logo
Friday , 29 December 2023
  1. সকল নিউজ

শেখ হাসিনার হাত ধরেই পারমাণু বিদ্যুৎ যুগে দেশ

প্রতিবেদক
admin
December 29, 2023 5:12 pm

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসাবে সারাবিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। একের পর এক মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, যোগাযোগ, ব্যবসাবাণিজ্য ও নাগরিক সুবিধার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমান সরকারের ১০টি বৃহৎ প্রকল্পের সুফল নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদন-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই পারমাণবিক বিদ্যুতের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের প্রথম পারমাণবিক স্থাপনা। আওয়ামী লীগ সরকারের ১০টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে এটি অন্যতম অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অনেক রাষ্ট্র এখনো এই ক্লাবের সদস্য হতে পারেনি। বলিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে সিদ্ধহস্ত শেখ হাসিনা এই স্থাপনার মাধ্যমেই বাংলাদেশকে বিশ্বের ৩৩তম দেশ হিসাবে ‘নিউক্লিয়ার্স ক্লাবের’ সদস্য করেছেন। এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়ার সহযোগিতা নেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এবং ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এই প্রকল্পের কংক্রিটের ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন। ধাপে ধাপে প্রথম ইউনিটের ৯০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। নির্মাণকাজ ইতোমধ্যেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রধান জ্বালানি ‘ইউরেনিয়াম’ বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রূপপুরের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালুর সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ইউনিট চালু হলেই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।

প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, যে কোনো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পূরণের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন দুই ইউনিটবিশিষ্ট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। চালু হলে দেশের বিদ্যুৎ খাত আরো সমৃদ্ধি লাভ করবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্টাক্টর রাশিয়ার রসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা। দুই ইউনিটবিশিষ্ট প্রকল্পটিতে প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়ার্ট। প্রতিটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর, যেগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। জেনারেল ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রসাটম প্রকৌশল শাখা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব বাধ্যবাধকতা বিবেচনায় রেখে এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড শতভাগ অনুসরণ করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিগত ১০০ বছরের বন্যার ইতিহাস বিবেচনায় রেখে রিঅ্যাক্টর স্থাপনের স্থান নির্বাচন করা হয়। প্রকল্পের রিঅ্যাক্টর ৮ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় হবে। রিঅ্যাক্টরে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো ক্রমেই তেজস্ক্রিয়তা বাইরে ছড়িয়ে পড়বে না।

প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত। তবে প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক বছর বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ব্যায়ও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে প্রায় ১৯ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে- যা ৬ কোটি মানুষের বার্ষিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে সক্ষম। উৎপাদন খরচ হবে প্রতি ইউনিট সর্বনিম্ন ৪ দশমিক ৩৮ টাকা। প্রচলিত গ্যাস বা ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ কয়েক গুণ বেশি পড়ে যায়, সেক্ষেত্রে পারমাণবিক বিদ্যুৎ অনেক সাশ্রয়ী। অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের গড় আয়ু যেখানে ১৫ থেকে ২০ বছর সেখানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের আয়ু হবে ৬০ থেকে ১০০ বছর। ইউরেনিয়াম আমদানি, পরিবহন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দিষ্ট গাইড লাইন রয়েছে। এই গাইড লাইন পুরোপুরি অনুসরণ করেই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইএই পুরো বিষয়টি তদারকির মধ্যে রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালের ২১ মে রাশিয়ান ফেডারেশন সরকারের সঙ্গে একটি এমওইউ এবং একটি ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাশিয়ান ফেডারেশনের ১৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ও পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করে। একই বছর ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ও রাশিয়া সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা চুক্তি হয়। ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরকালে ১৫ জানুয়ারি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রাথমিক কার্যাদির জন্য স্টেট এক্সপোর্ট ক্রেডিট সংক্রান্ত একটি এগ্রিমেন্ট এবং প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজে অর্থায়নের জন্য পৃথক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। এই বছর প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ার ঠিকাদার এটমেক্সত্রয়একপোট এর মধ্যে ৪টি চুক্তি হয়। এই বছরের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। এরপর থেকে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সব কাজ। বর্তমানে প্রকল্পের সার্বিক কাজের ৯০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান জানিয়েছেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা এখন চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যেই প্ল্যান্টের মূল জ্বালানি ‘ইউরেনিয়াম’ বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের কাছে ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করেছে রাশিয়া। আইএইএ-এর গাইড লাইন মেনেই সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো কয়েক দফায় এসে নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে গেছে। নির্মাণধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ভবিষ্যতে নিরাপদে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের রাশিয়ায় পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নির্মাণ থেকে শুরু করে অপারেশনে যাওয়ার জন্য যেসব শর্ত পূরণ করতে হয়, আমরা তা অর্জন করেছি। আমরা প্রকৃত জ্বালানি লোড করার জন্য প্রস্তুত। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে আমাদের প্রথম ইউনিট গ্রিডের যুক্ত হবে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করব। বিশ্বের অন্য দেশে এ ধরনের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ১০ থেকে ১২ বছর সময় লেগেছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার জন্য সঞ্চালন লাইনের কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মাদ হোসাইন জানান, প্রথম ইউনিটের ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সঞ্চালন লাইনের কাজ এগিয়ে চলছে। ২০২৪ সালের অগাস্ট মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ