logo
Saturday , 16 September 2023
  1. সকল নিউজ

কৃষি মার্কেটে নতুন ভবন হওয়ার আগে পুনর্বাসনের কথা বলছে সরকার

প্রতিবেদক
admin
September 16, 2023 11:42 am

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট। এখন মার্কেট জুড়ে শুধুই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের হাহাকার। চারিদিকে পোড়া গন্ধ। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া দোকানের মালামাল সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন সেই চিন্তা সবার চোখেমুখে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগুনে তাদের দোকানই নয়, পুড়েছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন। আচমকা বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। তবে তারা আবার ঘুরে দাঁড়াতে চান, সেজন্য সহায়তা চেয়েছেন কর্তৃপক্ষের কাছে। যত দ্রুত সম্ভব পুনর্বাসন এবং মার্কেটের সামনে সড়কের পাশে অস্থায়ী দোকান বসানোর দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা আরো বলেন, নতুন ভবন নয়, আগে পুনর্বাসন। ঐ মার্কেটে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে।

কৃষি মার্কেটে আগুন

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি মার্কেটের বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি, তিনি এ বিষয়ে অবগত আছেন। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। কৃষিমন্ত্রী বলেন, এ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অধিকাংশই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত। আমাদের চোখের সামনেই এই বাজার গড়ে উঠেছে। এত বড় একটা ক্ষতি, প্রায় ৫০০-৬০০ পরিবার একদম সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। আমরা অর্থনৈতিকভাবে তারা যাতে আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেজন্য সহযোগিতা করব। ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়মকানুন মেনে তারা যাতে ঋণ নিতে পারে সেজন্য যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কৃষি মার্কেটে আগুন

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অগ্নিকাণ্ডে ২১৭টি দোকান পুড়ে গেছে বলে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানের তালিকা করছে সিটি করপোরেশন। তবে কৃষি মার্কেটের সামনে জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি বুথ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তালিকায় নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করছেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা করব। তারপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।

সহযোগিতার নামে লুটপাটের অভিযোগ

সরেজমিনে গিয়ে কৃষি মার্কেটের বেশির ভাগ ব্যবসায়ীকেই যার যার দোকানের সামনে নির্বাক হয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। তাদের চোখেমুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। পাশাপাশি কৃষি মার্কেটের নতুন কাঁচাবাজারের দোকানগুলোতে বেঁচে যাওয়া পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেকেই সহযোগিতার নামে মালামাল লুট করেছে। আবার অনেকে দোকান থেকে বের করে রাখা মাল নিয়ে গেছে। আলী স্টোরের মালিক আবু তাহের বলেন, আগুন নেভার পর দেখি দোকানের বেশির ভাগ মালামাল আগুন ও পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। শুক্রবার রাতে যে সব মাল পেয়েছি সেগুলো গুছিয়ে রেখে গেছি। গতকাল সকালে এসে দেখি বেশির ভাগ মালই চুরি হয়ে গেছে। কে কীভাবে নিয়ে গেছে বলতে পারছি না। এমনকি পুড়ে যাওয়া তার, লোহার এঙ্গেলসহ সব নিয়ে গেছে। আমরা তো নিঃস্ব হয়ে গেছি। কিন্তু এরা এখন আবার পোড়া ঘায়ে আঘাত দিচ্ছে।

চাঁদপুর স্টোরের মালিক শারমিন আক্তার বলেন, তিন বোন মিলে দোকান চালাতাম। আগুনে সব পুড়ে গেছে। এরপর ছাইয়ের নিচে যা পেয়েছি সেগুলো গুছিয়ে একপাশে রেখেছি। সাটার লাগানো ছিল। কিন্তু সকালে এসে দেখি কিছুই নেই। সাটার খুলে সব নিয়ে গেছে। সাবানের গুঁড়া, চিনির বস্তাসহ বিভিন্ন মালামাল রাখা ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে অনেকেই এসেছেন। তারাও ভালো ভালো মালামাল বের করে নিয়ে গেছেন। উদ্ধার করার নামে নিয়ে গেছেন। আবার বের করে দোকানের বাইরে রাখা মালামালও নিয়ে গেছেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, স্থানীয় বিহারি ক্যাম্প ও আশপাশের লোকজন পুড়ে যাওয়া দোকানের মালামাল লুট করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, নারী-পুরুষ ও ছোট-বড় ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন দোকানের ছাই সরিয়ে মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। কেউ লোহার অ্যাঙ্গেল, পাইপ নিয়ে যাচ্ছে। মুদি দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। এদের বেশির ভাগই পাশের বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। এতে বিরক্ত ব্যবসায়ীরা।

মালামাল লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) আজিজুল হক বলেন, আমরা মার্কেটের নিরাপত্তায় কাজ করছি। সব গেটে আমাদের পুলিশ সদস্যরা আছে। কেউ কোনো অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

মালামাল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা

আগুনের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চাল, ডাল, আলু, লবণ, আটা, চিনিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। আগুনের কারণে ধোঁয়ার গন্ধ ও ভেজা এ সব পণ্য নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করছেন তারা। সাধারণ সময়ের ৮০ টাকার চাল এখন ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি বিক্রি করছেন। আবার কেউ কেউ বস্তা বিক্রি করছেন মাত্র ৭০০ থেকে হাজার টাকায়। আর এ সব পণ্য কম দামে কেনার আশায় অনেকেই ভিড় করছেন সেখানে।

হতাশা প্রকাশ করে পুড়ে যাওয়া শুভেচ্ছা জুয়েলার্সের মালিক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে যৌথ মালিকানায় ব্যবসা করছি। মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পশ্চিম-উত্তর পাশ থেকে আট মাস আগে স্থানান্তর করা হয় উত্তর-পূর্ব পাশের বর্ধিত অংশে। চোখের সামনে কোটি টাকার সম্পদ পুড়তে দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না। কোটি টাকার সম্পদের পাশাপাশি দুটি কসমেটিকসের দোকান পুড়ে গেছে দুই ভাই জহিরুল ইসলাম লিটন ও জসিম উদ্দিনের। আগুন লাগার পরে দৌড়ে এসেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি। সব শেষ হয়ে গেলেও পোড়া দোকান ছেড়ে যাননি তারা কেউই।  জসিম বলেন, একটা কিচ্ছু বের করতে পারিনি, একটা সুতাও না। এখন কী করব, কোথায় কার কাছে যাব? কবে দোকান ঠিক হবে, আর ঠিক হলেই আবার দোকান সাজাতে মালামাল তোলার টাকা কই পাব। জানি না সামনের দিনগুলোতে কী হবে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাধিক দোকান পুড়ে যায়। কয়েক কোটি টাকার মালামাল পুড়ে গিয়ে ব্যবসায়ীরা হয়েছেন সর্বস্বান্ত।

সর্বশেষ - সকল নিউজ