logo
Wednesday , 9 August 2023
  1. সকল নিউজ

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মার্কিন কোম্পানি

প্রতিবেদক
admin
August 9, 2023 9:16 am

দেশের সমুদ্রভাগে দীর্ঘদিন পর গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে গতি ফিরতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) চূড়ান্তের কাজ এগিয়ে চলছে। সরকার পিএসসি অনুমোদন করেছে। এতে বিদেশি কোম্পানি প্রাপ্ত তেল-গ্যাসের ৫০ শতাংশ পাবে। আর বাংলাদেশ না কিনলে থাকছে রপ্তানির বিধানও। জলভাগে একটি জরিপের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠেছে সুপরিচিত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি। এ তালিকায় এগিয়ে আছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল। কোম্পানিটি এরই মধ্যে এ কাজে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বা ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘পিএসসি সংশোধন করা হয়েছে। এটি মন্ত্রিসভায় পাস হলেই আমরা এক্সন মবিলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করব। পিএসসি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে যাব না। এক্সন মবিলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে এখন আমাদের দুটি জিনিস করতে হবে। একটি পিএসসি চূড়ান্ত করা, অন্যটি কমিটি গঠন করা। কমিটির প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করা হবে। এরপর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে এবার মার্কিন এই কোম্পানিটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি করেছি, এর আওতায় এক্সন মবিল আসতে চাইছে। আশা করছি সাত-আট বছরের মধ্যে সাগর থেকে গ্যাস পাওয়া যাবে।’

জানা যায়, সরকারের জ্বালানি বিভাগও আসছে জাতীয় নির্বাচনের আগে এক্সন মবিলের সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টি চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। সরকার এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানির প্রস্তাবটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। এক্সন মবিলের প্রস্তাব খতিয়ে দেখতে এবং তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কমিটিতে আন্তর্জাতিক মানের আইনজীবী ও মধ্যস্থতাকারী, প্রযুক্তি বিষয়ে পরামর্শদাতার মতো বিশেষজ্ঞরা থাকবেন বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়ে দুই দফায় প্রস্তাব পাঠিয়েছে এক্সন মবিল। প্রথম দফায় চলতি বছর মার্চে পেট্রোবাংলার কাছে প্রস্তাব পাঠায় কোম্পানিটি। সরকারের উচ্চপর্যায়ে এটি নিয়ে আলোচনা হয় এবং এ নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার জন্য নীতিগত সম্মতি পাওয়া যায়। জুলাই মাসে এক্সন মবিল জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে আরেকটি প্রস্তাব পাঠায়। জানা যায়, প্রথম প্রস্তাবে এক্সন মবিল গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোতে অনুসন্ধান চালানোর আগ্রহের কথা জানিয়েছিল। পরে সেখান থেকে তারা সরে আসে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে তারা গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলোর বাইরেও কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। এক্সন মবিল কর্তৃপক্ষ জানায় যে যদি এই অনুসন্ধান সফল হয় তাহলে বছরে বাংলাদেশের তিন বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে, যা বর্তমানে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন-পেট্রোবাংলাকে দেওয়া এক্সন মবিলের প্রস্তাবে বলা হয়, সরকারের অনুমোদন পেলে শুরুতে সংশ্লিষ্ট ব্লকগুলোতে টুডি সিসমিক সার্ভে চালানো হবে। এতে দুই বছর সময় লাগবে। এরপর থ্রিডি সিসমিক তথ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের কাজটি শেষ করা হবে পরবর্তী তিন বছরে। এ জন্য সরকারের সঙ্গে একটি পিএসসি সইয়ের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরুল আলম বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির কোম্পানি এক্সন মবিল সাহস করে যে বাংলাদেশের সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানে আগ্রহ দেখিয়েছে, এ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। আমাদের গভীর সমুদ্রে জ্বালানি বিষয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে এর ওপর ভিত্তি করেই তারা বঙ্গোপসাগরকে খুব সম্ভাবনাময় এলাকা হিসেবে দেখছে। আমাদের সাগরের পাশেই মিয়ানমারের সাগরে অনেক গ্যাস পাওয়া গেছে। তা থেকে অনুমান করা হচ্ছে আমাদের এখানেও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ভূরাজনৈতিক কারণেও যুক্তরাষ্ট্র এ এলাকায় এখন নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে চীন সব দখল করে নিচ্ছে। এর বাইরে আমাদের সাগরে গত এক দশকে একেবারেই গ্যাস অনুসন্ধান হয়নি। এ সময় যদি এক্সন মবিলকে ভালো চুক্তিতে নিয়োগ করা যায়, যাতে দেশীয় স্বার্থ বজায় থাকবে, তাহলে তা খুবই ইতিবাচক হবে।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ