ইউক্রেন-রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে হু হু করে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও লেগেছে। ধীরে ধীরে যোগ হয়েছে ডলারের সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতি, রিজার্ভের উপর চাপ। কিন্তু বড় পরিতাপের বিষয় হলো, এই সংকটে দেশের কিছু রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বিএনপি এবং সুশীলখ্যাত কিছু ব্যক্তি বেশ খুশি। বিশেষ করে বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে। অথচ দেশে বিদ্যুৎ সংকট হয়নি, উৎপাদনের সক্ষমতাও কমেনি।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় সাশ্রয়ী হবার জন্য লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অথচ বিএনপি নেতারা হাতে হারিকেন নিয়ে খিল খিল করে হেসে বলছে, দেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, সেদিন আর দেরি নয়। খুব আত্মবিশ্বাসের সঙ্গ তারা এ কথা বলছে। তাদের কথাবার্তা এক ধরনের উদ্দীপনা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু কেন? তারা যেন এক ‘হারিকেন উৎসবে’ মেতে উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ যদি শ্রীলঙ্কা হয়ে যায় বা হয়ে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে বিএনপি এতো কেন খুশি হচ্ছে? এই প্রশ্ন এখন জনমনে।
দলটির নেতারা বলে বেড়াচ্ছে, রেমিট্যান্স কমে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে- জুলাই মাসে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় তা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। যা গত দেড় বছরে সর্বোচ্চ। দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়েও নেতিবাচক আলোচনা করছে সুশীল বাবুরা। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার সহনীয় পর্যায়ে। যুক্তরাষ্ট্র ৯.১% (জুন ২০২২), যুক্তরাজ্য ৯.৪% (জুন ২০২২), জার্মানি ৮.২% (জুন ২০২২), রাশিয়া ১৫.৯% (জুন ২০২২), তুরস্ক ৭৮.৬% (জুন ২০২২), নেদারল্যান্ডস ৯.৪% (জুন ২০২২), শ্রীলঙ্কা ৩৯.৯% (জুন ২০২২), পাকিস্তান ২১.৩২% (জুন ২০২২), আর বাংলাদেশের ৭.৫৬% (জুন ২০২২)।
বিশ্লেষকমহল বলছেন, বাংলাদেশও যদি কয়েক দিন পর শ্রীলঙ্কার মতো হয়, তাহলে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি খুশি কেন? আপনাদের দেশপ্রেম কোথায়? কিসের জন্য, কাদের জন্য রাজনীতি করছেন? দেশের প্রতি বিএনপির দায়িত্ববোধ কোথায়? বাংলাদেশ যদি শ্রীলঙ্কা হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, আপনার তো কষ্ট পাবার কথা, কারণ আপনি এদেশে বাস করছেন, এদেশের আলো-বাতাস পাচ্ছেন, আপনি এদেশের নাগরিক, আপনি যে দলই করেন। আপনি দেশের বাইরে নন। কিন্তু আপনি সেটা করছেন না। সংকট থেকে উত্তরণের কোনো কথা বলছেন না। বরং আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তেরি করার চেষ্টা করছেন। পাকিস্তানি রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছেন। দেশের সংকট নিয়ে যে দল কথায় কথায় দেশকে শ্রীলঙ্কা বানাতে চায় বা শ্রীলঙ্কার সাথে তুলনা করে সে দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কোনোদিন শুভ হতে পারে না।