালানি তেল খালাস করা হতো তা মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় করা যাবে।

এতে বছরে সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। তিনি বলেন, দেশের জ্বালানি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থাকে আরও সাশ্রয়ী, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো আগামী ১২ বা ১৩ নভেম্বর এটির উদ্বোধন করবেন। এখনো তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। হলেই আপনাদের জানিয়ে দেওয়া হবে। ২০১৫ সালে গ্রহণ করা প্রকল্পটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করতে এসপিএম (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং) প্রকল্পটি কার্যকরী অবদান রাখবে। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী মেগাপ্রকল্প এসপিএম বা সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিংয়ের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। সময় এবং অর্থের পাশাপাশি এর মাধ্যমে কমবে সিস্টেম লসও। এ প্রকল্পের আওতায় ২২০ কিলোমিটার পাইপলাইনের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে ৬টি বিশালাকার স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, যা বাংলাদেশের তেল মজুত সক্ষমতাকে নিয়ে যাবে নতুন উচ্চতায়।

সর্বশেষ - সকল নিউজ