প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শনিবার গোপালগঞ্জের তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন।
জনসভায় কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাস সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমুখ।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী প্রায় চার বছর পর নিজের নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ায় যান। এদিন প্রধানমন্ত্রী ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শেখ হাসিনার সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছিল বিপুল উত্সাহ-উদ্দীপনা। উপজেলাজুড়ে ছিল সাজ সাজ রব।
দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য বদলাতে আসিনি : চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য বদলাতে আসিনি, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি। কেউ যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়, সেই অপবাদ নিতে আমি রাজি না। পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে অনেক অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংক অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি বলেই আজ এত দ্রুত কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ ও টুঙ্গিপাড়া এবং দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছি।’
শত সমস্যার পরেও উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছি : শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহামারির কারণে অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। শত সমস্যার মধ্যেও আমরা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রেখে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোটালীপাড়াবাসীকে আগে শুধু পানি, খাল-বিল, বাঁশের সাঁকো পার হতে হতো। আজকে শুধু এখানে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ করে এই অঞ্চলের মানুষের আর্থিক সুবিধা করে দিয়েছি। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া আসতে ২২ ঘণ্টা সময় লাগত লঞ্চ বা স্টিমারে। মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আমরা এখানে পৌঁছে গেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে; তার পরও দেশে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, তাই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। লন্ডনে দেড় শ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। আমরা কথা দিয়েছিলাম দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করব, সেটা আমরা করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, শত সড়ক, শত সেতু চালু হয়েছে এক দিনে, যা কোনো সরকার করতে পারেনি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকারই তা করে দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি সরকার মানেই সন্ত্রাস আর জঙ্গিবাদ। বিএনপি সরকার আমলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, গ্রেনেড হামলা, পাঁচ শ জায়গায় একই সঙ্গে বোমা হামলা, ৬৩ জেলায় বোমা হামলা, দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন। তারা মানুষকে কিছু দেয়নি, মানুষের অর্থ লুট করে বিদেশে নিয়ে গেছে।
নির্বাচনে না এলে বিএনপির অস্তিত্ব টিকবে না : ওবায়দুল কাদের : জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির পতনযাত্রা শুরু হয়েছে। তারা আন্দোলনের খেলায় হেরে গেছে। আন্দোলনের খেলায় তারা আর পারবে না। নির্বাচনে না এলে তাদের অস্তিত্বই টিকবে না।
বিএনপির আন্দোলন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, কিসের আন্দোলন! আন্দোলন দেখেছেন? পথ হারিয়ে পথিক এখন দিশাহারা। এখন পদযাত্রায় নেমেছে। গণআন্দোলন থেকে পদযাত্রা। পতনযাত্রা শুরু হয়েছে বিএনপির।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপিকে প্রতিরোধ করতে হবে। তারা সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা। জঙ্গিবাদের বিশ্বস্ত ঠিকানা। তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে। বাস ও স্কুল পুড়িয়ে ফেলে। বিদ্যুৎস্টেশন, রেললাইন পুড়িয়ে দেয়। অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা বিএনপিকে আর ক্ষমতায় আসতে দেওয়া যাবে না। তারা এ দেশের শত্রু। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধের শত্রু। তারা ক্ষমতায় আসতে পারলে আবারও জয় বাংলা, ৭ই মার্চ নিষিদ্ধ হবে। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বিজয় দিবস হবে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তালিমপুর তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় মানুষের ঢল। ছবি : পিআইডি