গত ২১ মার্চ উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যদের নির্বাচনে প্রার্থী না হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে পরিবারের সদস্য বলতে সুনির্দিষ্টভাবে কাদের বোঝানো হবে, তা সে সময় স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় হলেই নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে না, এমন একটি কথা সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। দূরসম্পর্কের আত্মীয়দেরও নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার চাপ তৈরি হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছে। তারা আগে নির্বাচন করেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সূত্র জানায়, এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মূলত দুটি বিষয়কে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। প্রথমত, অংশগ্রহণমূলক ভোটের পরিবেশ যেন বিঘ্নিত না হয়। এ লক্ষ্যে ভোটে মন্ত্রী-এমপিরা যেন প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সেটি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, একই পরিবারের কাছে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না করে দলের অন্য নেতাকর্মীদের জন্য সুযোগ তৈরি করা। এ লক্ষ্যে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্যদের ভোটে অংশ না নিতে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, দলের কারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না, সে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর ফলে মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছিল, তার অবসান হয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের অনেক আত্মীয় আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি। আত্মীয়দের অনেকের দীর্ঘ রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা রয়েছে, দলের দুর্দিনে ত্যাগ স্বীকারের ইতিহাস রয়েছে। শুধু মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় হওয়ার কারণে নির্বাচন থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে রাখা দলের জন্য মঙ্গলজনক হতো না।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন ভাগ্নে মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বৃহস্পতিবার নেত্রী (শেখ হাসিনা) নিজেই এ নিয়ে খোলাসা করে বলেছেন। স্বজন বলতে তিনি দুটি শব্দ উল্লেখ করেছেন—স্ত্রী ও সন্তান।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার স্বজনও একজন প্রার্থী হয়েছেন, আমার নিজের উপজেলায়। সেখানে প্রশ্ন হচ্ছে আমার এই প্রার্থিতার পেছনে সমর্থন আছে কি না, সম্মতি আছে কি না, আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছি কি না। সরেজমিনে সেটিই দেখার বিষয়। আমার দলের এর সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। নেতৃস্থানীয় কারো সমর্থন নেই। আমার সমর্থন তো প্রশ্নই ওঠে না। কাজেই এটি যে শেষ পর্যন্ত সরে যাবে না, সেটিও বলা যায় না।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন চট্টগ্রাম বিভাগে দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে আছেন। তিনি মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়দের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ বিষয়ে দলের সভাপতি অবস্থান সুস্পষ্ট করেছেন। আত্মীয় বলতে তিনি স্ত্রী ও সন্তানকে বুঝিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে আছেন, জনপ্রতিনিধি আছেন, তাঁদের বিষয়ে শিথিলতার কথা জানিয়েছেন। রাজনীতি না করে, রাজপথে ঘাম না ঝরিয়ে শুধু এমপি বা মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ার সুবাদে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে নিরুৎসাহ করা হয়েছে। কারণ এটি হলে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত হন।’