logo
Tuesday , 23 May 2023
  1. সকল নিউজ

রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি ডাবল লেন হচ্ছে

প্রতিবেদক
admin
May 23, 2023 9:47 am

রাঙ্গামাটি জেলা সদরের মানিকছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত সাড়ে ৬১ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে উন্নীত হতে যাচ্ছে। সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনা, কৃষি খাতের উন্নয়ন এবং সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতকরণের লক্ষ্যে চলতি মাসেই একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে রাঙ্গামাটি সদর, নানিয়ারচর ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার কৃষকের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ সারা দেশে দ্রুত ও নিরাপদভাবে পৌঁছাতে পারবে। এছাড়া আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে সাড়ে ৬১ কিলোমিটার সড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে করার পরিকল্পনা করেছে সওজ। প্রকল্প প্রস্তাবনায় সাড়ে ৬১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫৩ কিলোমিটার ডাবল লেন মজবুত করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে আড়াই কিলোমিটারের অধিক নিচু অংশের সড়ক পেভমেন্ট উঁচু, ৫৬ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে ড্রেন এবং ১১ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক এলাকায় ২ মিটার করে বাড়তি প্রশস্ত করা হবে।

এছাড়া পর্যটক ও স্থানীয়দের জন্য সড়কের মধ্যবর্তী এলাকায় দুটি ‘ভিউ পয়েন্ট’ প্রস্তাব করা হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১২ ফুটের সড়কটি ২৪ ফুটে উন্নীত হবে। ২৪ ফুট কার্পেটিং সড়কের দুই পাশে ৩ ফুট করে ইটের সলিং থাকবে; সব মিলিয়ে সড়কটি ৩০ ফুটের হতে যাচ্ছে। পুরো সড়কে ১৩টি কালভার্ট সম্প্রসারণ ও ৮৫টি কালভার্ট নতুন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি দুই সড়ক বিভাগের যৌথ প্রকল্পটির প্রাক্কলিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।

রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলাকে বলা হয়ে থাকে পাহাড়ের আনারসের ‘রাজধানী’। তিন পার্বত্য জেলায় যে পরিমাণ মৌসুমি ফল আনারস উৎপাদন হয়ে থাকে তার বেশির ভাগ উৎপাদন হয় নানিয়ারচরে। আনারস ছাড়াও কাঁঠাল, লিচু, আমসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল উৎপাদনে সুখ্যাতি রয়েছে উপজেলার। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর ও সদর উপজেলার মৌসুমি ফল দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয় রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়ক দিয়েই। এ সড়ক ডাবল লেনে উন্নীত হলে মৌসুমি ফল ও বাঁশ ব্যবসায়ীদের সুবিধা হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

নানিয়ারচর উপজেলার বাঁশ ব্যবসায়ী আব্দুল হক জানান, নানিয়ারচর-মহালছড়ি এলাকার ব্যবসায়ী-কৃষকদের সারা বছরই ব্যবসায়িক মৌসুম। বছরের ১২ মাসই স্থানীয় কৃষক-ব্যবসায়ীরা মৌসুমি ফল আবাদ, পরিবহন ও বাঁশ পরিবহন করেন। তার মতে, ‘রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক দিয়ে প্রতি মৌসুমে নানিয়ারচর-মহালছড়ি এলাকা থেকে ২০-৩০ হাজার মৌসুমি ফল ও বাঁশ-গাছ পরিবহনকারী ট্রাক চলাচল করে। সড়কটি সরু হওয়ার কারণে বড় আকারের ট্রাক চলাচল ব্যাহত হয়। সড়কটি ডাবল লেনে উন্নীত হলে স্থানীয় কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট সবচেয়ে উপকৃত হবেন এবং আর্থসামাজিক অবস্থার বিকাশ ঘটবে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক এম জিসান বখতেয়ার জানান, ‘রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি দীর্ঘদিনের পুরনো সড়ক হলেও এখনো সিঙ্গেল লেন রয়ে গেছে। সড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে সড়ক বিভাগের একটি ভালো উদ্যোগ। সড়কটি ডাবল লেন হলে বাস, কৃষি পণ্য ও মৌসুমি ফল পরিবহনকারী যানবাহন নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারবে। একদিকে যেমন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে, তেমনি এ সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে আসবে। এতে সড়কটির সৌন্দর্যও বাড়বে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সওজ অধিদপ্তর রাঙ্গামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলনূর সালেহীন বলেন, ‘সড়ক বিভাগ রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কটি সিঙ্গেল লেন থেকে ডাবল লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। চলতি মাসে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করে সড়ক ভবনে পাঠানো হয়েছে। একনেক সভায় পাস হলে প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাঙ্গামাটি থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি সাড়ে ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ হলেও এটি সিঙ্গেল লেনের সড়ক, যে কারণে বিভিন্ন সময়ে যানবাহন ওভারটেক করতে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এ প্রকল্পটির অধীনে ৫৩ কিলোমিটার ডাবল লেন সড়ক ও ১১ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের রাস্তা অতিরিক্ত ২ মিটার প্রশস্ত এবং ড্রেন, কালভার্টসহ অন্যান্য কাজ করা হবে। এতে স্থানীয়দের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হওয়ার পাশাপাশি পর্যটন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ও সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ