logo
Wednesday , 16 August 2023
  1. সকল নিউজ

বিএনপি আমলের হত্যাকাণ্ড, দুর্নীতির কথা স্বীকার করলেন খালেদার মুখ্য সচিব

প্রতিবেদক
admin
August 16, 2023 9:39 am

বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের বলি হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ অনেক নেতা-কর্মী। বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ বহু নেতাকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা, যাতে প্রত্যক্ষ মদদ ছিল খোদ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তার পুত্র তারেক রহমান, তার আজ্ঞাবহ সরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকতারা এবং বাস্তবায়ন করে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী বাহিনী।

ভয়ঙ্কর সব হত্যাকাণ্ড, হত্যাপ্রচেষ্টা ও হামলার ঘটনাগুলোর কোনোটারই বিচার হয়নি, মামলা পর্যন্ত নেয়া হতো না। হাওয়া ভবন ও খোয়াব ভবনে বসে হতো এসব পরিকল্পনা। যার পুরোটাই জানতেন খালেদা জিয়া। তার ব্যক্তিগত কমকর্তাদের কেউ কেউ এসব বিষয়ে খালেদা জিয়াকে আগাম সতর্ক করার চেষ্টা করেও সফল হননি, উল্টো ঝাড়ি খেয়েছেন, অপদস্থ হয়েছেন। তাদেরই একজন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী। তারেক রহমানের যেসব অপকর্মের কারণে সরকার বিব্রত হতে পারে, এমন কিছু ঘটনায় তিনি খালেদা জিয়াকে বাধা দেয়ার অনুরোধ করে উল্টো অপমানিত হন অধস্তন কর্মচারীদের সামনে, যা ছিল ওপেন সিক্রেট।

শুধুমাত্র হত্যা-পরিকল্পনা নয়, তারেক রহমানের লাগামহীন দুর্নীতির বিষয়েও জানতেন কামালউদ্দিন সিদ্দিকী। টাটার বিনিয়োগের ওপর ঘুষ দাবি, খাম্বা কেলেঙ্কারি, এফডিসি থেকে শ্যুটিং চলাকালে নায়িকাদের তুলে খোয়াব ভবনে নিয়ে যাওয়া, ওয়ারিদ টেলিকম, সিমেন্স, নাইকোসহ বহু বিদেশি কোম্পানির সাথে দুর্নীতির ভাগ-বাটোয়ারার ঘটনাগুলোর অন্যতম সাক্ষী এই সিদ্দিকী। তার সাহস ছিল না সরাসরি তারেককে বাধা দেয়ার। জানতেন, তারেকের বিরাগভাজন হলে প্রাণে বেঁচে থাকাই মুশকিল হবে। কোনো ঘটনা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যেতে পারে কিংবা আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে মনে হলে, সেসব ঘটনা স্তিমিত করতে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মাধ্যমে ঠেকানোর অনুরোধ করতেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হতেন।

পুত্রস্নেহে অন্ধ খালেদা জিয়া গৃহভৃত্যের মত এই আমলা-সচিবদের শাসন করতেন, গালাগাল করতেন। শেষদিকে সরকারি কর্মকর্তারা মান-সম্মানের ভয়ে এসব নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করে দিয়ে বরং দুর্নীতির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতেন। শুরুতে নীতিবান আচরণ করলেও শেষদিকে এসে কামালউদ্দিন সিদ্দিকীও বেশ বড়সড় দাঁও মেরে দেশের বাইরে সাম্রাজ্য গড়েছেন। তবে তার আগে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে. টমাসের কাছে বিএনপি সরকারের নানান অপকর্মের গোমর ফাঁস করেছেন। সেসব উঠে এসেছে উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া নথিতে।

তারবার্তা নং- ০৫, ঢাকা-১১৩৫, তারিখ- ১৪ই মার্চ, ২০০৫; সময়- ১০:০৫ পূর্বাহ্ন। শ্রেণি- সিক্রেট
বিষয়: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের অকপট আলাপ

১. (সি) সারসংক্ষেপ: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে. টমাসকে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা শাহ এ এম এস কিবরিয়ার হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে অব্যাহত চাপ প্রয়োগ করা জরুরি। তিনি পুত্র তারেক রহমানের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতাকে তার বৃহত্তম রাজনৈতিক ব্যর্থতা বলে বর্ণনা করেন এবং এমন ইঙ্গিত দেন যে বিমান এয়ারলাইনস বোয়িং কিনবে নাকি এয়ারবাস কিনবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী মীর নাছির উদ্দিন ঘুষ চান। সারসংক্ষেপ শেষ।

২. (এসবিইউ) ১৩ই মার্চ রাষ্ট্রদূত টমাস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে ৪০ মিনিটব্যাপী এক বৈঠকে মিলিত হন। রাজনৈতিক/অর্থনৈতিক কাউন্সেলর (নোট গ্রহণকারী) রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছিলেন।

শাহ এ এম এস কিবরিয়া মামলা :-

৩. (এস) ২৭শে জানুয়ারি সংঘটিত সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত শাহ কিবরিয়ার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা এবং উগ্রপন্থী অধ্যাপক আসাদুল্লাহ গালিব ও বাংলা ভাইয়ের জেএমজেবির সদস্যদের ব্যাপারে তদন্ত অব্যাহত রাখার ঘটনাকে রাষ্ট্রদূত স্বাগত জানান।

সিদ্দিকী মন্তব্য করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাপ, একই সময়ে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের বৈঠক- এসব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অবশেষে বুঝতে পেরেছেন যে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির স্বার্থে রাজশাহী অঞ্চলের এক সাংসদের ওপর থেকে সুরক্ষা তুলে নেয়া এবং জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি)-এর ‘দুর্বৃত্তদের’ গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘এটাই হচ্ছে বিএনপি সরকারের সমস্যা, চাপে পড়লেই কেবল এ সরকার কাজ করে, তাই কোনো কাজ কয়েক মাস আগে করলে যে প্রশংসা পাওয়ার কথা, তা সে পায় না কয়েক মাস পরে কাজটা করার ফলে।’ তিনি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করেন যে খোদ বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তার করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘এসব লোক কোথায় আছে, তা সরকার জানে।’

৪. (এস) কিবরিয়া হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর গুরুত্ব রাষ্ট্রদূত পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সংবাদমাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে উল্লেখ করেন যে অপরাধটির দায়ে অভিযুক্ত বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অন্দরমহলের একজন সরাসরি সম্পৃক্ত। সিদ্দিকী রাষ্ট্রদূতকে বলেন, তিনি যদি তাকে সেই ব্যক্তির নাম বলতে বলেন, যাকে সবাই জানে বলে তিনি উল্লেখ করেন, তাহলে তিনি বলবেন যে তিনি সিলেটের লোক এবং একটা ‘সমস্যা’। (টীকা: কামাল সিদ্দিকী সেই ব্যক্তির নাম বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর কথা। টীকা শেষ)।

আহমদিয়া সম্প্রদায় :-

৫. (সি) রাষ্ট্রদূত বলেন, আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপর উগ্রপন্থীদের অব্যাহত চাপ অত্যন্ত হয়রানিমূলক। সপ্তাহান্তে বগুড়ায় আহমদিয়াদের একটি স্থাপনায় জবরদখল প্রতিহত করতে পুলিশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত; কিন্তু বলেন, এটা দুঃখজনক যে পুলিশ সেখানে এই সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে যে এটা মসজিদ নয় (পৃথক তারবার্তা দ্রষ্টব্য)। সিদ্দিকী আভাস দেন যে তিনি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ বিষয়ে একমত, তবে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতে ইসলামী যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তিনি তা কখনো ভুলতে পারবেন না; কিন্তু ইসলামী ঐক্যজোটের কর্মীরা জামায়াতের কর্মীদের চেয়ে ‘বেশি বিপজ্জনক’। তিনি মাদ্রাসাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) ও পশ্চিমা দাতাদের সাহায্য বাড়াতে বলেন।

তারেক রহমান :-

৬. (এস) রাষ্ট্রদূত সিদ্দিকীকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পুত্র তারেক রহমান তার ব্যক্তিগত আস্থাভাজন ব্যক্তিদের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়ািশংটনে বৈঠকে বসার যে অনুরোধ জানিয়েছেন, প্রটোকল ও অন্যান্য কারণে সে অনুরোধ রক্ষা করা সম্ভব নয়। সিদ্দিকী সম্পূর্ণভাবে একমত প্রকাশ করে বলেন, ‘নবীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি ভালো নয়।’ ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ পুত্রের প্রতি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আশকারা ও তাকে সুরক্ষা দেয়াকে তার সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা বলে বর্ণনা করেন সিদ্দিকী।

বাণিজ্যিক তদবির :-

৭. (সি) আগামী সপ্তাহে বোয়িংয়ের কর্মকর্তাদের ঢাকায় নির্ধারিত সফরকালে সিদ্দিকী তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, বিমানের বোয়িং কেনার বিষয়ে তাকে বোঝানোর কিছু নেই। তিনি বলেন, তিনি বিমানের বোয়িং এয়ারক্র্যাফট কেনার পক্ষে এবং আগামীকালের মন্ত্রীসভার বৈঠকের পর এ বিষয়ে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রীর কাছে বোয়িং কেনার রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধার বিষয়গুলো জোরালোভাবে তুলে ধরবেন। সিদ্দিকী ইঙ্গিত করেন যে বিমানের বোয়িং কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হওয়ার একটা কারণ বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী মীর নাছির উদ্দিনের ঘুষের আকাঙ্ক্ষা।

৮. (সি) মেঘনাঘাটে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান সিএমজির দেয়া প্রস্তাবের বিষয়টিও রাষ্ট্রদূত উত্থাপন করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের চলমান তীব্র বিদ্যুৎ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের একটা বড় লাভ হবে এজন্য যে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে ২০০৬ সালের জুনের মধ্যে। সিদ্দিকী নিশ্চিত করেন যে প্রস্তাবটি বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে এবং একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত যাতে নেয়া হয়, সে লক্ষ্যে তিনি উৎসাহ যোগাবেন।

দ্বিপক্ষীয় অবস্থা :-

৯. (সি) রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০০৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে অমসৃণতা ছিল, এখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের একটা নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে, যদি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সুরাহা করা হয়, যদি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের নিরাপত্তার বিধান অব্যাহত রাখা হয়, যদি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সহিংসতা এড়ানো হয় এবং যদি বাংলাদেশ তার এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করে যে সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী জাতিসংঘের কনভেনশন শিগগিরই অনুসমর্থন দেবে। পাঁচটি বিষয়ের পুনরাবৃত্তি করে সিদ্দিকী কথা দেন যে তিনি এসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।

মন্তব্য :-

৮. (সি) কামালউদ্দিন সিদ্দিকী প্রায়ই নিজেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও স্বার্থের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে উপস্থাপন করেন; এমনকি এমন কথাও তিনি গত বছর বলেছিলেন যে ইরাকে বাংলাদেশি সেনা পাঠানোর প্রতি তার সমর্থন আছে। মানব পাচার বন্ধ করার মতো ইস্যুগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাপ প্রয়োগকে স্বাগত জানিয়ে সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের ঢিমেতেতালা সরকারের কাজে গতি সঞ্চারের জন্য এ ধরনের চাপ প্রয়োগ করা জরুরি। কিন্তু তিনি খালেদা জিয়ার প্রতি ভীষণ অনুগত এবং সবসময় তাকে সমর্থন করেন, কখনো কখনো দুর্বল যুক্তিতেও। এই পরিপ্রেক্ষিতে তারেক রহমানের ব্যাপারে তার নিন্দা-সমালোচনা এবং খালেদা জিয়ার আরেক অনুগত আস্থাভাজন হারিছ চৌধুরী যে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত- সিদ্দিকীর এমন ইঙ্গিত থেকে সিদ্দিকীর ব্যতিক্রমী সরলতা বা অকপটতার প্রকাশ ঘটে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত