ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী পর্যায়ে বার্ষিক ‘২+২ সংলাপ’ আজ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে শুরু হচ্ছে। সংলাপ উপলক্ষে নয়াদিল্লি সফর করছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন তাঁরা। ভারত সফরের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এক ব্রিফিংয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করার উদ্যোগের পাশাপাশি এই অঞ্চল এবং অবাধ, উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক গড়তে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা হবে।
নয়াদিল্লিতে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ‘২+২ সংলাপ’ নিয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ এসেছে।
রিচার্ড এম রোজোর মতে, এ ধরনের বৈঠকে বৈশ্বিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা হয়। ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা হবে এটি নিশ্চিত।
রিচার্ড এম রোজো মিয়ানমারের জান্তাকে মোকাবেলা, মালদ্বীপে চীনপন্থী সরকারের উত্থান, শ্রীলঙ্কায় অব্যাহত অস্থিতিশীলতার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগগুলোর বিষয়ে এ অঞ্চলের বড় রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের অস্বস্তি আছে। মতপার্থক্য বা উদ্যোগের ভিন্নতা থাকলেও তা যেন সম্পর্ক নষ্ট না করে তা ২+২ সংলাপের মতো ফোরামে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়।
সিএসআইএসের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের পছন্দ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশ্নটি ছিল, যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের অবস্থান বুঝতে পারছে না, নাকি এ ক্ষেত্রে ভারতের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না?
জবাবে রোজো বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমাদের (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের) মধ্যে বড় ধরনের মতপার্থক্য রয়েছে। পাঁচ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এত সচেতন ছিল না। এখন আমরা বাংলাদেশে কী ঘটছে তাতে অনেক গুরুত্ব দিই।’
রোজো বলেন, ‘ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলমান চ্যালেঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন কখন কিভাবে দেখে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। এটি সম্ভবত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এখন স্পষ্ট। চীনপন্থী মালদ্বীপের নতুন সরকারের তুলনায় মিয়ানমারের জান্তাকে মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ধরন অবশ্যই অনেক আলাদা।’
বাংলাদেশ নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিবাচক উদ্যোগগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র থামিয়ে দিতে চায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও সিএসআইএসের ভিজিটিং ফেলো ক্যাথরিন বি হাড্ডা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই তা করবে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল গত বুধবার রাতে ওয়াশিংটনে ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপে নিরাপত্তা সহযোগিতা ও অংশীদারি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেছেন, গত জুনে ওয়াশিংটনে এবং সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে ভারত-মার্কিন অংশীদারির জন্য ভবিষ্যৎ রূপরেখার কথা বলেছেন, তার অগ্রগতির ব্যাপারেও আলোচনা হবে আজকের বৈঠকে। ভারত তার সীমান্তে চীনকে কিভাবে মোকাবেলা করছে সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র জানতে চাইবে।
লু বলেন, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর এবং আগামী সপ্তাহে সান ফ্রান্সিসকোতে এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সম্ভাব্য বৈঠক নিয়েও ভারতের জানার আগ্রহ থাকতে পারে।
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের দিল্লি সফর
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার পূর্বনির্ধারিত সফরে নয়াদিল্লি গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি নয়াদিল্লিতে ভারতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন তার ভেরিফায়েড এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৩১ অক্টোবর আওয়ামী লীগ, ১ নভেম্বর জাতীয় পার্টি এবং ২ নভেম্বর বিএনপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি প্রকাশ করেছে। এসব সাক্ষাতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে সব অংশীদারকে সহিংসতা ছাড়ার এবং অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ সৃষ্টিতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।