ইভিএমে এ ধরনের অন্যায় করার কোনো সুযোগ নেই।’ তার আগে ও পরে ইভিএমের পক্ষে প্রচার অব্যাহত রাখে ইসি। এ ক্ষেত্রে বিপক্ষের মতামত আমলে নেওয়া হয়নি; কিন্তু এই মেশিন ব্যবহারে বিপুল অর্থের জোগান না পাওয়ায় গতকাল সোমবার ইসি সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো আসনেই ইভিএম ব্যবহার করা হবে না। ৩০০ আসনের সবটিতেই ভোট হবে ব্যালটে।

এর আগে গত ২০ মার্চ নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে কী হবে না হবে, তা জানি না। আমরা অন্ধকারে। আগের কেনা দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করে ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। মেরামতের জন্য এক হাজার ২৬০ কোটি টাকার মতো লাগবে; কিন্তু টাকার নিশ্চয়তা আমরা এখনো পাইনি। টাকার নিশ্চয়তা না পেলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ব্যালটে কতটা করব বা ইভিএমে আদৌ করব কি না—এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আমরা অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসে থাকবে পারব না। ইভিএম প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) বলেছে, তাদের ছয় মাস সময় দিতে হবে মেরামত করার জন্য।’
ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, ইভিএম মেরামতের জন্য টাকা চেয়ে গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সর্বশেষ যে চিঠি দেওয়া হয়েছিল তার নেতিবাচক জবাব আসাতেই গতকালের সভায় আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ইসি। কমিশন মনে করে, পুরনো ইভিএমের মধ্যে যেগুলো এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়নি সেগুলো জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
কর্মপরিকল্পনায় যা বলা হয় : গত বছর ১৪ সেপ্টেম্বর ইভিএমকে গুরুত্ব দিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ২০ পাতার ছাপা কর্মপরিকল্পনার তিন পাতাজুড়েই আছে ইভিএমের আলোচনা। এতে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে ইসি তাদের যুক্তি তুলে ধরে বলে, ব্যালটে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করে ভোটের আগে-পরে ইচ্ছামতো বাক্সে ব্যালট ভর্তি করা সম্ভব। ইভিএমে এ ধরনের অন্যায় করার কোনো সুযোগ নেই। ইভিএমে ভোট কারচুপি করা সম্ভব—এমন প্রমাণ কেউ উপস্থাপন করতে পারেনি।
কর্মপরিকল্পনায় একাদশ সংসদ নির্বাচন থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে সুফল পাওয়া গেছে দাবি করে ইসি বলে, সংলাপে অংশ নেওয়া ২৯টি রাজনৈতিক দলের ১৭টি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। বিপক্ষে মত দিয়েছে ১২টি দল। বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের মত ইভিএমের পক্ষে থাকায় ইভিএম ব্যবহার না করা যুক্তিসংগত হবে না বলে মনে করে কমিশন। এ ছাড়া বলা হয়, কমিশন উভয় পক্ষের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা যুক্তিসংগত মনে করছে। অবশিষ্ট ১৫০ আসনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে।
অবশ্য ইসির ১৭টি দল ইভিএমের পক্ষে মত দেওয়ার তথ্যটি সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সবাই স্বীকার করেনি।
বিশেষজ্ঞ মত : নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ইভিএম ব্যবহারে ক্ষেত্রে আর্থিক বিষয়টি যেমন জড়িত, তেমনি রাজনৈতিক সমস্যাও রয়েছে। এটি অন্য দেশগুলোর তুলনায় ব্যয়বহুল। অনেক রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে। যে কারণেই হোক, ইভিএম থেকে নির্বাচন কমিশনের সরে আসাটা ইতিবাচক। এর মাধ্যমে কমিশন একভাবে স্বীকার করে নিয়েছে যে তাদের দূরদর্শিতার ঘাটতি ছিল। বাস্তবতাকে আগেই মেনে নিলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ত।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইভিএম ব্যবহার না করার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বলেন, শেষ পর্যন্ত ইসি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন ইসির উচিত, সব দলের অংশগ্রহণে পক্ষপাতহীন সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এগিয়ে যাওয়া।