logo
Tuesday , 2 January 2024
  1. সকল নিউজ

ভোট বন্ধের ক্ষমতা নেই বিএনপির : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেদক
admin
January 2, 2024 4:09 pm

দেশবাসীর উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আপনার ভোট আপনি দেবেন, কেউ যেন ঠেকাতে না পারে। বিএনপির ব্যাপারে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। এরা মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখতে চেষ্টা করছে। বিএনপিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করবে না। মানুষের ভোটের অধিকার আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি। সেই অধিকার কেড়ে নেবে, নির্বাচন বন্ধ করবে- এত সাহস তাদের নেই। তারা পারবে না। গতকাল বিকালে রাজধানীর কলাবাগানে এক বিশাল নির্বাচনি জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে এ নির্বাচনি জনসভার আয়োজন করা হয়। বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাস করে জনগণের ভোট কেড়ে নিতে চায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। এর মাধ্যমে অগ্নিসন্ত্রাসের জবাব দেবেন। নতুন ভোটারদের নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। তরুণ সমাজ ও তারুণ্যই হচ্ছে আমাদের অগ্রদূত। যারা প্রথম ভোটার হয়েছে, তাদের আহ্বান করব… নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা মানুষের হৃদয় জয় করে তাদের ভোট পাই, চুরির প্রয়োজন হয় না। তারা (জিয়া-এরশাদ) ভোট চুরি করে, এটা আমার কথা না। হাই কোর্টের রায় আছে, জিয়ার ক্ষমতা দখল অবৈধ, এরশাদের ক্ষমতা দখল অবৈধ। বিকাল ৩টায় জনসভাস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে উঠেই তিনি জাতীয় পতাকা নিয়ে উপস্থিত জনতাকে শুভেচ্ছা জানান এবং অভিবাদনের জবাব দেন।

এ সময় ইংরেজি নতুন বছর ২০২৪ সাল উপলক্ষে দলের পক্ষে দলীয় সভানেত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের পক্ষে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে বসার পর ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ, খুশির হাওয়ায় ঐ উড়ছে, বাংলার ঘরে ঘরে, মুক্তির আলোই ঝরছে’সহ তিনটি গান গেয়ে তাকে স্বাগত জানানো হয়। দুপুর ২টায় নির্বাচনি সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১২টা থেকেই রাজধানীর ১৫টি নির্বাচনি এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা, নৌকার প্রার্থীরা এসে হাজির হতে থাকেন। দুপুর ২টার আগেই সভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়। কলাবাগান মাঠ পেরিয়ে রাস্তায় ঠাঁই হয় নৌকার মিছিল নিয়ে আসা নেতা-কর্মীদের।

ঢাকার নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরিচয় করে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের সামনে এই ১৫টি রত্ন তুলে দিলাম, যারা আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করবে। এই নৌকা হচ্ছে নুহ নবীর নৌকা… মহাপ্লাবনে মানব জাতিকে রক্ষা করেছিল। এই নৌকায় মানুষের উন্নতি হয়। এই নৌকা মানুষকে নিশ্চিত জীবন দেয়, শান্তি দেয় ও সমৃদ্ধি দেয়। এই নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দেওয়ায় আজকে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবেন। ৪১ সালের মধ্যে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। শুধু ভোট দেবেন না, আপনার ভোট রক্ষাও করবেন। আর ওই অগ্নিসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী বিএনপিকে উপযুক্ত জবাব দেবেন। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভোট চুরি করতে পারবে না, তাই নির্বাচন করছে না। তারা তো ভোট চুরি করে অভ্যস্ত। তিনি বলেন, তারা আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষ, বাস-ট্রাক, রেল… রেললাইন খুলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষ মারে। ট্রেনে আগুন দিয়েছে, শিশুসহ মা পুড়ে মারা গেছে। এই রকম দৃশ্য এই বাংলাদেশে ঘটেছে বিএনপি-জামায়াত অগ্নিসন্ত্রাসীদের কারণে। কাজেই এদের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণকে সবসময় সজাগ থাকতে হবে। ওরা দেশের সর্বনাশ করতে চায়।

নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের ক্ষত এখনো অনেক মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তারেক জিয়া মুচলেকা দিয়ে চলে গিয়েছিল রাজনীতি করবে না বলে। সেখানে বসে যত চোরা টাকা মানি লন্ডারিং করে পাঠিয়েছে… শুনেছি সে নাকি ক্যাসিনো খেলে অর্থাৎ জুয়া খেলে টাকা কামাই করে। সেই টাকা দিয়ে বাংলাদেশে আবারও অরাজকতা, অগ্নিসন্ত্রাস এগুলো শুরু করেছে তারা। বিএনপির নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে ২০১৮ সালে তাদের ভরাডুবি হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে তারা এসেছিল। নির্বাচন হয়ে গেল বাণিজ্য। ২০১৮-এর নির্বাচনে তারেক জিয়া দেয় নমিনেশন, এদিকে গুলশান থেকে ফখরুল দেয় নমিনেশন, অন্যদিকে পল্টন থেকে রিজভী দেয় নমিনেশন। সকালে বলে এ আমাদের প্রার্থী তো বিকালে বলে আরেকজন প্রার্থী। তারেক রহমানের কথাই ছিল কে কত টাকা দেবেন, নমিনেশন নেবেন। টাকা দেবেন না নমিনেশন বাদ। এভাবে বিক্রির ফলে নির্বাচন ভেস্তে যায়। আর দোষ দেয় আওয়ামী লীগের ওপর।

আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছি। আমাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে, জেল খেটেছে। আমরাই নির্বাচনের সংস্কার করেছি। নির্বাচন কমিশন এখন আইনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের ওপর ন্যস্ত ছিল। আমরা স্বাধীন করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীতে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, যানজট নিরসনসহ নাগরিক বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ঢাকায় পানির অভাব ছিল। যাত্রাবাড়ীতে পানি-বিদ্যুতের অভাবে বিএনপির এমপি সালাউদ্দিনকে জনতা যে ধাওয়া দেয়, তাতে সেই এমপির নাম হয়ে গেছে দৌড় সালাউদ্দিন। কৃষক সার চাইতে গেলে তাদের গুলি করে, শ্রমিককে মজুরির জন্য গুলি করে। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন ৮০০ থেকে এখন ১২ হাজার ৫০০ টাকা করেছে। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তো আছেই। আজকে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছি। ঢাকার যানজট দূর করার জন্য মেট্রোরেল চালু হয়েছে। সারা ঢাকায় মোট ৬টা মেট্রোরেল পথ আমরা করে দেব। আমরা এক্সপ্রেস ওয়ে করে দিয়েছি। নতুন নতুন ফ্লাইওভার করে দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা দ্রুততর করেছি।

নান্দনিক ঢাকা গড়তে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বর্জ্য নিষ্কাশনে সরকার অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আধুনিক পয়োশোধানাগারও করেছি। ঢাকার চারপাশে ওয়াটার ওয়ে হবে। যেসব ব্রিজ পুরোনো হয়েছে সেখানে নতুন করে ব্রিজ করে দেওয়া হবে। ঢাকায় তারের জঞ্জাল সরিয়ে সব মাটির নিচে চলে যাবে। যাতে ঢাকা সুন্দর দেখায় এবং জঞ্জালমুক্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। নিম্নআয়েরে মানুষকে ফ্লাট করে দিচ্ছি। আমরা প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি দিচ্ছি। এমনকি বিদেশে পড়াশোনার জন্যও আমরা বৃত্তি দিচ্ছি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, কিন্তু জনগণের জন্য কিছু করেননি। তবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন।

কিছু বুদ্ধিজীবী ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন তারা মানুষকে নানা কথা বলে বিভ্রান্তি করেন। তার জবাবও আমি দেব। কারণ, তারা মানুষকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করে। তাদের কাজই বিভ্রান্ত করা। কারণ গণতন্ত্র থাকলে নাকি তাদের মূল্য থাকে না। আর যদি অস্বাভাবিক সরকার থাকে উনাদের মূল্য নাকি বেড়ে যায়। কার কত মূল্য এখন দাঁড়িপাল্লায় মেপে দেখতে হবে আমাদের, সেটা আমরা দেখতে চাই।

স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা ক্ষমতায় এসেছিল অস্ত্র হাতে নিয়ে। মানুষের ভাগ্য গড়েনি। এই দেশটাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমরা দুবোন ছয়টি বছর দেশে ফিরতে পারিনি, রিফিউজি হয়ে কাটাতে হয়েছে। যেদিন ফিরে আসি, আমার রেখে যাওয়া বাবা-মা, ভাইসহ আপনজনদের পাইনি। পেয়েছি হাজার হাজার মানুষ। সেদিন ঘোষণা দিয়েছিলাম, এ বাংলাদেশের মানুষই আমার পরিবার। তাদের মধ্যেই আমি খুঁজে পাব বাবা-মা ভাইবোনের স্নেহ। এটা পেয়েছি। দেশের জনগণই আমার পরিবার, একমাত্র শক্তি। একটা প্রত্যয় ছিল, সবার মুখে খাদ্য তুলে দেব। কেউ গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। সবাইকে উন্নত জীবন দেব। ক্ষমতায় এসে সেই কাজ শুরুও করেছিলাম। কিন্তু গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবিরের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থী ফেরদৌস আহমেদ, অভিনেত্রী সুজাতা আজিম, অভিনেতা জাহিদ হাসান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ। মঞ্চে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ত্রাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিনসহ কেন্দ্রীয় নেতা, রাজধানীর অধিকাংশ আসনের নৌকার প্রার্থী ও চিত্র জগতের অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত