logo
Tuesday , 26 September 2023
  1. সকল নিউজ

এবার আরেক রানওয়ে

প্রতিবেদক
admin
September 26, 2023 9:20 am

বহুল প্রতীক্ষিত থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার আগেই নির্মাণ কাজ শুরু হবে দ্বিতীয় রানওয়ের। এ নিয়ে চলছে বেশ তোড়জোড়। যে কোনো মূল্যে আগামী জুনের আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান বলেছেন, দ্বিতীয় রানওয়ে করতেই হবে এবং সেটা থার্ড টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার আগেই শুরু করতে হবে। থার্ড টার্মিনাল চালু হলে দেশের এভিয়েশন খাতে নবজাগরণ দেখা দেবে। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে অবশ্যই দরকার হবে আরেকটি রানওয়ের। এ বাস্তবতার তাগিদেই চলছে প্রস্তুতি।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল হক বলেছেন, কোনো সন্দেহ নেই থার্ড টার্মিনাল চালুর পর দেশী-বিদেশী এয়ারের উড়োজাহাজ চলাচল বাড়বে। বাড়তি চাপ সামাল দিতে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। তবে জায়গা না থাকায় রানওয়ে দুটি একে অপরের খুব কাছাকাছি হবে। দুটি ফ্লাইট একইসঙ্গে অবতরণ ও উড্ডয়ন করতে পারবে না। উড্ডয়নের সময় উড়োজাহাজগুলোকে ৩০-৪০ মিনিটের মতো ট্যাক্সিওয়েতে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করতে হয়। এয়ার ট্রাফিকের কারণে কখনো কখনো অবতরণেও দেরি হয়। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে ফ্লাইটের সময়সূচি ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যায়। অপারেশনাল খরচও বেড়ে যায়। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে, ফ্লাইট চলাচল বাড়বে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। এ জন্য নির্ধারিত দূরত্ব মেনে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রানওয়ে তৈরি করা প্রয়োজন। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা এয়ার ট্র্যাফিক এবং যাত্রী সংখ্যা সবচেয়ে ভালোভাবে সামলানো যাবে যদি উভয় রানওয়ে একইসঙ্গে ব্যবহার করা যায়।

এ সংক্রান্ত অগ্রগতি সম্পর্কে সর্বশেষ জানা গেছে, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দ্বিতীয় রানওয়ে নিয়ে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করেছে। গত জুলাই মাসে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ে এর ফল উপস্থাপন করেছে। আগামী বছরের মে মাসে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হলে দ্বিতীয় রানওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে কত টাকা এ প্রকল্পে ব্যয় হবে কত সময় লাগবে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিচকের কেউ মুখ খোলেনি। জানতে চাইলে বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, সমীক্ষা প্রতিবেদনের পর এখন ডিজাইন তৈরি ও আনুমানিক ব্যয় ঠিক করার জন্য বুয়েটকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে আগামী চারমাসের মধ্যে বুয়েট এ প্রকল্পের সার্বিক ড্রয়িং ডিজাইন ও আনুমানিক ব্যয়ের ধারণাপত্র দেবে। সেটা পাওয়ার পর ডিপিপি তৈরি সরকারের সিদ্ধান্তের জন্য পাঠানো। তারপর সিদ্ধান্ত হবে এর অর্থায়ন কিভাবে করা হবে। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর দরপত্র ডাকা হবে। তারপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে কমপক্ষে ৮/৯ মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ আগামী জুনের টার্গেট নিয়েই সব কাজ এগুচ্ছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আরেকটি রানওয়ে তৈরি করতে সময় লাগবে কমপক্ষে ৩০ মাস। ব্যয় হতে পারে কমপক্ষে ১০ হাজার কোটি টাকা। নতুন রানওয়ের দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ মিটার। যা বর্তমান রানওয়ের চেয়ে দৈর্ঘ্যে ৪০০ মিটার কম।

জানা গেছে, দ্বিতীয় রানওয়েটি হবে ডিপেন্ডেড। অর্থাৎ দুটো রানওয়ে থাকলেও এগুলোতে এক সঙ্গে দুটো উড়োজাহাজ পাশাপাশি ওঠানামা করতে পারবে না। বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একমাত্র রানওয়ের পশ্চিম পাশেই নির্মিত হবে দ্বিতীয়টি। দুটো রানওয়ের মাঝখানে যে পরিমাণ জায়গা থাকা দরকার সেটা নেই বলেই পূর্ণ নির্ভরযোগ্য রানওয়ে তৈরি করা যাচ্ছে না। সেজন্য দ্বিতীয় রানওয়েটি হবে ডিপেন্ডেড। অর্থাৎ একটা আরেকটার প্যারালাল হিসেবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে বেবিচক জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (আইকাও) নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করে দুটি বিমান একই সময়ে উড্ডয়ন বা অবতরণের জন্য দুটি রানওয়ের মধ্যে কমপক্ষে দূরত্ব থাকতে হয় এক হাজার ৩৫ মিটার। কিন্তু শাহজালালে আছে ৩৫৯ মিটার। দুটি রানওয়ের মাঝে নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব না থাকায় ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করতে পারবে না সিভিল এভিয়েশন। তবে দুটি বিমান অপারেশন করতে না পারলেও ফ্লাইট সিডিউলে ২৪ ঘণ্টাই কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এখানে যে জায়গা রয়েছে সেখানেই রানওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ এ বিমানবন্দরের মাত্র ৬০ শতাংশ ব্যবহার করা হচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টার প্রতিটি মিনিটকে ব্যবহার করার দরকার ছিল। কিছু নির্দিষ্ট ফ্লাইটকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বিমানবন্দরে চাপ বেশি পড়ছে। এখানে যদি আরেকটি রানওয়ে হয় তাহলে চাপ অনেকটা কমবে।

কেন একইসঙ্গে ব্যবহারযোগ্য রানওয়ে তৈরির কথা বিবেচনা করা হচ্ছে না জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুল রহমান বলেন, এটা সবারই প্রশ্ন হতে পারে। কিন্তু এটির জন্য বিমানবন্দরে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অথরিটির নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী, ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস) ব্যবহার করে প্লেন উড্ডয়ন বা অবতরণ করার জন্য দুটি রানওয়ের মাঝে কমপক্ষে এক হাজার ৩৫ মিটার দূরত্ব থাকা উচিত। পরিকল্পিত নতুন রানওয়ের সুবিধা হলো যখন একটি উড়োজাহাজ অবতরণ করবে, তখন অন্যটি দেরি না করে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। এ ছাড়া জরুরি কারণে একটি রানওয়ে বন্ধ থাকলে, অন্যটি ব্যবহার করা যাবে।

তিনি দুবাই বিমানবন্দরের উদাহরণ টেনে বলেন, সেখানে যখন কাজ শুরু করে, তারা একটি রানওয়ে দিয়ে বছরে ৫০ মিলিয়ন যাত্রী ওঠানামা করিয়েছে। এটি দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে সম্ভব হয়েছিল। আমরা বছরে কেবল আট মিলিয়ন যাত্রী সামাল দেই। যদি আমরা অবকাঠামো এবং ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে বর্তমান যে রানওয়ে আছে সেটির মাধ্যমেই আমরা আরও অনেক যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারব। ‘আমরা দুটি হাইস্পিড ট্যাক্সিওয়ে তৈরি করেছি। আমরা একটি অত্যন্ত অত্যাধুনিক এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম স্থাপন করছি যাতে উড়োজাহাজ অবতরণের পর খুব দ্রুত এপ্রোনের দিকে যেতে পারে এবং পরবর্তী উড়োজাহাজকে রানওয়ে ব্যবহারের জন্য কম সময় অপেক্ষা করতে হয়। বোর্ডিং ব্রিজের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বলেন, এখানে অনেকগুলো টেকনিক্যাল বিষয় আছে। আইএলএস ব্যবহারের মাধ্যমে ফ্লাইটগুলো রানওয়েতে অবতরণ করতে পারে। মাঝে দূরত্ব কম হলে দুই রানওয়েতে একইসঙ্গে আইএলএস ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে ‘ভিজুয়াল অ্যাপ্রোচ’ করা যেতে পারে।

বেবিচক জানিয়েছে, থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ হলে বছরে ২০ মিলিয়ন যাত্রীর সেবা দেওয়া যাবে। বর্তমানে ৩৩টি এয়াারলাইন্স প্রতিদিন বিমানবন্দর থেকে ১৫০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে বিমানবন্দরে দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ রানওয়ের জন্য জায়গা রাখা উচিত ছিল এবং জায়গা না ছেড়ে কাছাকাছি রানওয়ে নির্মাণ বড় ভুল বলে মনে করেন কাজী ওয়াহিদুল হক। তিনি বলেন, বছরে প্রায় দুই কোটির বেশি যাত্রী সেবার লক্ষ্য নিয়ে উন্নয়ন কাজ চলছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। উন্নয়ন কাজ শেষ হলে ১৫০টি ফ্লাইটের পরিবর্তে দ্বিগুণ ফ্লাইট পরিচালনা সম্ভব হবে। আগের দুই টার্মিনালের চেয়ে চারগুণ বড় হচ্ছে থার্ড টার্মিনাল।

এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে বছরে দুই কোটি যাত্রী শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। আর এ জন্য বাড়বে ফ্লাইটের সংখ্যাও। তবে বিদ্যমান একটি রানওয়ে দিয়ে বাড়তি ফ্লাইটের চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হবে। এ জন্য আরও একটি রানওয়ে নির্মাণ হবে। এরই মধ্যে সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হলে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যমান একটি রানওয়ে ব্যবহার করে প্রতিদিন গড়ে ১৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে। ফলে প্রায় পিক আওয়ারে একই সময়ে একাধিক ফ্লাইট থাকলে টেক অফের জন্য উড়োজাহাজগুলোকে সিরিয়াল ধরে অপেক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে ল্যান্ডিংয়ের অনুমতি না পেলে আকাশে গো অ্যারাউন্ড করতে হয়। এতে এয়ারলাইনসগুলোর জ্বালানি খরচ যেমন বাড়ে, তেমনি ফ্লাইট সিডিউল ঠিক রাখতেও বেগ পেতে হয়। এ নিয়ে সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ফ্লাইটের চাপ বাড়ায় অনেক সময় একটি ফ্লাইট টেক অফ করতে গিয়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ট্যাক্সিতে অপেক্ষা করতে হয়। অবতরণের সময়ও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এতে এয়ারলাইনসগুলোর জ্বালানি খরচ বাড়ে। দ্বিতীয় রানওয়ে হলে এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত