logo
Monday , 25 March 2024
  1. সকল নিউজ

রাজস্ব আয়ের প্রধান খাত হতে যাচ্ছে আয়কর

প্রতিবেদক
admin
March 25, 2024 9:31 am

দেশের রাজস্ব-জিডিপির অনুপাত অনেক দেশের চেয়ে কম। রাজস্ব আহরণের হার কম হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাজেট বরাদ্দ ও সম্প্রসারণ এবং প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এজন্য সরকার আয়কর এবং ভ্যাট ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কার শুরু করেছে। বিশেষ করে রাজস্ব আহরণের ধরনে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এক সময় দেশে রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ছিল শুল্ক। বিগত বছরগুলোতে আমদানি শুল্কের ওপর নির্ভরতা কমেছে, বেড়েছে প্রত্যক্ষ (আয়কর) কর থেকে রাজস্ব আহরণ। এর ধারাবাহিকতায় আগামীতে আয়কর হতে যাচ্ছে দেশের রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব আহরণে আয়কর খাতই হবে প্রধান উৎস। কারণ আমদানি এবং মূসক আহরণ বৃদ্ধি মানে আয়কর আহরণের জায়গা আছে। গত দশ বছরে আয়কর আহরণে টাকার অঙ্কে বেড়েছে, কিন্তু আরও আদায় হওয়ার কথা। এক সময় আমদানি শুল্কনির্ভর ছিল রাজস্ব আহরণ। সেখান থেকে আয়কর ও মূসক খাতে বাড়ছে রাজস্ব আহরণ। আগামীতে আমদানি শুল্ক আরও কমবে। কারণ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি হলে ডিউটি ফ্রি বাণিজ্যিক সম্পর্ক হবে। তিনি বলেন, আয়কর আহরণে আরও সম্ভাবনা রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগাতে হবে। দ্রুততম সময়ে সংস্কার কর্মসূচি শেষ করতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে শুধু এনবিআরকে অনলাইনের আওতায় আসলে হবে না, স্টেকহোল্ডারদেরও অনলাইনের আওতায় আনতে হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে আয়কর খাত থেকে সবচেয়ে বেশি আয়কর আদায়ের লক্ষ্যে কর আদায় ব্যবস্থা সহজ করার পাশাপাশি করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। করের জালে আনা হচ্ছে কর দেওয়ার যোগ্য সব মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে। একই সঙ্গে আয়কর ভীতি কমানোরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের ফলে করদাতার সংখ্যা বাড়ছে। নিষ্ক্রিয় আয়কর শনাক্তকরণ নাম্বারগুলো (টিআইএন) এখন সক্রিয় হতে শুরু করেছে। করের আওতা বাড়াতে বিভিন্নমুখী জরিপেরও উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। জানা গেছে, ইতোমধ্যে দেশে ই-টিআইএন নিবন্ধন (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেনটিফিকেশন নম্বর) এক কোটি ছাড়িয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট দেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ওই অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ছিল আমদানি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা এবং আবগারি শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর ৫৩ বছর পর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার শীর্ষে আছে মূল্য সংযোজন কর। তবে আগামীতে রাজস্ব আহরণের হাতিয়ার হবে আয়কর খাত। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনবিআরের মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মূল্য সংযোজন কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা আসবে বিভিন্ন শুল্ক খাত থেকে।

জানা গেছে, ২০৩১ সালে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ছাড়াও বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ নেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০৩১ সালের মধ্যে রাজস্ব জিডিপির হার ১৯ দশমিক ৫৫ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ২৪ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। গত দশ বছরে রাজস্ব খাতে বড় ধরনের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এ ক্ষেত্রে আয়কর খাতে বড় সাফল্য অর্জন করেছে। যদিও বৈশ্বিক তুলনায় তা এখনোও পেছনে রয়েছে। তবে আগের তুলনায় আমদানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণ কমেছে, বেড়েছে আয়কর খাত থেকে। তবে এ খাতে উন্নতির আরও সুযোগ রয়েছে।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআরের মোট আহরিত রাজস্বের ৩১ দশমিক ৬ শতাংশ এসেছে আয়কর খাত থেকে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আয়কর খাত থেকে এসেছে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছে ৩৫ দশমকি ১ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছে ৩৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এসেছে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আয়কর থেকে আহরিত হয়েছে ৫১ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আহরিত হয়েছে ৫২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আহরিত হয়েছে ৬১ হাজার ১৪৪ কোটি টাকা, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৬৯ হাজর ৭৪ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৭০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ৮৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে আদায় হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়কর থেকে আদায় হয়েছে ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে আয়কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা।

সর্বশেষ - সকল নিউজ