logo
Thursday , 31 August 2023
  1. সকল নিউজ

চীনা বিনিয়োগ এনেছে উন্নয়নের নতুন সুযোগ

প্রতিবেদক
admin
August 31, 2023 10:07 am

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৩ সালে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেশিয়েটিভ (বিআরআই) উদ্বোধন করেন। প্রায় চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে বিশ্বের দেড়শটির বেশি দেশকে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে চায় চীন। আগামী মাসে এই প্রকল্পের এক দশক পূর্তি হতে যাচ্ছে। বিশাল এই প্রকল্পে চীনের বিনিয়োগ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিপুল সম্ভাবনা হাজির করেছে।

বাংলাদেশের অন্তত নয়টি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পে এই মুুহূর্তে চীনের বিনিয়োগ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। এর সবই চীনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ’ (বিআরআই) প্রকল্পের অংশ। গত এক দশকে এই প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

চীনের বিআরআই প্রকল্পের লক্ষ্য সারাবিশ্ব কে এক ছাতার নিচে আনা। প্রাচীন কালের সিল্ক রুটের আওতাভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন এই প্রকল্পের লক্ষ্য। বেইজিং মনে করে, এই উদ্যোগে সব দেশ সমানভাবে লাভবান হবে। এরই মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে অন্তত ৬৮টি দেশ যুক্ত হয়েছে। ২০৪৯ সালে প্রকল্পটি শেষ হবে। ৬৮টি দেশ, ৬০ শতাংশ বিশ্ব জনসংখ্যা এবং ৪০ শতাংশ উৎপাদন নিয়ে এই নয়া রেশমপথ রচনা করছে এশীয় আদলের নতুন বিশ্বায়ন।

বিআরআই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার অ্যান্ড পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক, ঢাকেশ্বরী স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ডেভেলপমেন্ট

অব আইসিটি ইন্ট্রা নেটওয়ার্ক ফর ফেজ-২৫, অষ্টম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ নির্মাণে বিনিয়োগ করছে চীন। এছাড়া যোগাযোগ, প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও শিক্ষা খাতের আরও অনেক প্রকল্পে বেইজিংয়ের বিনিয়োগ রয়েছে। বলা হচ্ছে, এটিই হতে যাচ্ছে আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রকল্প।

বিআরআই প্রকল্পের দুটি অংশ- ইকোনমিক বেল্ট এবং মেরিটাইম বেল্ট। প্রকল্পটির আওতায় রয়েছে ৬টি ইকোনমিক করিডোর। করিডোরের মাধ্যমে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের খাসগর ৩০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের গাওদার সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। গাওদার সমুদ্র বন্দরও নির্মাণ হচ্ছে চীনের অর্থায়নে। যার মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ তার মজবুত অবস্থান তুলে ধরতে পারবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিআরআই প্রকল্পে এশিয়ার দেশগুলোকে আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলে বসবাস করে বিশ্বের বড় জনসংখ্যার কয়েকটি দেশ- ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া। এর ভেতর দিয়েই গেছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রধান জলপথ। এর তীরেই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলো। এই সমুদ্র প্রাকৃতিক সম্পদেও সমৃদ্ধ। বর্তমানে বছরে এই জলপথে ৯০ হাজার জলযান দিয়ে ৯ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন টন বাণিজ্যিক পণ্য পরিবাহিত হয়। বিশ্বের ৬৪ শতাংশ তেলবাণিজ্য এই জলপথের ওপর নির্ভরশীল।

বিআরআইয়ের মূল চালিকা শব্দ হলো কানেকটিভিটি। এর উদ্দেশ্য এশিয়াকে বিশ্ব-বাণিজ্যের কেন্দ্রীয় ইঞ্জিন করে তোলা। এ পরিকল্পনায় থাকছে সমুদ্রপথে একগুচ্ছ আন্তর্জাতিক বন্দর, ভূমিতে আন্তসীমান্ত সড়ক, উচ্চগতির রেলপথ, বিমানবন্দর এবং ডিজিটাল সংযুক্ততার অবকাঠামো নির্মাণ। এর সমান্তরালে থাকবে বিদ্যুতের গ্রিড, গ্যাসের পাইপলাইন এবং বাণিজ্য-সহায়ক আর্থিক কার্যক্রম। এই বাণিজ্যপথ এশিয়ার বিস্তৃত এলাকায় জালের মতো ছড়িয়ে থাকবে, এশিয়াকে ভূমি-সমুদ্র-আকাশ ও ডিজিটাল মাধ্যমে ইউরোপ ও আফ্রিকার সাথে যুক্ত করবে।

বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিসিসিআই) সাধারণ সম্পাদক আল মামুন মৃধা জানান, চীনের বিআরআই প্রকল্পে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ। এর সুবাধে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পগুলো অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, চীনা বিনিয়োগের প্রবাহ ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ অচিরেই শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিকাশ ঘটাতে পারবে। আর চীনা প্রযুক্তির স্থানান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রযুক্তি খাতেও এগিয়ে যাবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রধান হাতিয়ার প্রযুক্তি। ফলে আগামী এক দশকে যারা প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিধর হবে তারা বিশ্বকে শাসন করবে। এখানে চীন আগে থেকে এগিয়ে আছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআিরডি) সূত্র মতে, চীনের সঙ্গে বাস্তবায়ন হওয়া ৯ প্রকল্পের জন্য ৮ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে গত জুন পর্যন্ত ৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে চীন। সব প্রকল্প ২০২৬ সালের মাঝামাঝি শেষ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে ২০ বিলিয়ন ডলার খরচে ২৭টি প্রকল্প নিয়ে ‘বিনিয়োগ ও উৎপাদন সক্ষমতা সহযোগিতা জোরদারকরণ’ সমঝোতা স্মারক সই হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, চীন আমাদের অন্য দেশের মতো একটি উন্নয়ন সহযোগী, আমাদের পুরনো বন্ধুও। তিনি বলেন, সেই স্বাধীনতার সময় থেকেই চীন আমাদের বন্ধু দেশ। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চীন আমাদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও দিয়ে আসছে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ