logo
Tuesday , 30 May 2023
  1. সকল নিউজ

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন:- টাকা হাতে রাখার প্রবণতা ৯ মাসে ৬ গুণ বেড়েছে

প্রতিবেদক
admin
May 30, 2023 9:40 am

ব্যাংক থেকে টাকা তুলে গ্রাহকদের হাতে রাখার প্রবণতা আরও বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-মার্চের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে হাতে টাকার পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ছয়গুণ। গত অর্থবছরের ওই সময়ে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে তুলে হাতে রেখেছিলেন তিন হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২২০ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে সেবা ও পণ্যমূল্যের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এতে ব্যয় মিটিয়ে গ্রাহকের হাতে বাড়তি অর্থ থাকছে না। যে কারণে সঞ্চয় করতে পারছেন না। এদিকে সংসারের বাড়তি খরচ মেটাতে অনেকেই টাকা তুলে রাখছেন। এ ছাড়াও বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে মানুষের আয় কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, এ বছরের মার্চে ব্যাংক থেকে নগদ তুলে গ্রাহকদের হাতে রাখার পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। যা গত বছরের মার্চের তুলনায় ১৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চে গ্রাহকদের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। যা ২০২১ সালের মার্চের তুলনায় ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। ২০২১ সালের মার্চে ব্যাংক থেকে তুলে গ্রাহকরা হাতে রেখেছিলেন এক লাখ ৮৪ কোটি টাকা। যা ২০২০ সালের তুলনায় ছিল ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২০ সালের মার্চে গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে তুলে নগদ অর্থ হাতে রেখেছিলেন এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। যা ২০১৯ সালের তুলনায় ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি। একইভাবে ২০১৮ সালের মার্চের তুলনায় ২০১৯ সালের মার্চে গ্রাহকদের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ২০১৭ সালের মার্চের তুলনায় ২০১৮ সালের মার্চে বেড়েছে ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনৈতিক মন্দা বা যে কোনো ধরনের অনিশ্চয়তায় গ্রাহকরা ভরসা হিসাবে টাকা ব্যাংক থেকে তুলে রাখে। যা এখন দেখা যাচ্ছে। দেশে বর্তমানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও রয়েছে। এ কারণে মানুষ টাকা হাতে রাখছেন বেশি। এটি অর্থনীতির জন্য ভালো নয়।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের পর অর্থাৎ ২০২০ সাল থেকে গ্রাহকদের হাতে টাকা রাখার প্রবণতা বেড়েছে। ওই সময়ে গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। যে কারণে তারা টাকা হাতে রেখেছেন। অন্য দিকে টাকা খরচ করার মতো জায়গা ছিল না। সব দিকেই ছিল লকডাউন। যে কারণে গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা জমাও করেছিলেন বেশি। অর্থাৎ ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছিল। ওই সময়ে ব্যাংকে আমানত বেড়েছিল ১৩ শতাংশ। এখন আমানত বৃদ্ধির হার কমে গেছে। ফলে আগের চেয়ে এখন আমানত বাড়ছে কম।

করোনার ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে শুরু হয় রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ। এর প্রভাবে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেয়। পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দায় সার্বিকভাবে আয়ও কমে গেছে। এর প্রভাবে গ্রাহকরা ব্যাংকে আর সঞ্চয়ও করতে পারছেন না। উলটো ব্যাংক থেকে আগের সঞ্চয় তুলে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করছেন। এতে করে ব্যাংকে একদিকে আমানত কমেছে। অন্যদিকে গ্রাহকদের টাকা তোলার প্রবণতাও বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংক থেকে টাকা তোলা ও আমানত কমার নেপথ্যে আরও একটি কারণ রয়েছে, তা হচ্ছে দেশ বিদ্যমান রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় অনেকে দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন। যে কারণে ব্যাংকে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে কার্ব মার্কেটেও ডলারের দাম বেড়েছে। ব্যাংকে নগদ ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১১ টাকা করে। কার্ব মার্কেটে ডলার বিক্রি হচ্ছে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকায়। এ ছাড়া আমদানির পণ্য দেশে না এনে বা পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে ও রপ্তানির মূল্য দেশে না এনেও টাকা পাচার করা হচ্ছে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ