যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ ৭ জনের নামে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে প্রতিবেদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি।
বাকি ছয়জন হচ্ছেন- সম্রাটের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এনামুল হক আরমান, যুবলীগের আরেক বহিষ্কৃত নেতা খালেদ মাহমুদ ভুইয়া, রাজীব হোসেন রানা, জামাল, শরিফুল ইসলাম ও আওয়াল হোসেন। মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পৃথকভাবে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে শুনানির জন্য ধার্য আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক যুগান্তরকে বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক সিআইডি একটি প্রতিবেদন এভিডেভিট করেছে। বৃহস্পতিবার আদালতে সেটি উপস্থাপন করা হবে। অপরদিকে দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, দুদক সুনির্দিষ্টভাবে মানি লন্ডারিং নিয়ে ২০২০ সাল পর্যন্ত যে কাজগুলো করেছে, সবগুলোর তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে।
পাচার হওয়া টাকার অঙ্ক আমরা ভিন্নভাবে উল্লেখ করেছি। ব্যক্তি পর্যায়ে টাকা, দেশ পর্যায়ে টাকা, অনুসন্ধান কার্যের টাকার পরিমাণ, চার্জশিট দেয়া হয়েছে এমন টাকার পরিমাণ, বিচারাধীন মামলার টাকার পরিমাণ, কত টাকা এসেছে ও কার থেকে এসেছে সবগুলো প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। গত ২২ নভেম্বর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এক আদেশে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের সব ধরনের তথ্য চান। আজ বৃহস্পতিবারের (১৭ ডিসেম্বরের) মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, দুদক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেন।
এরপর গত ১৪ ডিসেম্বর বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন সংস্থা। বৈঠকে দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট ও এনবিআরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সিআইডির প্রতিবেদনে সম্রাটসহ সাতজনের বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। ওই টাকা ফিরিয়ে আনার কাজও অব্যাহত আছে। পাশাপাশি ফিলিপাইনে পাচার হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের প্রায় ৭শ’ কোটি টাকার মামলাটিও সিআইডি তদন্ত করছে বলে উল্লেখ করেছে প্রতিবেদনে। অপরদিকে দুদকের প্রতিবেদন তদন্ত করা সব মানি লন্ডারিং মামলার তথ্য দেয়া হয়েছে। তবে মানি লন্ডারিংয়ের তালিকায় পিকে হালদারের নাম নেই। কারণ তার মামলার প্রতিবেদন আলাদাভাবে জমা দেয়া হয়েছে।
এ দুই সংস্থার বাইরে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের পৃথক প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে। দুদকের প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, গোপনীয়তার স্বার্থে সব তথ্য আমরা আপাতত দিতে পারছি না। আদালতে উপস্থাপনের পর তা পাওয়া যেতে পারে।
গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় র্যাবের অভিযানে অবৈধ ক্যাসিনো চলার বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ৭ আগস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর গত ১৩ সেপ্টেম্বর সহযোগী এনামুল হক আরমানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ১৯৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করে সিআইডি।