নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তথ্য হালনাগাদ ( ভেরিফাইড ডাটাবেজ প্রণয়ন কার্যক্রম) করার নামে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ৫৫০ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকারিভাবে প্রতিজন সুবিধাভোগীর ভেরিফাইড ডাটাবেজ প্রণয়নের জন্য ১৫ টাকা করে বরাদ্দ থাকলেও উল্টো সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ক্ষুধা হবে নিরুদ্দেশ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৯টি ইউনিয়নের ২২৫০০ অসহায় দরিদ্র মানুষকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় আনা। বছরে ৫ মাস ১০ টাকা কেজি দরে সুবিধাভোগীরা ৩০ কেজি করে চাল পায়। গত ১৩ জুন খাদ্য অধিদপ্তর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের ডাটাবেজ প্রণয়নের জন্য স্ব স্ব দপ্তরে প্রতি সুবিধাভোগীদের অনলাইন বাবদ ১৫ টাকা করে ব্যয় ধরে চিঠি দেওয়া হয়। সে অনুয়ায়ী খাদ্য দপ্তর প্রতিটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের ইউডিসিদের প্রশিক্ষণ প্রদান করেন।
সরেজমিনে কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও নিতাই ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের তথ্য অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিজন সুবিধাভোগীর কাছ থেকে ৫৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাজেডুমরিয়া গ্রামের কার্ডধারী জরিনা বেগম, পাকার মাথা গ্রামের নাসিমা বেগম, ফজিলা বেগমসহ অনেকেই বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে অনলাইন করার নামে চেয়ারম্যান ৫৫০ টাকা করে নিয়েছেন।’
নিতাই ইউনিয়নের নিতাই কাচারীপাড়া গ্রামের রোশনা বেগম, নিতাই কাচারীপাড়া গ্রামের আজিদা বেগম, ময়মেনা বেগমসহ অনেকেই বলেন, ‘নিতাই ইউনিয়নের ইউডিসি তাহের মিয়া আমাদের কাছ থেকে ৫৫০ টাকা করে নিয়ে অনলাইন করে দিচ্ছেন।’
নিতাই ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা আবু তাহেরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘চেয়ারম্যান যা নির্দেশনা দিয়েছেন, তা আমি শুধু বাস্তবায়ন করছি। আপনারা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।’
নিতাই ইউনিয়নের অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোত্তাকিনুর রহমান আবু মিয়া অনলাইন করার নামে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ রশিদের মাধ্যমে ৫৫০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে সে টাকা সুবিধাভোগীদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অভিযুক্ত চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দী গ্রেনেট বাবু বলেন, ‘২০১০ সাল থেকে হোল্ডিং চার্জ বাবদ ৫৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।’
সুবিধাভোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করেছেন কেন, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘এখানে কিছুটা ভুল ছিল, তাই বর্তমানে অনলাইন করা বন্ধ রেখেছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হবে।’
এদিকে বাহাগিলি ইউনিয়নেও সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ৫৫০ টাকা করে আদায় করে অনলাইন করার অভিযোগ উঠলেও ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুজাউদ্দোলা লিপটন বলেন, ‘আমি কোনো টাকা নেইনি, কেউ টাকা নিয়ে অনলাইন করে দিয়ে থাকলে টাকা ফেরৎ দেওয়া হবে।’
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডাটাবেজ প্রণয়নের জন্য প্রতি সুবিধাভোগীর জন্য ১৫ টাকা করে সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-ই আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘বাহাগিলি, কিশোরগঞ্জ ও নিতাই ইউনিয়নে হোল্ডিং ট্যাক্সের নামে ৫৫০ টাকা করে নিয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের অনলাইন করা হচ্ছে এ রকম অভিযোগ পেয়ে গোটা উপজেলায় মাইকিং করে সুবিধাভোগীদের টাকা না দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
যারা আগেই টাকা দিয়ে অনলাইন করেছেন, তাদের টাকার কী হবে, প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘তারা লিখিত অভিযোগ দিলে টাকা ফেরৎ নিয়ে তাদের দেওয়া হবে।’