দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী বেশ কয়েকজন ঋণখেলাপি ইতোমধ্যে তাদের খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছেন। রোববার যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণখেলাপিদের প্রার্থী হওয়া ঠেকাতে চিহ্নিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো (সিআইবি) বা ঋণ তথ্যভান্ডারে ঋণখেলাপিদের তথ্য হালনাগাদ করছে। যেসব ঋণখেলাপি আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তারাও ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ নবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যে অনেকে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নিয়মিত করেছেন। এর মধ্যে দেশের বড় ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন।
সর্বশেষ সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ঋণখেলাপি মনোনয়নপত্র দাখিল করার আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। সেই হিসাবে আগামী ৩০ নভেম্বরের আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে প্রার্থী হতে তিনি পারবেন। আগের নিয়মে ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের কমপক্ষে ৭ দিন আগে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে হবে। তারও আগে ছিল মনোনয়নপত্র দাখিল করার কমপক্ষে ১ মাস আগে খেলাপি ঋণ নবায়নের নিয়ম। এছাড়া আগের নিয়মে খেলাপি ঋণ নবায়ন করতে প্রথম দায় হলে মোট কিস্তির ১০ শতাংশ, দ্বিতীয় দফা হলে ১৫ শতাংশ ও তৃতীয় দফায় ৩০ শতাংশ জমা দেওয়ার বিধান ছিল। বর্তমানে তা ছাড় দিয়ে আড়াই থেকে ১০ শতাংশ জমা দিয়েই খেলাপি ঋণ নবায়ন করা যাবে।
পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ঋণখেলাপি ও বিলখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা পরবর্তীকালে নানা সংশোধন হলেও সংশ্লিষ্ট ধারা কেউ বাতিল করতে পারেনি। আগে মনোনয়ন না পেলেও প্রার্থীদের ঋণের একাংশ শোধ হতো। এখন ওই ঋণখেলাপিরা শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো অপেক্ষা করবেন। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, তফশিল ঘোষণার পর যারা বিভিন্ন দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন, তাদের মধ্যে হাজার কোটি টাকার খেলাপিও কেউ কেউ আছেন। তারা পুনঃতফশিলের নামে খেলাপি ঋণের এক-দশমাংশ জমা দিলেও পরবর্তীকালে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে যে ব্যাংকগুলো থেকে আরও অনেক বেশি ঋণ হাতিয়ে নেবেন না, এর নিশ্চয়তা কী? কোনো খেলাপি ঋণগ্রহীতা যাতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে প্রার্থী হতে না পারেন, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ সজাগ দৃষ্টি রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।