logo
Wednesday , 2 August 2023
  1. সকল নিউজ

আড়াইশ কোটি ভোক্তার বাজারে যাচ্ছে বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
admin
August 2, 2023 9:41 am

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য জোট রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসেপ)-এ যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আবারও আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলাদেশ, যে জোটের নেতৃত্বে রয়েছে চীন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আজ একটি বৈঠক রয়েছে-যেখান থেকে এই জোটে যোগদানের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এ জোট বাংলাদেশকে ১৫টি দেশের আড়াইশ কোটি ভোক্তার বাজার দেবে, যেখানে বিনা শুল্কে পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাওয়া যাবে। শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে। তবে আমদানি উন্মুক্ত হওয়ার কারণে বিপুল পরিমাণ শুল্ক হারাবে সরকার। অবাধ বাণিজ্যের কারণে প্রতিযোগিতার মুখেও পড়তে পারে দেশীয় শিল্প। তবে এই প্রতিযোগিতার কারণে দেশীয় শিল্পে সক্ষমতা বাড়বে-পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সামনের দিকে চোখ রাখতে হচ্ছে। এ কারণেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি, অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির পাশাপাশি আরসেপের মতো বৃহত্তম বাণিজ্যিক জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া জোটভুক্ত দেশগুলোর বিনিয়োগ আনাও এই জোটে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহের একটি অন্যতম কারণ।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক বলেন, ২০২০ সালে আরসেপ বাণিজ্য জোট গঠনের পর ২০২২-এর জানুয়ারি মাসে চুক্তি কার্যকর হয়। শর্ত অনুযায়ী এর ১৮ মাস পর, অর্থাৎ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে জোটে নতুনরা যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এরই মধ্যে হংকং জোটে অন্তর্ভুক্তির আবেদন জানিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হলে বাংলাদেশও জোটে যুক্ত হওয়ার আবেদন জানাবে।

চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ নিয়ে বিশ্বের এ বৃহত্তম বাণিজ্য জোটটি গঠিত হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ব্রুনাই, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন এ গ্রুপে রয়েছে। ভারত এই জোট গঠনের আলোচনায় যুক্ত হলেও তারা চুক্তিতে সই করেনি। গঠিত জোটের অর্থনীতির আয়তন বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ। জোটে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর জিডিপির পরিমাণ ২৬ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এ ধরনের একটি বাণিজ্যিক জোটে বাংলাদেশ যোগ দিতে পারলে এটি শুধু অর্থনৈতিক সক্ষমতাই বাড়াবে না, পাশাপাশি রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও বাণিজ্য উদারীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে-এমনটিই ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, আরসেপ গঠনের পর গত তিন বছরে বেশ কয়েকবার এটিতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখে সরকার। চীনের নেতৃত্বাধীন এই বাণিজ্য জোটে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে লাভ-ক্ষতি নিয়ে গত বছর একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। ওই রিপোর্ট বলেছিল, আরসেপে যোগদানের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়বে প্রায় ১৭ শতাংশ বা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে কমিশন এও জানিয়েছিল যে, জোটভুক্ত দেশগুলোর পণ্য বাংলাদেশে অবাধ আমদানি সুবিধা পাওয়ার কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হবে সরকারের। কর্মকর্তারা জানান, আলোচিত বাণিজ্য জোটে বাংলাদেশ যোগ দিলে ওই ১৫টি দেশের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে যেমন শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে, তেমনি আরসেপের অন্য দেশগুলোও বাংলাদেশে একই সুবিধা লাভ করবে। ট্যারিফ কমিশন দেখিয়েছিল যে, জোটের দেশগুলো বাংলাদেশে বিনা শুল্কে পণ্য রপ্তানি করলে বাংলাদেশের আমদানি বাড়বে প্রায় ১৫ শতাংশ। যেহেতু জোটভুক্ত দেশগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশে রপ্তানি করবে, তাই সরকার এসব পণ্য আমদানি থেকে প্রায় ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ রাজস্ব হারাবে। তবে আমদানি শুল্ক ক্ষতির বিষয়ে তখনকার ওই প্রতিবেদনটির তথ্যেও বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছিল। কারণ জোটের নেতৃস্থানীয় দেশ চীন থেকে বন্ড সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধায় যে কাঁচামাল আমদানি করে-তা ওই হিসাব থেকে ছাড় দেওয়া হয়নি। ফলে এখন নতুন করে লাভ-ক্ষতির হিসাব পর্যালোচনা করেই জোটে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ