logo
Sunday , 27 August 2023
  1. সকল নিউজ

উন্নয়ন ঘিরে শোডাউন

প্রতিবেদক
admin
August 27, 2023 9:20 am

একদিনে একশ সেতু উদ্বোধন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু চালু, রাজধানীতে মেট্টোরেল চালুর পর বর্তমানে উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। যোগাযোগব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। উন্নয়নের এই মহীসোপানে দাঁড়িয়ে আগামী নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোট চেয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। সেইসঙ্গে রাজপথে শক্তির মহড়াও অব্যাহত রয়েছে।

আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে মেগা প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্যাপক শোডাউন করে উন্নয়ন তুলে ধরবে দলটি। সেইসঙ্গে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে নৌকায় ভোট চাইবেন তারা। একদিকে উন্নয়ন অব্যাহত রাখা অন্যদিকে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি জনগণের মাঝে উন্নয়ন-সাফল্য প্রচারের কৌশল নিয়েছে দলটি।

মূলত, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিশেষ মেগা প্রকল্পগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেছে। মেট্রোরেলের একাংশ চালু হয়েছে গত ২৮ ডিসেম্বর। আর নির্বাচনের কয়েক মাস আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় কয়েকটি নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে। নির্বাচনের আগে সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর- এই দুই মাসে সরকারের চারটি মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনে ‘জনসমুদ্র’ চায় আওয়ামী লীগ : মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি। বাংলাদেশে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় এ পর্যন্ত যত অবকাঠামো প্রকল্প নেয়া হয়েছে, তার মধ্যে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সবচেয়ে বড়। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকা পর্যন্ত যাবে।

প্রায় ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দ্বিতল সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকার মতো। এতে চড়তে টোল দিতে হবে। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এতে উঠানামার জন্য ২৭ কিলোমিটারের ৩১টি র‌্যাম্প রয়েছে। এসব র‌্যাম্পসহ এক্সপ্রেসওয়টি প্রায় ৪৭ কিলোমিটার দীর্ঘ। বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ এখন উদ্বোধন হচ্ছে।

আগামী ২ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরের কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন ঢাকায় ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন উপলক্ষে ওইদিন শেরে বাংলা নগরে পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা জনসমুদ্রে রূপ নেবে। মহাসমুদ্রের সে স্রোত দেখার অপেক্ষায় আছি।

এদিকে ১৬ সেপ্টেম্বর এমআরটি লাইন-৫ এর কাজের উদ্বোধন করা হবে। এই পর্যায়ে সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রোর ১৩ কিলোমিটার পাতাল আর ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার হবে উড়াল। এই প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে সাভারে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২২ অক্টোবর নবনির্মিত সড়ক ভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪০টি সেতু উদ্বোধন করবেন।

একই সঙ্গে উদ্বোধন করা হবে ১২টি ওভারপাস। এর সঙ্গে যানবাহনের ফিটনেসসংক্রান্ত ভিওসির উদ্বোধন ভার্চুয়ালি করবেন। ওইদিনই নিরাপদ সড়ক দিবস আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হবে সড়ক ভবনেই। ওইদিন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত-আহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। প্রত্যেক নিহতের পরিবারকে পাঁচ লাখ এবং আহতদের তিন লাখ করে টাকা দেয়া হবে।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দেশের সর্ববৃহৎ মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইয়াফেস উসমান। তিনি জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন।

মেট্রোরেলের মতিঝিল অংশের উদ্বোধনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশ : মেট্টোরেল চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে যোগাযোগের নতুন যুগে প্রবেশ করে রাজধানী। এটিও বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্প। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এই ছয়টির আওতায় মোট ১২৮ দশমিক ৭৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। তার মধ্যে উড়াল ৬৭ দশমিক ৫৬৯ কিলোমিটার এবং পাতাল ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এমআরটি লাইন-৬ উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত হচ্ছে।

গত ২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করা হয়। আগামী ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ উপলক্ষে ওইদিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধু টানেলে স্বপ্ন ছোঁবে এপার-ওপার : কর্ণফুলীর ২ তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন।

পরের বছরের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করা হবে বঙ্গবন্ধু টানেল। এ প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষে টানেলের অপরপ্রান্তে আনোয়ারায় সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হবে। সেখানেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যোগাযোগ খাতের এমন আমূল পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে আওয়ামী লীগের দূরদর্শী পরিকল্পনা ও কার্যকরী পদক্ষেপের কারণে। অন্যদিকে অব্যবস্থাপনায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এ খাতে তেমন কোনো বড় অবদান রাখতে পারেনি। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়ক ছিল ১২ হাজার ১৮ কিলোমিটার। যা ২০২২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ৩২ হাজার ৫২১ কিলোমিটারে নিয়ে যায়। এতে মহাসড়ক বেড়েছে প্রায় ৩ গুণ।

এছাড়া ১৯৯০ সালে গ্রামীণ পাকা রাস্তা ছিল ৮ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার। ২০২৩ তা ১ লাখ ২৮ হাজার ৫২৮ কিলোমিটারে দাঁড়ায়। ভোটের মাঠে এসব উন্নয়নকে তুলে ধরতে চায় দলটি।

এদিকে রেলের তিনটি মেগাপ্রকল্পও উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এগুলো হচ্ছে- দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা এবং খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেললাইন। এই সেপ্টেম্বরেই তিন মেগাপ্রকল্পসহ আখাউড়া থেকে ভারতের ত্রিপুরার নিশ্চিন্তপুর পর্যন্ত রেল প্রকল্প উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দোহাজারী-কক্সবাজার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উদ্বোধন পিছিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অক্টোবরে এই চারটি রেলপ্রকল্প উদ্বোধন করবেন বলে রেল সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি করে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে রাজনীতি করে। দেশের সব অর্জন-উন্নয়ন আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে। আর জনগণও উন্নয়ন চায়। বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের রাজনীতি, আগুনসন্ত্রাসের রাজনীতি চায় না।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, উন্নয়ন হচ্ছে অভূতপূর্ব। উন্নয়নের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন। কারণ উন্নয়ন প্রকল্প জনগণকে ঘিরেই। তাই প্রতিটি প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট স্থানে জনসমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। দলের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক জনগণের উপস্থিতি নিশ্চিত করারও টার্গেট থাকবে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ