logo
Friday , 1 September 2023
  1. সকল নিউজ

বিদ্যুৎ জ্বালানিসহ ৪ খাতে বিনিয়োগ বাড়াবে যুক্তরাষ্ট্র

প্রতিবেদক
admin
September 1, 2023 8:56 am

দেশের বিদ্যুৎ জ্বালানিসহ চার খাতে বিনিয়োগে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা। এ লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক অংশীদারিত্বকে আরও গতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছেন। ইতোমধ্যে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে বৈঠক করেছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সফররত ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে এদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা জানান প্রতিনিধিদলটি। ওই সময় বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পাশাপাশি আকাশ পরিবহন, ডিজিটাল অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা।
এবারের সফরে দেশটির প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেটা, জ্বালানি খাতের প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি, শেভরন, এক্সনমবিল এবং উড়োজাহাজ কোম্পানি বোয়িংয়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে দেশটির উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে কর অবকাশ সুবিধা, ওয়ানস্টপ সার্ভিস কার্যকর এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালাগুলো আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

বিনিয়োগকারীদের এসব দাবি-দাওয়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বেশকিছু কার্যকর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে তাদের জানানো হয়। বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্দর, রাস্তাঘাট ও বড় বড় সেতু নির্মাণের কারণে দ্রুত অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে চীন, জাপান, ভারত, কোরিয়া ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর উদ্যোক্তারা এদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে শুরু করেছেন।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমেরিকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নতুন কিছু কোম্পানি দেশে বিনিয়োগ করতে চায়। তারা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বেশকিছু সুবিধা ও অসুবিধার কথা বলেছেন। আমরা তাদের বলেছি যদি তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে তাহলে তাদের সকল সমস্যার সমাধান করতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করায় বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের আগামীর সিংহভাগ বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বাণিজ্য মন্ত্রী।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল এবং পায়রা বন্দর, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর এবং পাওয়ার স্টেশন, কর্ণফুলী টানেলসহ অন্যান্য মেগা-প্রকল্প এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সরকারের ফাস্ট ট্র্যাক উদ্যোগের অংশ তা রপ্তানি ও আমদানির দৃশ্যপটকে আমূল পরিবর্তন করছে। যার ফলে আরও বেশি বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সভায় আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমদ এবং ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি অতুল ক্যাশপ ও এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম উপস্থিত ছিলেন। সভায় অতুল ক্যাশপ জানান, কয়েক দশক ধরেই আমেরিকান কোম্পানি এখানে কাজ করছে।

এদেশে কর্মসংস্থান ও জিডিপির উন্নয়নে সহায়তা করছে। আগামীতে আমেরিকার উদ্যোক্তারা এদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে মুখিয়ে আছেন। এজন্য বিনিয়োগ ও ব্যবসায় পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বৈঠকসূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত বিনিয়োগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের ঝুঁকি দেখছেন না, বরং বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় বলে আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ থেকে পোশাকসহ অনেক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক তেমনি এখন এ দেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করতে চায়। এ দেশের আর্থিক খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যখাত একটি বড় বিনিয়োগের জায়গা।প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এদেশ থেকে বাইরে চিকিৎসা সেবা নিতে বিদেশ সফর করছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ছে না। মার্কিন কোম্পানিগুলো তাই স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াবে। শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এখন পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতির বিকাশ ঘটানো সম্ভব। মার্কিন কোম্পানিগুলো তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ করবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোম্পানিগুলো ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় কোম্পানিগুলো ৩০ বছর ধরে অংশীদারিত্বে আছে। গত ১৩ বছর ধরে তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সঙ্গে কাজ করছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শেভরন, আমাদের প্রায় ৬৪ শতাংশ গ্যাস তারা উত্তোলন করছে। আমাদের গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করছে ঠিকাদার হিসেবে। বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের নির্বাহীদের সঙ্গে সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

এদিকে প্রতিমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে ৭০ শতাংশের মতো বিনিয়োগ মার্কিন কোম্পানিগুলো করছে। তবে আমরা ভবিষ্যতে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করছি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, এরই মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পায়রায় গভীর সমুদ্রে আরও একটি ফ্লোটিং স্টোরিজ রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএআরইউ) করব। যেটা গ্যাস সরবরাহ করবে। ইউএস এক্সিলারেট কোম্পানি সেখানে পাইপলাইনে বিনিয়োগ করবে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল এসেছে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে।

বিশেষ করে যারা জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগে আমাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আছেন, অনেকে নতুন করে অংশীদার হতে চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে যেন আরও বিনিয়োগ পাওয়া যায়, তা নিয়ে মার্কিন-বাংলাদেশ চেম্বার দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, ১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে আরও প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলারের মতো বিনিয়োগ আশা করছি বিভিন্ন দেশ থেকে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ