logo
Saturday , 17 June 2023
  1. সকল নিউজ

ব্রিকসে যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কছেদ বা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যু হবে না

প্রতিবেদক
admin
June 17, 2023 9:10 am

বৈশ্বিক নানা মেরুকরণের বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ৫ উদীয়মান অর্থনৈতিক দেশের জোট ব্রিকসে যুক্ত হতে যাচ্ছে। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার জোট ব্রিকসের অন্যতম লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের আধিপত্য মোকাবিলায় নতুন বিশ্বব্যবস্থা। সেদিক থেকে বাংলাদেশ ব্রিকসে যুক্ত হলে আসন্ন নির্বচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন হবে কিনা এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন কূটনীতিবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। বিশ্বের অনেক দেশই চাইছে ব্রিকসের সঙ্গে যুক্ত হতে। এক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলোও হয়তো বড় কোনো ইস্যু হবে না। তবে ব্রিকস এমন একটি জোট তারা এখন বৈশ্বিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বলতে চায়, তাদের কিছু বলার আছে। ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার জন্য অনেক মান অর্জন করতে হবে। সেখানে বাংলাদেশ কি অবস্থানে আছে সেগুলো বিবেচনায় নিতে হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ শিগগির ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে পারে। বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। সেদিন জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠককক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মধ্যে বৈঠক হয়। এই বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মধ্যকার বৈঠকে বিষয়টি (ব্রিকসের সদস্যপদ) উত্থাপিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের শিগগির ব্রিকস’র সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আব্দুল মোমেন আরও বলেন, ব্রিকস ব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশকে অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। ভবিষ্যতে এ জোটে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাবে ব্রিকস।

ব্রিকসে বাংলাদেশ যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কোনো ছেদ পড়বে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ ব্রিকসে ভারতও আছে যারা সেখানকার অন্যতম প্লেয়ার। বাংলাদেশের কাঠামোগত উন্নয়ন হলে সেটা আমেরিকার জন্যই লাভজনক। সে হিসাবে এই বিষয়ে আমেরিকার কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।

তিনি বলেন, ব্রিকসের আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য ফ্রান্সও চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চায় অনেকেই। কারণ ব্রিকস জি-২০ থেকেও বড় হবে। সেদিক থেকে ব্রিকসের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হতে চাওয়ার বিষয়ে আমেরিকার কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। এটি বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা করবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত হুমায়ন কবির যুগান্তরকে বলেন, ব্রিকস উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি অর্থনৈতিক ও যোগাযোগ কাঠামো। ব্রিকসের সঙ্গে যুক্ত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খারাপ হবে এমনটা মনে করছি না। বরঞ্চ উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমরা ব্রিকসের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি। ব্রিকসের সব দেশের সঙ্গেই আমাদের কমবেশি নানা সম্পর্ক আছে। চীন ভারতের সঙ্গে বেশি আছে। বাকিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ খুব একটা নেই যেমন ব্রাজিল, সাউথ আফ্রিকা। এদের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য কম। কিন্তু সম্ভাবনা আছে। সেটা মনে রেখেই সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানালে আমরা সদস্যপদ নিতে পারি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলো খুব বড় ইস্যু হবে বলে মনে করছি না।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম সফিউল্লাহ ব্রিকসের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে যুগান্তরকে বলেন, ব্রিকস আসলে কারও একক নেতৃত্বের জায়গা নয়। এক সময় নন অ্যালাইন মুভমেন্ট ছিল। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল একদিকে আমেরিকা ছিল অন্যদিকে। এখন অনেকটা ছোট আকারে সেই বিভাাজন হয়ে গেছে। প্রধান পক্ষ এখন আমেরিকা এবং দ্বিতীয় পক্ষ চায়না। ব্রিকসে চায়না, রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত ও সাউথ আফ্রিকা যে বড় ৫টি দেশ, তারা সবাই খুব শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাদের অর্থনীতি বেশ মজবুত।

এদের মধ্যম শক্তিশালী দেশ বলা যেতে পারে যারা গ্রেট পাওয়ার ছুঁতে যাচ্ছে। কোনো কেনো ক্ষেত্রে এ দেশগুলো বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর চেয়েও বেশি সামর্থ্য রাখে। আজকে চায়না ইকোনমিক পাওয়ারের ক্ষেত্রে আমেরিকার কাছাকাছি চলে গেছে এবং তারা রাশিয়ার সমকক্ষ হয়ে গেছে। এ দেশগুলো বৈশ্বিক নানা বিষয়ে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বলতে চাইছে, আমাদের একটা বক্তব্য আছে। আমেরিকা বললেও হবে না, রাশিয়া বললেও হবে না। আমরা মধ্যম শক্তির দেশ, আমাদের একটা বক্তব্য আছে বৈশ্বিক রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে।

এখানে সদস্য হওয়ার জন্য ২০টি দেশ বহু আগে দরখাস্ত করে রেখেছে। তিনি বলেন, ব্রিকসের আরও একটি উদ্দেশ্য ডলারের যে আধিপত্য সেটি হ্রাস করা। তারা চাইছে নিজেদের মধ্যে নিজেদের মুদ্রায় ইন্টারচেঞ্জ করতে ডলার ছাড়া। এটাকে একটি সাফল্যময় ব্লক হিসাবে দেখতে হবে এজন্য যে প্রত্যেকের অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী। তারা নিজেদের ব্যাংক করেছে যেখান থেকে লোন নেওয়া যাবে যেটি আইএমএফ এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সমান্তরালে অবস্থান করে। এখানে সদস্য হওয়াটা সহজ নয় কঠিন।

তিনি বলেন, ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার জন্য অনেক স্ট্যান্ডর্ড মিট করতে হবে। ইকোনমিক পাওয়ার, মার্কেট পাওয়ার, জনসংখ্যা সক্ষমতা সব কিছুই বিবেচনা করবে। আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা, ম্যানপাওয়ার কোয়ালিটি কি এসব ভাবতে হবে। ব্রিকস’র সদস্য হওয়া এটা আমাদের চাওয়া। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্রিকস’র সদস্য হলে আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কে ছেদ পড়বে এমন কোনো বিষয় নয়।

সর্বশেষ - সকল নিউজ