logo
Wednesday , 8 May 2024
  1. সকল নিউজ

পাতকুয়া-সৌর বিদ্যুতে সুদিন উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের

প্রতিবেদক
admin
May 8, 2024 9:48 am

খরার সময় সহজে সেচ কার্যক্রম এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে পরিবেশবান্ধব সেচ ব্যবস্থা এখন উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীসহ রংপুর বিভাগের অনেক কৃষকের হাতের নাগালে। আর এ ব্যবস্থা সব কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।

রংপুর বিভাগে এই দুই প্রতিষ্ঠান ৩২৭টি সৌরচালিত সেচযন্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে সেচের আওতায় এসেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমি। এ ব্যবস্থায় কেবল কৃষকের উৎপাদন খরচই কমছে না, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত রংপুর অঞ্চলে সৌরচালিত এ সেচ যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পাতকুয়াগুলো ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ, সেচ কাজে ব্যবহার ও ভূ-গর্ভস্থ পানির সুষ্ঠু ব্যবহার বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। অপরদিকে এই সেচ ব্যবস্থা বিদু্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয় করছে। সময়ের বিবর্তনে আধুনিক হয়েছে সবকিছু। বেড়েছে সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ। থাকছে না লোডশেডিংয়ে পানির পা¤প নষ্ট হওয়ার চিন্তা।

উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগের বিএমডিএ এবং বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ থেকে রংপুর বিভাগের আট জেলায় এই দুই প্রতিষ্ঠান ৩২৭টি সৌরচালিত সেচযন্ত্র কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিএমডিএর সৌরচালিত সেচযন্ত্রের সংখ্যা ১৫৮টি। এরমধ্যে এলএলপি সেচযন্ত্রের সংখ্যা ৭৫টি এবং পাতকুয়া ৮৩টি। অপরদিকে,  (গাইবান্ধা ব্যতীত) সাত জেলায় বিএডিসির সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র আছে ১৬৯টি। এর মধ্যে রংপুরে ৪০টি, নীলফামারীতে ১০টি, লালমনিরহাটে ৫৭টি, কুড়িগ্রামে ২৫টি, দিনাজপুরে ১১টি,  ঠাকুরগাঁওয়ে ১৪টি এবং পঞ্চগড়ে ১২টি।বিএমডিএর রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে বৃহত্তর রংপুর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের (আইআরপি) আওতায় ৫ বছর মেয়াদের সৌরবিদ্যুৎ চালিত এলএলপি পা¤প এবং পাতকুয়া স্থাপন কাজ শুরু হয়েছে। এতে কৃষকের সেচ খরচ প্রায় অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, কৃষকের ব্যাপক চাহিদা থাকায় নতুন করে চরসহ রংপুর অঞ্চলে প্রায় ৫শ সৌর বিদ্যুৎ চালিত এলএলপি পাম্প স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাতকুয়া প্রকল্পে কূপ খনন করে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করার পর শুষ্ক মৌসুমে সৌরবিদ্যুতের সাহায্যে পা¤প দিয়ে সেই পানি জমিতে সেচের জন্য ব্যবহার করা হয়। কূপ থেকে সেচের পানি তোলার জন্য এর ভেতরে লম্বা পাইপযুক্ত পা¤প বসানো হয়। কুয়ার ওপরে গোল ধাতব ছাউনিতে স্থাপিত সোলার প্যানেলের সঙ্গে পাম্পটিকে যুক্ত করা হয়। সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পাম্প দিয়ে পানি তুলে পাশের উঁচু জলাধারে রেখে সেখান থেকে নালার মাধ্যমে সেই পানি খেতে দেওয়া হয়। এ সেচব্যবস্থায় পাম্প চালাতে ডিজেল বা পেট্রোলের মতো জৈব জ্বালানি প্রয়োজন হয় না। ফলে কালো ধোঁয়া ও উচ্চমাত্রার শব্দও সৃষ্টি হয় না। এই উদ্ভাবনের উদ্যোক্তা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একটি কুয়া ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি বসাতে খরচ পড়ছে গড়ে ২২ লাখ টাকা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীলফামারী জোনের সহকারী প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর মো. রুহুল ইসলাম বলেন, পাতকুয়াগুলো ১২০ ফুট পর্যন্ত গভীর। কুয়ায় সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে সবজি খেত ও ফলের বাগানে সেচ দেওয়া যায়। বর্তমানে প্রতিটি পাতকুয়া থেকে পানি তোলার জন্য ৪ দশমিক ৮ অশ্বশক্তির পা¤প ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রতিটি পাতকুয়ার পানি দিয়ে ৪০-৫০ বিঘা পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া যায়।
প্রকল্পের অধীন কিছু জেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি পাতকুয়ার ওপরে ছাতার মতো ধাতব ছাউনিতে নানান আকৃতির ৬-৭টি সোলার প্যানেল বসানো আছে। ছাদের মাঝখানে বড় ছিদ্র দিয়ে একটি পাইপ কুয়ার সঙ্গে যুক্ত। বৃষ্টির পানি এই পাইপের মাধ্যমে কুয়ায় সংরক্ষিত হয়। সুবিধাভোগী কৃষকরা জানান, কুয়াগুলো গভীর হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানিও কুয়ায় জমা হয়।সেচের সময় কুয়ায় সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি শেষ হয়ে গেলে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা সম্ভব। রংপুর সদর উপজেলার সদ্য পুষ্করিণী গ্রামের চাষি আবুল বাতেন (৪৫) বলেন, আমরা অন্য এলাকার কৃষকদের মতো জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি বা লোডশেডিং নিয়ে দুশ্চিন্তা করি না। সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে সেচের পানির ব্যবস্থা করি।
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বেতলাগাড়ী বরদহ গ্রামের কৃষক ইউনুছ আলী (৫৮) বলেন, পাতকুয়ার পানি দিয়ে সেচ দিই। প্রতি বিঘায় সেচ খরচ হিসেবে ঘণ্টায় ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জ দিই। ডিজেল দিয়ে এই জমিতে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিতে অন্তত ৩৫০ টাকা দরকার হয়। তার মতে, এই পরিবেশবান্ধব সেচব্যবস্থা প্রান্তিক চাষিদের জন্য আশীর্বাদ।
অপরদিকে, সৌরবিদ্যুৎ বিষয়ে রংপুরের কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়নের কৃষক মো. মুক্তার আলী জানান, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) রংপুর থেকে ট্রলিতে করে ভ্রাম্যমাণ সেচযন্ত্রের মাধ্যমে সেচ নিশ্চিত করছে। ফলে তার ১০ একর জমিতে এখন নিয়মিত আলু, ভুট্টা, গম, চীনা বাদাম, কালোজিরা, মিষ্টিকুমড়া, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুনসহ মসলা জাতীয় বিভিন্ন পণ্যের আবাদ করছেন তিনিসহ অন্য কৃষকরা।

বিএডিসি রংপুর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) এসএম শহীদুল আলম বলেন, সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচে কৃষকরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু এটি স্থাপনে প্রথমে যে ব্যয় হয় তা সব কৃষকের পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না। এজন্য বিএডিসি প্রকৃত কৃষকদের উপকার করতে কাজ করছে। কিন্তু চলমান প্রকল্পে আর নতুন কোনো সেচযন্ত্র স্থাপনের সুযোগ নেই।

সর্বশেষ - সকল নিউজ