logo
Sunday , 25 June 2023
  1. সকল নিউজ

বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে দেশ ধ্বংস করবে : শেখ হাসিনা

প্রতিবেদক
admin
June 25, 2023 9:22 am

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াত দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে নেমেছে। আবারও ক্ষমতায় গেলে তারা দেশকে ধ্বংস করবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, বাংলাদেশ নিয়ে নানা চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র আছে। কিন্তু এ দেশকে নিয়ে যেন আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। দিবসটি উপলক্ষে এদিন সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।

আলোচনা সভায় ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ওপর প্রচণ্ড চাপ ছিল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি বলেছিলাম, এই গ্যাস জনগণের। বাংলাদেশের সম্পদ ক্ষমতার লোভে বিক্রি করে ক্ষমতায় থাকব, সেই বাপের মেয়ে আমি নই। আমরা চাইনি, কিন্তু গ্যাস দেবেন বলে মুচলেকা দিলেন খালেদা জিয়া। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন– সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও বাংলাভাই সৃষ্টি এবং দুর্নীতি-সন্ত্রাস করে ওই সন্ত্রাসের দল বিএনপি ভেবেছিল ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করবে। জনগণের সম্পদ বেঁচে আর তাদের অর্থসম্পদ কেড়ে নিয়ে লুটপাট করবে। বাংলার মানুষকে তারা চেনেনি। লুটের টাকার জোরে ক্ষমতায় থাকা এদেশের মানুষ মেনে নেয়নি। ১৯৯৬ সালে ভোটচুরির কারণে জনগণ খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছে। ২০০৭ সালেও পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি ভোটচুরির ষড়যন্ত্র করছিল। এজন্য জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের জন্য আওয়ামী লীগ একটা বিরাট পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। নৌকা মার্কায় জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই আজকে এই পরিবর্তন এসেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ লাভবান হয়, তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়– সেটি প্রমাণিত সত্য।

করোনা সংকট শেষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মন্দা তুলে ধরে তিনি বলেন, জানি একটু দুঃসময় যাচ্ছে। মানুষের কষ্ট লাঘবে প্রাণপণ চেষ্টা করছি। বিত্তশালীদের প্রতিবেশী দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

তাঁর সরকারের পদক্ষেপের ফলে মানুষের জীবনমানের উন্নতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় মানুষ নুন-ভাত, পরে ডাল-ভাতের কথা বলত। আমরা মানুষকে এমন পর্যায়ে আনতে পেরেছি, এখন মাংস না পাওয়ার কথাই আসছে। চাহিদাটা বাড়াতে পেরেছি। চাহিদা যখন বাড়াতে পারছি সেটি পূর্ণ করতেও পারব।

লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে মাঝে দেশের কয়লাভিত্তিক কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল। কিছু লোডশেডিং করতে হয়। আবার কয়লা আসা শুরু করেছে, লোডশেডিং থাকবে না। তবে মাঝে মধ্যে লোডশেডিং দিয়ে একটু মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, তারা কী অবস্থায় ছিল আর এখন কোথায় আছে।

বক্তব্যের শুরুতে দল ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুচ্ছো জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। সেইসঙ্গে বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আওয়ামী লীগের গোরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। বলেন, পলাশীর আম্রকাননে যেই স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, আওয়ামী লীগের হাতে সেটি ফের উদয় হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে, সংগ্রাম করেছে। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে।

টানা তিন মেয়াদে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সঙ্গে তাঁর সরকারের তুলনামূলক চিত্র বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মানুষ উপলব্ধি করেছে, সরকার জনগণের সেবক। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। ২০২৬ সালে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাব। আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহেমদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আখতার জাহান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান এবং মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী। সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ’

সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে এই দেশ আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট জনগোষ্ঠী এবং স্মার্ট অর্থনীতি আমাদের গড়ে উঠবে। দেশ এগিয়ে যাবে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে, সন্ত্রাসী দল বিএনপি-জামায়াতসহ যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না তারা এই দেশকে ধ্বংস করবে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ আজকে সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছে। যেখানে আগে একটি দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে করুণার চোখে দেখা হতো। আজকে বাংলাদেশের মানুষ প্রবাসে যেই যান সেখানে সম্মানের চোখে দেখে। এই সম্মান এনে দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আজ সারাবিশ্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলে উন্নত দেশ হিসেবেও এই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। ২০৪১ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগ দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করবে। সেটাই আমার প্রতিজ্ঞা।

নেতাকর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আসুন দেশবাসীর ভাগ্য পরিবর্তন করে জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী, সমৃদ্ধ ও সোনার বাংলা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিই।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে আরেকবার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

এরপর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করেন তিনি। পরে বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরে গিয়ে সেখানে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল-আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, প্রকৌশলী আব্দুস সবুর প্রমুখ।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত