logo
Sunday , 1 October 2023
  1. সকল নিউজ

উদ্বোধনের অপেক্ষায় আধুনিক তৃতীয় টার্মিনাল

প্রতিবেদক
admin
October 1, 2023 9:31 am

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী ৭ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের প্রথম ধাপের উদ্বোধন করবেন। সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক এ মেগা প্রকল্পে যাত্রীদের জন্য থাকছে অত্যাধুনিক সব সুবিধা। ই-গেট, হাতের স্পর্শ ছাড়া চেকিং, নিজেই নিজের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যাবে এ টার্মিনালে। সুপরিসর অ্যাপ্রোন, বিশাল গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত লাগেজ বেল্ট যাত্রীদের দেবে নতুন অভিজ্ঞতা।

শাহজালাল বিমানবন্দরের এই টার্মিনাল এখন উদ্বোধন হলেও ২০২৪ সালের শেষ দিকে এটি ব্যবহার করতে পারবেন যাত্রীরা। এক বছর টার্মিনালে ফ্লাইট পরিচালনায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চুক্তি, যন্ত্রপাতি স্থাপন, জনবল নিয়োগসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তারপর বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আধুনিক সব সেবা নিতে পারবেন যাত্রীরা।

বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের আয়তন দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। বছরে এক কোটি ২০ লাখ যাত্রী এই টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবে। টানেলসহ বহুতলবিশিষ্ট কার পার্কিং ৫৪ হাজার বর্গমিটার। ফায়ার ফাইটিং স্টেশন ইক্যুইপমেন্টসহ চার হাজার বর্গমিটার। আমদানি কার্গো টার্মিনাল ২৭ হাজার বর্গমিটার, রফতানি কার্গো টার্মিনাল ৩৬ হাজার বর্গমিটার এবং কানেকটিং ট্যাক্সিওয়ে ৬৬ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। দুটি র‌্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে ৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার। তৃতীয় টার্মিনালের নিচতলায় থাকবে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম। দ্বিতীয় তলায় ক্যানটিন ও বোর্ডিং ব্রিজ। থাকবে সুপরিসর ডিউটি ফ্রি শপ এবং বহির্গমন লাউঞ্জ। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের জন্য কাস্টমসের একটি হল ও ছয়টি চ্যানেল থাকবে। ভিআইপি যাত্রীদের জন্য রাখা হচ্ছে বিশেষ ব্যবস্থা। তৃতীয় টার্মিনালের দক্ষিণ প্রান্তে তিন হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জায়গাজুড়ে ভিভিআইপি ও ভিআইপি যাত্রীদের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য বিশাল লাউঞ্জ করা হচ্ছে নতুন টার্মিনালে। ৪০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের প্রধান বহির্গমন লাউঞ্জ ব্যবহার করবেন ট্রানজিট যাত্রীরা। তবে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালের সংযোগ থাকবে না এখন। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে করিডোর নির্মাণ হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে বহুতল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে এক হাজার ৩৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।

নতুন টার্মিনাল ভবনের বহির্গমন পথে ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল বা ই-গেট থাকবে। যেখানে যাত্রীরা নিজেরাই ইমিগ্রেশন করতে পারবেন। তাদের আর ইমিগ্রেশন পুলিশের মুখোমুখি হতে হবে না। তবে নিজেরা করতে না চাইলে তাকে সহযোগিতা করতে ৫৬টি বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টারও প্রস্তুত থাকবে। সেখানে ইমিগ্রেশন করবে ইমিগ্রেশন পুলিশ। এছাড়া যেসব যাত্রী অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে ঢুকবেন তাদের জন্য পাঁচটি ই-গেট থাকবে। পাশাপাশি থাকবে ৫৪টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন কাউন্টার।
তৃতীয় টার্মিনালে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির চলন্ত ওয়াকওয়ে বা মুভিং ওয়াক। চলন্ত সিঁড়ি বা এসকেলেটর ব্যবহারে আমরা অভ্যস্ত হলেও মুভিং ওয়াক দেশে নতুন। টার্মিনালের আগমনী ও বহির্গমনে ১৪টি মুভিং ওয়াক বসানো হয়েছে। এর ওপর যাত্রীরা না হেঁটে দাঁড়িয়ে থাকলেই পৌঁছে যাবেন গন্তব্যে। এটা ব্যবহার করে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবেন যাত্রীরা। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় ফ্লোরে ওঠা-নামায় পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বয়ংক্রিয় এসকেলেটর ও লিফট স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলো ব্যবহার করে এক তলা থেকে আরেক তলায় যেতে পারবেন যাত্রী ও বিমানবন্দরে কর্মরতরা।

এভিয়েশন খাতে অপার সম্ভাবনা নিয়ে তৈরি হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। এ টার্মিনালের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আরেক র‌্যাম্প নেমেছে বলাকা ভবনের পাশে। এই র‌্যাম্প ব্যবহার করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিমানবন্দরের প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে যাওয়া যাচ্ছে। আবার এই দুই টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে কাওলা এলাকা থেকে আরেক র‌্যাম্পের মাধ্যমে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠতে পারছেন যাত্রীরা। মেট্রোরেল এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটসহ (বিআরটি) যোগাযোগের সব মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এই টার্মিনাল। ফলে কোনো ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহজেই বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া করতে পারবেন যাত্রীরা। বিমানবন্দরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হতে হবে বহুমুখী। ফলে যোগাযোগের বিভিন্ন প্রকল্পের সঙ্গে আন্তঃসংযোগ করা গেলেই থার্ড টার্মিনালের প্রকৃত সুফল মিলবে। সড়ক থেকে বিমানবন্দরে বা বিমানবন্দর থেকে সড়কে ঢোকার মুখে পড়তে হবে না যানজটে। যথাসময়ে ফ্লাইট ধরতে পারবেন যাত্রীরা। এছাড়া যারা বিদেশ থেকে ভারী লাগেজ নিয়ে ফেরেন, তাদেরও কমবে বিড়ম্বনা।
যাত্রীদের আর তল্লাশি করা হবে না। নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক স্ক্যানিং ব্যবস্থা থাকবে। উড়োজাহাজে ওঠা পর্যন্ত হাতের স্পর্শ ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তল্লাশি চলবে। তবে সহযোগিতার অংশ হিসেবে যাত্রীকে বডি স্ক্যানার মেশিনের ভেতর দু’হাত তুলে দাঁড়াতে হবে। ফলে সবার সময় বাঁচবে। যাত্রী ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সময় বাঁচবে। ঘোরাফেরা ও কেনাকাটার জন্য তৈরি হচ্ছে ১৪টি স্পটে ডিউটি ফ্রি শপ। যাত্রীরা টার্মিনালের বাইরে ও ভেতরে ওয়াই-ফাই এবং মোবাইল চার্জিংয়ের সুবিধা পাবেন। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থাও থাকছে। যাত্রীদের নিতে আসা দর্শনার্থীদের জন্য মিটার্স অ্যান্ড গ্রিটার্স প্লাজা থাকবে নতুন টার্মিনালে। শিশুদের দুগ্ধপানের জন্য মায়েদের সুবিধায় এ লাউঞ্জের ভেতর ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, ডায়াপার পরিবর্তনের জায়গা এবং একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকবে। বাচ্চাদের সিøপার-দোলনাসহ একটি চিলড্রেন প্লে এরিয়াও থাকবে। নতুন টার্মিনালে যাত্রীরা পাবেন ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ঢাকা লিমিটেড এক্সপ্রেসওয়েকে থার্ড টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত করতে যথেষ্ট কাজ করা হয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিআরটি ও মেট্রোরেলও যুক্ত হওয়ার কথা। আশা করি এর মাধ্যমে কমবে যাত্রী বিড়ম্বনা। কমবে ফ্লাইট মিস করার ঘটনাও। তবে ঠিক কতটা সুফল মিলবে, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হলে বোঝা যাবে। কারণ, বিদেশগামী যাত্রীদের বেশিরভাগই প্রবাসী শ্রমিক। তারা এসব সুবিধা কতটা ব্যবহার করতে পারেন- সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের প্রকৌশলী মো. নিজাম-আল হাসিব বলেন, কয়েক দশক ধরে উন্নত দেশের বিমানবন্দরের ভেতর চলন্ত ওয়াকওয়ে যাত্রীদের গতিশীলতা ত্বরান্বিত করছে। তাই বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে এই সেবা যুক্ত করা হয়েছে, যা বিমানবন্দরের সৌন্দর্য আরও কয়েকগুণ বাড়িয়েছে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ ৮৭ শতাংশ শেষ। দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল, দৃষ্টিনন্দন সিলিং, কার পার্কিং, বোর্ডিং ব্রিজসহ অন্য স্থাপন। এর মধ্যে নেওয়া হচ্ছে উদ্বোধনের প্রস্তুতি। উদ্বোধনী উপলক্ষে চলছে টার্মিনালের ভেতরে প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার ফ্লাইওভার এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।
২০১৭ সালে শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পটি হাতে নেয় সরকার। তবে নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ করেছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
এখন শাহজালাল বিমানবন্দরের টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ এর অ্যাপ্রোনে ২৯টি উড়োজাহাজ রাখা যায়। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে এর অ্যাপ্রোনে আরও ৮-১০টি উড়োজাহাজ রাখা যাবে। একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে অক্টোবরে চালু হবে ১২টি। বহির্গমনের জন্য মোট চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ) ১১৫টি। এছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। বর্তমান টার্মিনালে রয়েছে আটটি লাগেজ বেল্ট। তৃতীয় টার্মিনালে আগমনী যাত্রীদের জন্য ১৬টি লাগেজ বেল্ট থাকবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি আলাদা বেল্ট। এক হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরির কাজ চলমান।

সর্বশেষ - সকল নিউজ