logo
Friday , 19 April 2024
  1. সকল নিউজ

বিএনপির চিন্তা ছিল দেশকে অন্যের মুখাপেক্ষী করে রাখা: প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেদক
admin
April 19, 2024 2:54 pm

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৯৮ সালের বন্যায় আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা বলেছিল আমরা এ দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারব না। দুই কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি তখন চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলেছিলাম, আল্লাহর রহমতে একটি মানুষকেও না খেয়ে মরতে দেব না। আর বিএনপির চিন্তাধারা ছিল, আমরা প্রতিনিয়ত অন্যের কাছে হাত পেতে চলব, অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব আর ভিক্ষা চেয়ে খাবার এনে খাব।

তিনি আরওবলেন, সরকারপ্রধান হিসাবে সংসদে যখন আমি দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার ঘোষণা দিই, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে তার অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না, তাহলে বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাবে না। আসলে এটা হচ্ছে নীতির বিষয়। তারা দেশকে অন্যের মুখাপেক্ষী করে রাখতে চায়।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) পাশে শেরেবাংলা নগরের পুরোনো বাণিজ্যমেলা মাঠে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী-২০২৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী পোলট্রি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজেদেরই নিজস্ব খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক। বেসরকারি খাতকেই উদ্যোক্তা হিসাবে দেখতে চাই।

তাদের সবরকম সহযোগিতা করতে চাই। এর ফলে আমার দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। আমরা তাই চাই।’

সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে যুবসমাজকে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু একটা পাশ করে চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজ যদি নিজের উদ্যোগে একটু ব্যবসা-বাণিজ্য করে, তাহলে আমরা যথেষ্ট এগিয়ে যেতে পারব। এসব ক্ষেত্রে আমাদের যুবসমাজকে এগিয়ে আসার জন্য আরও উৎসাহিত করতে হবে। যাতে কখনো আমাদের কারও ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নিজস্ব পুষ্টির ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই করতে পারি, সে বিশ্বাস আমার আছে।’

প্রধানমন্ত্রী উৎপাদন বৃদ্ধিতে গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের গবেষণা আরও বাড়াতে হবে। আজ আমরা ৪০ ভাগের ওপরে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে পারি। আমরা কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না। প্রতিটি পণ্য আমরা নিজেরাই উৎপাদন করব।’

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানে পোলট্রি খাতের প্রতিনিধি হিসাবে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান বক্তব্য দেন।

শুরুতে প্রাণিসম্পদ খাতে বর্তমান সরকারের অগ্রগতি ও অর্জনের ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ আয়োজনে এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্রাণিসম্পদে ভরব দেশ, গড়ব স্মার্ট বাংলাদেশ’। উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী প্রদর্শনীর বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের চাহিদা মিটিয়ে হালাল মাংস রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ আমাদের রয়েছে। অনেক দেশ হালাল মাংস আমাদের থেকে ক্রয় করতে চায়। সেই সুযোগ আমাদের নিতে হবে। আর সেজন্য আমাদের পশুপাখিগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে লালনপালন এবং নিয়ম মেনে জবাই করতে হবে। প্যাকেটজাত করার ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে হচ্ছে কি না, সে বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। এভাবে যদি করতে পারি, তাহলে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে কিছু কিছু রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু আরও রপ্তানি করার সুযোগও আমাদের আছে, অনেক দেশের কাছ থেকে আমরা সেই অনুরোধও পাচ্ছি।’

পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি, সেজন্য কিছু আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বুচার হাউজ (কসাইখানা) আমাদের তৈরি করা দরকার। বিশেষ করে কুরবানির সময় রাস্তাঘাটে যেখানে-সেখানে ফেলে পশু জবাই করা আমাদের বন্ধ করতে হবে। সুনির্দিষ্ট একটি স্থান থাকবে, যেখানে পশু জবাই হবে এবং যার যার চিহ্নিত পশু সে নিয়ে যাবে। তাহলে পুরো প্রক্রিয়া যেমন স্বাস্থ্যসম্মত হবে, তেমনই পশুর পরিত্যক্ত অংশ এবং চামড়া যথাযথভাবে কাজে লাগানো যাবে। না হলে চামড়ার মান নষ্ট হয়, তেমনই অনেক কিছুই অপচয় হয়ে যায়।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ৪৭০টি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ পশু চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। এই ভেটেরিনারি সেক্টরটির দিকে আরও দৃষ্টি দেওয়া দরকার। দেশের আটটি বিভাগ ও ৬৪টি জেলায় ভেটেরিনারি ফার্ম, পশু চিকিৎসালয় ও সংরক্ষণাগার গড়ে তোলা দরকার।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মৎস্য ও পশুপাখির খাদ্যও যেন নিরাপদ হয় এবং এগুলো যাতে পরবর্তী সময়ে মানবদেহে কোনো রোগের সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।’ বাংলাদেশে ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অনেক দূর এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা পশুপাখির জন্য নিজেরাই নানা রকম ভ্যাকসিন তৈরি করে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যের বিষয় যে বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ সমুদ্রসীমা অর্জন করলেও এখনো গভীর সমুদ্র থেকে সম্পদ আহরণ করতে পারছি না। আসলে এক্ষেত্রে কোনো উদ্যোক্তা পাচ্ছি না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়ানোর প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি পরিত্যক্ত চরাঞ্চলে মহিষ, ভেড়া, হাঁস-মুরগি চাষে উৎসাহিত করছি।’

আয়োজকরা জানান, প্রদর্শনী ময়দানে প্রায় ২৫টি প্যাভিলিয়ন ও ৩০টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি প্যাভিলিয়ন সরকারি কর্তৃপক্ষের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। দর্শনার্থীরা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি দেখতে পারবেন। দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী শেষ হবে আজ। এক্ষেত্রে দর্শনার্থীদের কোনো প্রবেশমূল্য লাগছে না।

সর্বশেষ - সকল নিউজ