logo
Sunday , 31 December 2023
  1. সকল নিউজ

এবারের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
admin
December 31, 2023 12:05 pm

নির্বাচনী ইশতেহার হলো রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনের আগে জনগণের কাছে তুলে ধরা লিখিত ও মুদ্রিত প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার। সাধারণত কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে বিজয়ী হলে তারা জনগণের জন্য কি কি কাজ করবে তার একটি তালিকা দেওয়া হয় ইশতেহারে। আগে ইশতেহার নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তেমন আগ্রহ ছিল না। আওয়ামী লীগই ইশতেহারকে জনগণের কাছে প্রাসঙ্গিক করেছে। কারণ, জনগণ বিশ্বাস করে আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা করে সেটা তারা পূরণ করে। এখন দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের ইশতেহারের অপেক্ষায় থাকে। আওয়ামী লীগের ইশতেহার মানেই নতুন কোনো আশা, নতুন কোনো স্বপ্ন।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত ২৭ ডিসেম্বর হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি দেড় দশক ধরে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে সরকার পরিচালনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ‘স্মার্ট সোনার বাংলা’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করে ইশতেহার ঘোষণা করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। এবারের সংসদ নির্বাচনে ইশতেহারের স্লোগান দেওয়া হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান।’ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা আসে আওয়ামী লীগ। দেশ গঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ : দিন বদলের সনদ।’ ২০১৪ সালে স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’ ২০১৮ সালে স্লোগান ছিল ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ।’ এবারও বিগত ইশতেহারগুলোর ধারাবাহিকতায় লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তী দুটি নির্বাচনের ইশতেহারেও ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণাকে ইশতেহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর এবারের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ।’ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে’ উত্তরণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ ‘স্মার্ট নাগরিক’, ‘স্মার্ট সরকার’, ‘স্মার্ট অর্থনীতি’ ও ‘স্মার্ট সমাজ’ গড়ার কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২৫, ২০৩১ ও ২০৪১ সালের সময়সীমার মধ্যে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। (১) দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো ও সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা (২) কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা (৩) আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা (৪) ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (৫) লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা ও যান্ত্রিকীকরণ (৬) নিম্ন আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা (৭) দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো (৮) সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা (৯) আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা (১০) সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ (১১) সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো। এছাড়াও চলমান কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ২০২৮ সালের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৭১ বিলিয়ন ডলার, মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশে উন্নীত, প্রবাসী আয় ১৪ শতাংশে বৃদ্ধি, ২০৩১ সালের মধ্যে হতদরিদ্রের অবসান, ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের তিনটি নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুত ইশতেহারের অধিকাংশই অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এক সময় যা ছিল কল্পনার বাইরে। সরকার রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছে।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করা হয়েছে। সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে সারা দুনিয়া হাতের মুঠে চলে এসেছে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে প্রায় ১৯ কোটি সিম, ১০ কোটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে নির্মাণ করা হয়েছে  ৮ হাজার ৯২৮টি ওয়ানস্টপ সেন্টার, ৫২ হাজার ২শ’টি সরকারি ওয়েবসাইট।

২০১৮ সালের নির্বাচনে অঙ্গীকার করা হয়েছিলÑ গ্রামকে নগরের সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা ও শিশুকল্যাণ, সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল করা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ়করণ, সর্বস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, দক্ষ ও সেবামূলক জনপ্রশাসন প্রতিষ্ঠা, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা, ব্লু-ইকোনমি সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন, প্রবীণ ও প্রতিবন্ধী-অটিজম কল্যাণ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা। বৈশ্বিক করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন কিংবা ইসরাইল-ফিলিস্তিনি যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক অবস্থা টালমাটাল হলেও ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ আগামী পাঁচ বছর জনগণের কাছে যেসব অঙ্গীকার করেছে তা হলো রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের মাধ্যমে দক্ষ, উদ্যোগী, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর, দুর্নীতিমুক্ত দেশপ্রেমিক ও জনকল্যাণমুখী প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে স্মার্ট ও আধুনিক হিসেবে গড়ে তোলা। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব বিভাজন স্পষ্ট করা। কর্মোপযোগী প্রশিক্ষিত যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ সরবরাহ সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামের যুবকদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমানো। দারিদ্র্যের হার ১১ শতাংশে কমানো এবং হতদরিদ্রের অবসান।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বলা হয়েছে, ‘উগ্র সাম্প্রদায়িক, জঙ্গি, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রেখে সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।’ সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষার জন্য ‘জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন’ এবং ‘সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন’ প্রণয়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ব্যক্তিদের রাজনীতিতে আহ্বান জানিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী করে তোলা হবে।’ যা অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষের বিকল্প নেই। অস্বীকার করার উপায় নেই, এক শ্রেণির শিক্ষিত লোক রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা রাজনীতিকে কলুষিত করেছে। যার ক্ষত আজও দেশের মানুষ ভোগ করছে। অথচ সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চাই একটি জাতির যে  কোনো উন্নয়ন টেকসই হওয়ার চাবিকাঠি।

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ইশতেহারে বলা হয়েছে- (১) স্মার্ট নাগরিক : শতভাগ শিক্ষিত নাগরিকরা নতুন নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে নিজেদের এবং সমাজের সকলের জীবন ও জীবিকার মান বদলে দেবে। মোবাইল, ইন্টারনেট বা কম্পিউটারের মাধ্যমে সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। (২) স্মার্ট অর্থনীতি : ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নারী-পুরুষ, শিক্ষা অথবা ভৌগোলিক দূরত্ব নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। কৃষি, শিল্প, সেবাসহ সকল খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও রোবটিকসের ব্যবহার। ফলে কমে যাবে কায়িক শ্রম, হবে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার। কমবে অপচয়, বাড়বে উৎপাদনশীলতা। (৩) স্মার্ট সরকার : প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার পরিচালনাকে দক্ষ, কার্যকর ও সাশ্রয়ী করা হবে। সরকারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত হবে জ্ঞানভিত্তিক ও তথ্যনির্ভর। সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্মার্ট নাগরিকরা স্মার্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সরকার পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সরকার তথা রাষ্ট্র হয়ে উঠবে আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। (৪) স্মার্ট সমাজ : স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর করা হবে সব রকম সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট সমাজে নাগরিকরা জ্ঞানচর্চা ও প্রয়োগের সুযোগ পাবে। সঠিক তথ্য প্রবাহের ফলে কমে যাবে ভুল ও মিথ্যা প্রচারের অনৈতিক সুবিধা।
প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ করেছেন। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ, এশিয়ার এমার্জিং টাইগার। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাজ করে বলেই জনগণ আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে বারবার ভোট দেয়। এবারও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে নৌকায় ভোট দেবে দেশের জনগণ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দায়িত্ব গ্রহণ করবে স্মার্ট সরকার।

সর্বশেষ - সকল নিউজ