logo
Sunday , 18 June 2023
  1. সকল নিউজ

অর্থনীতির সব সূচকেই পাকিস্তানের চেয়ে অনেক উপরে বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
admin
June 18, 2023 9:17 am

গত দেড় দশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক প্রতিটি সূচকে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব দরবারে উদীয়মান অর্থনীতির রোল মডেল যার নেতৃত্বে, সেই ‘ক্যারিশমাটিক’ লিডার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকসহ বিশ্বের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দ উচ্চকিত প্রশংসা করছেন অসংখ্যবার। এবার বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের প্রভাবশালী উর্দু সংবাদপত্র ডেইলি জং। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মাথাপিছু আয়, রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক উপরে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজেট পেশ করেছে, যেখানে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ। সেখানে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার মাত্র তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং দেশটির মুদ্রাস্ফীতি ২১ শতাংশ। জনসংখ্যা পরিকল্পনাতেও বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে এগিয়ে আছে। তবে বর্তমানে দেশটি রাজনৈতিক সঙ্কটসহ জনসংখ্যা পরিকল্পনাজনিত সমস্যায় ভুগছে।

স্বাধীনতার আগে ১৯৫১ সালে বাংলাদেশে বিপুল জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, সুপরিকল্পিত পরিকল্পনার কারণে বর্তমানে দেশটি ১৬৫ মিলিয়নের মধ্যে জনসংখ্যা সীমিত রাখতে পেরেছে। তবে পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ মিলিয়নে।  বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে নারীদের অবাধ অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়লেও বিপরীত চিত্র দেখা গেছে পাকিস্তানের শ্রমবাজারে, সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ দিনদিন কমেছে।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ তার অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। পাকিস্তানের মতো অগোছালো রাজনীতি, দুর্বল জনপ্রশাসন এবং উচ্চ দুর্নীতির মতো সমস্যায় ভোগা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে।

এশিয়ার এই ফিনিক্সের উন্নয়ন প্রবৃদ্ধির হার পাকিস্তানের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বেশি। ২০২১ সালের মে মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। তখন পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার,  আর বর্তমানে তা মাত্র চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার।   বাংলাদেশ ঠিক কতটা উন্নতি করেছে তার প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উত্থানের দিকে তাকালে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২৭১ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি দ্বারা দেশটির প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিক ও স্থিতিস্থাপক গতিপথ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ বর্তমানে উৎপাদনমুখী শিল্পের দিকে নজর দিয়েছে যার ফলশ্রুতিতে পোশাক শিল্পে চীনের পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে দেশটি। এটি বাংলাদেশের উদ্ভাবনীশক্তির বড় প্রমাণ হিসেবে মনে করা হয়। কারণ দেশটিতে সুতার মূল উপকরণ তুলার উৎপাদন তেমন একটা না হলেও হাজার হাজার পোশাক কারখানা করতে সক্ষম হয়েছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার আয়ে অবদান রাখে।

নতুন অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ রয়েছে, যেখানে পাকিস্তানের কাছে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলারের কম এবং তাও বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে।

চলতি বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেখানে পাকিস্তানের ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান মাত্র ২১ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রপ্তানি ও পরিষেবা দিতে সক্ষম, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।

পাকিস্তান তার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ভুগছে, যা দেশটির জনগণকে বিপাকে ফেলেছে। এছাড়াও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বৈদেশিক ঋণ পরিশোধসহ অনিশ্চিত বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিবেশ থেকে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে সতর্ক করেছে।

পাকিস্তানের পতনের জন্য দায়ী করা যেতে পারে দুর্নীতিগ্রস্ত নেতৃত্ব, দায়িত্বজ্ঞানহীন আর্থিক নীতি এবং সন্ত্রাসবাদে গভীর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাসহ অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশী ঋণের উপর পাকিস্তানের অত্যধিক নির্ভরতা, অতিরিক্ত খরচ এবং আমদানি নীতির দ্বারা জ্বালানী, অস্থিতিশীল বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ দেশটির অর্থনীতিকে আরো দুর্বল করেছে।

অপরদিকে বাংলাদেশে কার্যকর নেতৃত্ব, বিচক্ষণ রাজস্ব নীতিসহ মানব উন্নয়নের দিকে অধিকতর গুরুত্বের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, স্বাস্থ্যখাতে উন্নতি এবং বেকারত্ব হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছে যে, দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সেনাবাহিনীকে কীভাবে দূরে রাখা যায়, কারণ এটি না করলে বাংলাদেশের অবস্থাও পাকিস্তানের মতোই হতে পারতো।

সর্বশেষ - সকল নিউজ