logo
Saturday , 13 May 2023
  1. সকল নিউজ

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পারস্পরিক আস্থা জোরদারের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রতিবেদক
admin
May 13, 2023 12:13 pm

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও শ্রদ্ধা জোরদার করা, অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি এ অঞ্চলের স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য সামুদ্রিক কূটনীতি জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিন‌া। শুক্রবার (১২ মে) সন্ধ্যায় ২ দিনব্যাপী ইন্ডিয়ান ওশান কনফারেন্স (আইওসি) উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত মহাসাগর ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বরং এ অঞ্চলের সব দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক প্রণয়ন করেছি। এ সম্মেলনে ছয়টি অগ্রাধিকারের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের দেশগুলোকে তাদের উন্নয়নের জন্য ‘সামুদ্রিক কূটনীতি’ গড়ে তুলতে হবে, যার মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যত নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ অঞ্চলের অনেক দেশের জলবায়ু ঝুঁকি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমাতে সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান করেন।

এই অঞ্চলে ‘শান্তি সংস্কৃতি’ এবং উন্নয়ন জোরদারের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের জন্য নারীদের বিষয়ে যথাযথ মনোযোগ দেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন যা অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এই অঞ্চলে ও অঞ্চলের বাইরেও ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই উন্নয়নকে সহজতর করবে।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি নাগরিককে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গি এ অঞ্চলে একটি বড় মানবিক বিপর্যয় ঠেকিয়েছে। এখন, আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ ও টেকসই উপায়ে তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসনের জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের সক্রিয় সমর্থন চাই।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভারতীয় মহাসাগর রিম অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতি এবং আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের কাউন্সিলেরও বর্তমান সভাপতি। বাংলাদেশ এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের পুরনো ও অপ্রচলিত চ্যালেঞ্জে বিশ্বাস করে। আমরা এই অঞ্চলে শান্তির জন্য আমাদের ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি এবং একটি সহনশীল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে অন্য সব দেশও একই কাজ করবে বলে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, মহাসাগর সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে চমৎকার সুযোগ প্রদান করে। বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ এবং তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ এই অঞ্চলের মহাসাগর ও সমুদ্র পথে পরিচালিত হয় এবং বৈশ্বিক সামুদ্রিক বাণিজ্যের প্রকৃত ব্যয় গত ১৫ বছরে তিনগুণ বেড়েছে। তবুও অনেক সম্ভাবনা এখনও অব্যবহৃত রয়ে গেছে। এশিয়া-প্যাসিফিক ও আফ্রিকায় ভারত মহাসাগর অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অঞ্চলটি অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। তাই ভারত মহাসাগর অঞ্চলের দেশগুলোকে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য বাংলাদেশের সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছিলেন। একজন দূরদর্শী নেতা হিসেবে, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ‘মেরিটাইম জোন’-এর সীমানা নির্ধারণ করতে, সীমানার মধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষমতা গড়ে তুলতে করতে এবং সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধানের সুবিধার্থে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেছিলেন। এই আইনটি ‘সামুদ্রিক আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশন, ১৯৮২’ গৃহীত হওয়ার ৮ বছর আগে কার্যকর হয়েছিল, যখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে উপলব্ধি সীমিত ছিল।

সম্মেলনের থিম – ‘শান্তি, অংশীদারিত্ব ও সমৃদ্ধি: একটি সহনশীল স্থিতিস্থাপক ভবিষ্যতের দিকে’- খুবই উপযুক্ত ও সময়োপযোগী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ফলে এ থিমটি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বৈশ্বিক মন্দা, খাদ্য, জ্বালানি
সংকটের ফলে বিশ্বের সব মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলও জলবায়ু পরিবর্তন, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে, এই অঞ্চলের দেশগুলিকে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে এবং একটি উজ্জ্বল অঞ্চলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

তিনি বলেন, কোভিড-পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘে সর্বসম্মতিক্রমে ‘শান্তির গ্যারান্টি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ ডায়ালগ, ২০২৩” শীর্ষক একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল।’

সেই প্রস্তাবে ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে জাতির পিতার দেওয়া ভাষণ থেকে ঐতিহাসিক উদ্ধৃতি রেজুলেশনের ১৪তম অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত হয়েছিল, যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির নীতিমালার অংশ।
এতে লেখা আছে: ‘দারিদ্র্য, ক্ষুধা, রোগ-ব্যাধি, নিরক্ষরতা ও বেকারত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং গঠনমূলক সহযোগিতা, সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার চেতনায় সকলের প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বৈরিতা না করার উপর জোর দান এই উদ্দেশ্যগুলি অর্জনে সহায়ক হবে।’

তিনি আরও বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এ বিষয়গুলো বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রাসঙ্গিক, কারণ বাংলাদেশ একটি সহনশীল ভবিষ্যতের জন্য কর্মসূচি প্রণয়নের চেষ্টা করছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের উদ্ধৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে অর্থপূর্ণ সহযোগিতা, সংলাপ ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার আকারে বাংলাদেশের কার্যকর ‘অংশীদারিত্ব’ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ২৩ মে, ১৯৭৩ সালে জুলিও-কুরি শান্তি পদক দেওয়া হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তির প্রবল প্রবক্তা হয়ে উঠেছে। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে, আমরা ‘শান্তির সংস্কৃতি’ বিষয়ে একটি প্রস্তাব পেশ করি যা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীকালে, জাতিসংঘ ২০০০ সালকে ‘শান্তির সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক বছর’ হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং ২০০১-২০১০ সালকে ‘শান্তির সংস্কৃতি ও অহিংসার দশক’ হিসাবে মনোনীত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক ন্যায়বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চরম দারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আমাদের মাথাপিছু আয় এক দশকের মধ্যে তিনগুণ বেড়ে ২৮২৪ ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সব মানদণ্ড পূরণ করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার একটি সমৃদ্ধ অর্থনীতির জন্য সহায়ক শক্ত ভৌত অবকাঠামোসহ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে চাচ্ছে। গত বছর আমরা নিজস্ব-অর্থায়নে নির্মিত ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু’ উদ্বোধন করেছিলাম।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, সম্প্রতি আমরা রাজধানীতে প্রথম মেট্রো রেল পরিষেবা উদ্বোধন করেছি। শীঘ্রই চট্টগ্রামে নদীর তলদেশে ৩.২ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল সম্পূর্ণ করব যা দক্ষিণ এশিয়ায় এই ধরণের প্রথম টানেল।

তিনি বলেন, আমাদের আকাঙ্খা হল ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, আধুনিক, উন্নত দেশ, ‘সোনার বাংলা’তে রূপান্তর করা এবং ২১০০ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও জলবায়ু সহনশীল ব-দ্বীপ গড়ে তোলা। এই লক্ষ্যগুলি অর্জনের জন্য আমাদের কৌশলের মধ্যে রয়েছে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার এবং সবার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করা।

সম্মেলনে ২৫টি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। এছাড়া ডি-৮, সার্ক ও বিমসটেকের প্রতিনিধিসহ প্রায় ১৫০ জন বিদেশী অতিথি সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

উদ্বোধনী অধিবেশনে মরিশাসের প্রেসিডেন্ট পৃথ্বীরাজসিং রূপন, মালদ্বীপের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসেম, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সেকেন্ড মন্ত্রী ড. মালিকী ওসমান বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ - সকল নিউজ