গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম এখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলে, রাজনীতিতে এবং জনগণের মধ্যেও তার অবস্থান নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। নিজের কৌশলের ফাঁদে নিজেই ধরা পড়েছেন। তার এই কৌশলকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন আত্মঘাতী বিশ্লেষণ। এর ফলে একদিকে যেমন জাহাঙ্গীরের রাজনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তেমনি জাহাঙ্গীরের ব্যবসা, অর্থনীতি সবকিছুই ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
এবারের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাহাঙ্গীর আলম মনোনয়ন পাননি। তার বদলে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাই আজমত উল্লাহ খানকে। আজমত উল্লাহর মনোনয়নকে জাহাঙ্গীর মেনে নিতে পারেননি। আর এজন্যই আজমত উল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করেন জাহাঙ্গীর আলম। এই চ্যালেঞ্জে তিনি জয় যুক্ত হবেন এমনটি আশা করেছিলেন।
জাহাঙ্গীর মনে করেছিলেন যে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তার জনপ্রিয়তা এবং সাধারণ জনগণের প্রভাব ইত্যাদি কারণে আজমত উল্লাহ কোণঠাসা হয়ে পড়বে এবং সরকার তার সাথে যোগাযোগ করবে এবং একটি সমঝোতায় আসার আসার চেষ্টা করবে। এর ফলে তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি ফিরে পাবেন। কিন্তু বাস্তবে সেটি হয়নি। জাহাঙ্গীর ঋণ খেলাপির অভিযোগে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর এব্যাপারে বিকল্প রেখেছিলেন। তার মা জাইরা খাতুনও মনোনয়ন কিনেছেন। জাইরা খাতুন আসন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু এর ফলে পুরো কৌশলটি জাহাঙ্গীরের জন্য আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। একাধিক কারণে জাহাঙ্গীরের এই কৌশল আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে;
১. তার মাকে প্রার্থী করা: তার মাকে প্রার্থী করার ফলে জাহাঙ্গীর আলমের জন্য আওয়ামী লীগের দরজার চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ দলের মনোনীত প্রার্থীকে হারানোর জন্য জাহাঙ্গীর চেষ্টা করছেন এটা স্পষ্ট হয়েছে। এটির প্রভাব পড়বে তার বাকি রাজনৈতিক জীবনে। জাহাঙ্গীরকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হতে পারে এমন গুঞ্জন আওয়ামী লীগে রয়েছে। আজীবনের জন্য বহিষ্কার না হলেও জাহাঙ্গীর যে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আপাতত কোনো বড় পদ-পদবী পাবেন না এটি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে।
২. দুর্নীতির অভিযোগ: জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে যে তদন্তগুলো হচ্ছে সেই তদন্তগুলোর গতি বৃদ্ধি হয়েছে। উল্লেখ্য যে মেয়র থাকা অবস্থায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগে তাকে মেয়র থেকে বহিষ্কার করেছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এখন বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, জাহাঙ্গীর যেহেতু দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে সেইজন্য কার বিরুদ্ধে মামলা তদন্তগুলো নতুন গতি পেতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে এই মামলা নিয়ে তাকে ব্যতিব্যস্ত সময় থাকতে হবে।
৩. জনবিচ্ছিন্নতা: জাহাঙ্গীরকে নিয়ে জনবিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। জাহাঙ্গীর যখন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তখন জনগণের সঙ্গে তিনি সবসময় ভালো ব্যবহার করেন নাই। জনগণকে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তার নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ছিলেন। এখন যখন জাহাঙ্গীর ক্ষমতাহীন তখন জনগণ এর প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে। জাহাঙ্গীরের অতীত কর্মকান্ড নিয়ে এখন চর্চা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ জনগণের সঙ্গেও জাহাঙ্গীরের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা এবং দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
৪. মাকে প্রার্থী করা বোকামি: জাহাঙ্গীর এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন কারণ তার মা গাজীপুরে ফ্যাক্টর নয়। বরং সকলে বুঝেছে যে জাহাঙ্গীর তার ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই মাকে প্রার্থী করেছেন। ফলে জাহাঙ্গীরের মাকে নিয়ে যে আবেগ-উচ্ছ্বাস তৈরি হওয়ার কথা ছিল সেটিও হয়নি। সব মিলিয়ে রাজনীতির কৌশলের খেলায় জাহাঙ্গীর কোণঠাসা। অনেকে মনে করছেন নিজের কৌশলে নিজেই আটকে গেছেন জাহাঙ্গীর আলম।