logo
Wednesday , 25 October 2023
  1. সকল নিউজ

আর ২ দিন পর স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে যাচ্ছে

প্রতিবেদক
admin
October 25, 2023 4:21 pm

নদীর তলদেশ দিয়ে সড়কপথ। তথা সুড়ঙ্গপথ বা টানেল। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে দেশের প্রথম টানেল। এ টানেল নিয়ে দেশজুড়ে মানুষের মাঝে রয়েছে ভিন্ন মাত্রার উৎসাহ ও উদ্দীপনা। এ টানেল নির্মাণ হওয়ার পর থেকে সকলের মাঝে চলে আসছে ক্ষণগণনা। অবসান হচ্ছে অপেক্ষার। আর মাত্র দুদিন পর খুলে যাবে দেশের প্রথম টানেল।
টানেল উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে চলছে সব ধরনের প্রস্তুতি। চট্টগ্রামের পতেঙ্গাপ্রান্তে ২৮ অক্টোবর সকালে প্রধানমন্ত্রী টানেলের ফলক উন্মোচন করবেন। এর পর টানেল অতিক্রম করে সরাসরি যাবেন আনোয়ারায় নির্ধারিত জনসভার মঞ্চে। আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে বৃহৎ সভামঞ্চ। এত বড় রাজনৈতিক সমাবেশের মঞ্চ অতীতে আর কোথাও হয়নি বলে জানানো হয়েছে দলীয় নেতাদের পক্ষ থেকে। এদিকে টানেল উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে শহর থেকে বিমানবন্দরমুখী সড়কগুলোকে দৃষ্টিনন্দন করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। সড়কের দু’পাশের আইল্যান্ডসমূহ নতুন রঙে রাঙানো হচ্ছে। অনুরূপভাবে টানেলের দক্ষিণপ্রান্তে আনোয়ারায়ও সাজসজ্জার কাজ এগিয়ে চলছে।
বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী ওয়াদা পূরণ। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জনসভায় নেতাকর্মীদের পাশপাশি বন্দরনগরী ও আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দারা এসেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে। সেখানে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা হাত তুলে বীর চট্টলার জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রামে উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিলাম’।

ঘোষণা দেন কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করার। স্বপ্ন বাস্তবায়নের যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী ইশতেহারকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। ৩ দশমিক ৪৩ কিলোমিটারের বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ। দক্ষিণ এশিয়ায়ও নদীর তলদেশের প্রথম ও দীর্ঘতম সড়ক সুড়ঙ্গপথ।
যার ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের মতো সারাদেশের মানুষ যেমন গৌরবান্বিত ও আনন্দিত। তবে নদীর তলদেশে টানেল হবে এ বিষয়টি অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। নির্মাণের আগে সম্ভাব্য স্থানে সেতুমন্ত্রী যতবারই পরিদর্শনে আসতেন, তখন অনেকে বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চাইত নদীর ভেতরে রাস্তা!
এমন প্রশ্ন দেশের মানুষেরও ছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যার টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি অনেকে ভেবেছিল নিছক প্রতিশ্রুতি। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা থেমে থাকেননি। এরই অংশ হিসেবে চীন সফরে নির্ধারিত সূচির বাইরে টানেল নির্মাণের আগ্রহের কথা জানালে চীনের সরকার এ বিষয়ে সায় দিয়ে অর্থায়নে সহযোগীতার আশ্বাস দেন।
যেসব কারণে টানেল নির্মাণ ॥ দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তিসহ ৭ গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ৪ লেনবিশিষ্ট সড়ক টানেল নির্মাণ প্রকল্প নেওয়া হয়।

উদ্দেশ্যগুলো হলো- চট্টগ্রাম শহরে নিরবচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন। এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে যুক্ত করা এবং উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিতকরণ। চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিকরণ এবং প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিতকরণ। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এর মধ্যে নতুন একটি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কর্ণফুলী টানেল নির্মিত হলে চীনের সাংহাই শহরের ন্যায় চট্টগ্রাম শহরকে ওয়ান সিটি টু টাউন মডেলে গড়ে তোলা। কর্ণফুলী নদীর ওপর বিদ্যমান দুটি সেতুর ওপর হতে যানবাহনের বাড়তি চাপ কমানো।
উল্লেখ করা যেতে পারে, চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) এবং হংকংভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অভি অরূপ অ্যান্ড পার্টনারস হংকং লিমিটেড যৌথভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রতিবেদন জমা দেয় ২০১৩ সালের এপ্রিলে। এর ওপর ভিত্তি করেই চীন ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে টানেলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা আছে, কর্ণফুলী টানেল চালুর প্রথম বছর ৬৩ লাখ গাড়ি টানেল দিয়ে চলাচল করবে। এক সময় এই পরিমাণ এক কোটি ৪০ লাখে গিয়ে ঠেকবে। চালুর প্রথম বছরে চলাচলকারী গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ হবে কনটেনার পরিবহনকারী ট্রেইলর ও বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও ভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশের মধ্যে ১৩ লাখ বাস ও মিনিবাস ও বিভিন্ন ছোট গাড়ি।
প্রসঙ্গত, চীনের জনবহুল বাণিজ্যনগরী সাংহাই। ব্যস্ততম নগরীর শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্রকে দু’ভাগে ভাগ করেছে জ্যাং জিয়াং। নদীর উপনদী জুয়াংজু। এ নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল যুক্ত করেছে নদীর উভয় পাড়কে। সাংহাই হয়েছে ওয়ান সিটি টু টাউনে। অনুরূপ চিন্তায় আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম মহানগরীকে যুক্ত করতে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মিত।
চট্টগ্রামের বুকে বয়ে চলা কর্ণফুলীর এক পাশে মহানগরী অপর পাশে আনোয়ারা উপজেলা। দুই দিকের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নদীর তলদেশ দিয়ে ভাবতেই যেন অবাস্তব লাগে। নদীর তলদেশ দিয়ে সড়ক হবে, সেখান দিয়ে গাড়ি চলবে। এমন স্বপ্নকেই বাস্তবে পরিণত করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। চীনের হুয়াংপু উপনদীর দু’তীরে যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে এশিয়ার বিখ্যাত সাংহাই নগরী। ঠিক একইভাবে ‘সাংহাই সিটির আদলে বাংলাদেশে গড়ে উঠতে যাচ্ছে স্বপ্নের শহর। ‘সাংহাই সিটির আদলে চট্টগ্রামও বাস্তবে হল দুই পাড়ের নগরী।
টানেল অভ্যন্তরে যা রয়েছে ॥ টানেলের টোল প্লাজা রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে। সেখানে রয়েছে ১৪টি টোল প্লাজা। যানজট এড়াতে এবং সময় সাশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ। একই সময়ে ১৪টি যানবাহন ১৪ সারিতে টোল দিতে পারবে। টানেলের টোল প্লাজা অত্যাধুনিক। স্বয়ংক্রিয়ভাবে টোল আদায়ের বিস্তারিত উঠবে ইলেকট্রনিক ডিসপ্লেতে। থাকছে সিসি ক্যামেরা। যার ফলে টানেলের বহির্গমন ও প্রবেশে সকল যানবাহনের গতিবিধি ধারণ থাকবে শুরুতেই। টোল প্লাজা পেরিয়ে আধা কিলোমিটার সড়ক পার হয়েই মূল টানেল। এর পর টানেলের প্রবেশমুখ।

সেখানে আছে বড় ডিসপ্লে এবং যানব হন চালকদের জন্য বিভিন্ন নির্দেশিকা। টানেলে প্রবেশের কিছুদূর পর দেখা মিলবে ফ্লাডগেইট। যা ২৩৫ মিটার। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের সময় বন্ধ হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। টানেলে ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি রং। দুপাশের দেওয়াল রূপালি ও লাল, উপরিভাগের অংশ কালো।

সর্বশেষ - সকল নিউজ