logo
Monday , 21 August 2023
  1. সকল নিউজ

দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেদক
admin
August 21, 2023 10:08 am

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার চায় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং অগ্নি সন্ত্রাসের মতো মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলা করেও আমরা উন্নয়নের পথে দেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে চাই।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ১৫ তলাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন’ (বিটিআরসি) ভবন ও ১৩ তলাবিশিষ্ট ‘তথ্য কমিশন ভবন’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে একই সঙ্গে তিনি ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন’ (বিএফডিসি) কমপ্লেক্সেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার তৈরি করে দেওয়া ভিত্তি বা শুরু করে যাওয়া প্রতিটি কাজ সফলভাবে করতে পেরে আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলেই এই কাজগুলো আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকার চলছে, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। যদিও এর মাঝে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ এবং অগ্নিসন্ত্রাস-এমন অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে সেটাই আমরা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশকে আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। সেখানে আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট ইকোনমি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে, স্মার্ট গভর্নমেন্ট তথা প্রতিটি ক্ষেত্রই স্মার্ট হবে। তিনি আরও বলেন, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই সরকার সব ক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনগোষ্ঠী, সমাজ এবং দেশকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে।

বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পাশাপাশি এক একর জমিতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন বিটিআরসি ভবন এবং ০.৩৫ একর জমিতে তথ্য কমিশন ভবন উদ্বোধনের পর তিনি বলেন, আমরা যখনই কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ নিই, তখনই দেখতে পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভিত্তি প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ভিত্তির ওপর নির্ভর করেই আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতির পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে বাংলাদেশ ও এর জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছেন।

অনুষ্ঠানে বিটিআরসি ভবন, তথ্য কমিশন ভবন এবং বিএফডিসি কমপ্লেক্স (তেজগাঁও) সংযুক্ত ছিল। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে নবনির্মিত বিটিআরসি ও তথ্য কমিশন ভবন এবং বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ওপর একটি অডিও-ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, তথ্য চাওয়া এবং তথ্য পাওয়া মানুষের অধিকার। সেই অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি এবং এখন মানুষ কোনো তথ্য চাইলে তা পেতে পারে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগের কোনো রাখঢাক (গোপনীয়) কিছু নেই। কোনো তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে সেই চিন্তা আমাদের নেই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর নবম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ‘তথ্য অধিকার আইন’ পাশ করে এবং এর আওতায় ‘তথ্য কমিশন’ গঠন করে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেয় এবং কমিশনের নিজস্ব ভবন নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

তিনি বলেন, আমরাই বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড এবং সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৪৪টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও, ১৪টি আইপি টিভিসহ অসংখ্য সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টালের অনুমোদন দিয়েছি। আমরা সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা-২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ সহ বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমরা টেলিডেনসিটি ১০৪ শতাংশে উন্নীত করেছি। দেশে এখন মোবাইল গ্রাহক ১৮ কোটির ওপরে। ১৭ কোটি মানুষ। কিন্তু সিম ব্যবহার হচ্ছে ১৮ কোটির ওপরে। মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে এমন গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি ৭০ লাখ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সব টিভি চ্যানেল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। সাবমেরিন কেবল কক্সবাজারে এবং কুয়াকাটায় সংযুক্ত করা হয়েছে এবং আরও একটি সংযোগের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমানে বিটিআরসি’র ব্যান্ডউইথ চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিসিএল) পাশাপাশি আরও তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সাবমেরিন কেবলে সংযুক্তির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে অপটিক্যাল ফাইবার বিস্তৃত হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৮ কিলোমিটার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ৮ হাজার ৮৪৩টি ডিজিটাল সেন্টার এবং ৮ হাজার ৫০০টি পোস্ট ই-সেন্টার স্থাপন করেছে। ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার ৩৫ হাজার ২৫৬টি ওয়েবসাইট সংবলিত বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ চালু করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৫৬ সালে মন্ত্রী থাকাকালীন জাতির পিতার হাতেই এ দেশে চলচ্চিত্র শিল্পের গোড়াপত্তন হয়েছে উল্লেখ করে জানান, তার মায়েরও এতে ভূমিকা ছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদে এক বিল উত্থাপনের মাধ্যমে এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেন। জাতির পিতা গাজীপুরে ফিল্মসিটির জন্য জায়গাও বরাদ্দ দিয়ে গিয়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ২০১২ সালের ৩ এপ্রিল গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চলচ্চিত্রকে ‘শিল্প’ হিসাবে তার সরকার ঘোষণা দেয়। সরকার ‘চলচ্চিত্র সংসদ নিবন্ধন আইন ২০১১’, ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন-২০১৯’ প্রণয়ন করেছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’। অসচ্ছল শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যে ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, পাশাপাশি সিনেমা হল মালিকদের দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি ব্যাংক ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রণীত হয়েছে চলচ্চিত্র নীতিমালা।

তিনি জানান, ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। হাতিরঝিল প্রকল্পের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পটির ভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে। কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ফ্লোরে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে, যাতে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা একটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে তা প্রদর্শন করার সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

 

সর্বশেষ - সকল নিউজ