আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন আজ। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংগঠনটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন। দীর্ঘ চার বছর পর এ সম্মেলন হওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সভাপতি পদে ৯৬ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জানা যায়, সংগঠনটির ২৯তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। সম্মেলনের দুই মাস পর কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে দায়িত্ব পান সভাপতি হিসেবে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। পরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসাবে আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তাদের ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ভারমুক্ত করা হয়। জয়-লেখক দুই বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা কুড়ালেও পদে পদে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। কমিটি গঠন থেকে শুরু করে সংগঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটিকে যুক্ত করার পরিবর্তে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন দু’জন মিলে। সংগঠন পরিচালনায় তাদের চরম স্বেচ্ছাচারিতায় বিতর্কিত হয়েছে নেতৃত্ব। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে জানার জন্য জয় ও লেখককে ফোন দেওয়া হলেও তারা রিসিভ করেনি।
এদিকে নতুন নেতৃত্বের জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি আর হাকিম চত্বরে রাজনৈতিক আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায় শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের। শেষ মূহুর্তে নানাদিকে দৌড়ঝাঁপও করছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদের প্রার্থীরা। ব্যানার-ফ্যাস্টুন লাগানো নিষিদ্ধ হওয়ায় তা তেমন চোখে পড়েনি। সম্মেলনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করেছে। বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকটি স্তরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রবেশ গেটগুলোতে স্ক্যানার বসানো হয়েছে। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক স্তরের নিরাপত্তা পেরিয়ে প্রবেশ করতে হবে সম্মেলন স্থলে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব বলেন, সম্মেলন কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ রয়েছে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে যা ছাত্রলীগকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলবে। আর আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। তিনি আরও বলেন, সম্মেলন সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হবে। সকাল ৮টা থেকে প্রবেশের জন্য খুলে দেওয়া হবে গেট। বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রবেশ করা যাবে সম্মেলনস্থলে। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সম্মেলন উদ্বোধন করবেন ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সঞ্চালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
কত মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে : দেশের অন্যতম বড় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় শীর্ষ পদের জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি ও সংগ্রহ করা হয় ১ থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এর মধ্যে ২৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র কেনেন। প্রতিটি মনোনয়নপত্র কিনতে তিন হাজার টাকা খরচ করতে হয় প্রার্থীদের। কেন্দ্রীয় সম্মেলনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি রেজাউল করিম সুমন জানান, কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে সভাপতি পদে ৯৬ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা সবগুলোই জমা নিয়েছি। এখন যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া চলছে।
বন্ধ থাকবে যেসব রাস্তা : ছাত্রলীগের সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন কেন্দ্র করে উদ্যানের আশপাশের এলাকাগুলোর রাস্তা বন্ধ/রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে। নগরবাসীকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় চলাচলের ক্ষেত্রে ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক-রমনা বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ডিএমপি জানায়, ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষ্যে যানজট পরিহারের জন্য রাজধানীর কাটাবন ক্রসিং, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাবি মেডিকেল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ঢাবি ভাস্কর্য ক্রসিং, উপাচার্য ভবন ক্রসিং এলাকায় সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ট্রাফিক ডাইভারশন চলবে।