logo
Thursday , 11 May 2023
  1. সকল নিউজ

জনবান্ধব বাজেট ॥ চূড়ান্ত হচ্ছে

প্রতিবেদক
admin
May 11, 2023 10:33 am

আগামী অর্থবছরের জন্য জনবান্ধব বাজেট চূড়ান্ত করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে কিভাবে মানুষকে স্বস্তি দেওয়া যায় সেই কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে নতুন বাজেটে। এর পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বেশিসংখ্যক মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। নতুন করে উপকারভোগী বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ৭ লাখ। এ কারণে জোর দেওয়া হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতেও। আজ বুধবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের রূপরেখা উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী বাজেটের ওপর বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। সেই অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে কিছুটা সংশোধনীও আনা হতে পারে। তবে বাজেট প্রণয়নে ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করেছে অর্থমন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে নিয়োজিত কর্মকর্তারা বলছেন মূলত ‘বাজেট চূড়ান্ত’। আর সেই বাজেটই প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে রেকর্ড এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ব্যয়ের বাজেট এটি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবারের বাজেটে জনগণকে স্বস্তি দেওয়া হবে। কর না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানো, করদাতাদের হয়রানি বন্ধ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হয়। এই হিসেবে চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী বাজেটের আকার বাড়বে প্রায় ৮১ হাজার কোটি টাকার বেশি, যা আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাক্কলিত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বাজেটে মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ছে। জনবান্ধব কর্মসূচিও বাড়ানো হয়। এটি ভালো দিক। তবে ভোগ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষ চাপে আছে। এই চাপ কমাতে হলে বাজেটে কর্মসূচি থাকতে হবে। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল আগামী ১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করবেন বলে জানিয়েছে অর্থবিভাগ।
এদিকে, বাজেটে নতুন করে প্রায় সাড়ে সাত লাখ বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া প্রায় এক দশক পর আগামী অর্থবছরে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার পরিমাণও কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে নতুন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমে নিয়োজিত সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ও খাদ্য বাবদ অন্যান্য খাতে চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

টিসিবি এক কোটি মানুষের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে। এ খাতে ব্যয় বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তায় আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের পরামর্শ ও শর্ত মেনে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতে আর নতুন করে ভর্তুকি বাড়ানো হচ্ছে না। তবে এই তিন খাতের পুরোনো দেনা পরিশোধের জন্য ভর্তুকি লাগবে। জানা গেছে, আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর করবে সরকার। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিলে আসন্ন বাজেটে সর্বজনীন পেনশন বাস্তবায়নে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে।

এছাড়া জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় কয়েক বছর ধরে সরকারি চাকরিজীবীরা বেতনভাতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছেন। এ কারণে আগামি বাজেটে সরকারি চাকুরেদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিবে অর্থমন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বেসরকারিখাতে এর কি প্রভাব পড়তে পারে সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখছে অর্থবিভাগ। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামালের সঙ্গে আজকের বৈঠকে পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করবেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ভোগ্য নিত্যপণ্যের দাম কমাতে কি ধরনের কৌশল গ্রহণ করা যায় সেই বিষয়ে তাগিদ দিয়েছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে দেশে খাদ্যপণ্যসহ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এরফলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে। নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও আগামী অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির হার ধরা হচ্ছে ৭.৫ শতাংশ। এছাড়া নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া নতুন বাজেটে ভর্তুকি বাড়ছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে এ জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ১০০ কোটি টাকা। সার, বিদ্যুৎ, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), নগদ সহায়তা, খাদ্য, রপ্তানি প্রণোদনা এসব খাতেই আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি বাড়বে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ভর্তুকি যেভাবে বাড়ছে তা আসলে তা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। রাজনৈতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে এ থেকে আপাতত বের হয়ে আসাও মুস্কিল।  রাজস্ব সংগ্রহের যে অবস্থা, তাতে উন্নয়নমূলক কাজ করার অর্থ পাওয়াই খুব কঠিন হবে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী খাদ্য ও কৃষিতে ভর্তুকি থাকলেও অন্যগুলো থেকে বের হওয়ার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে আইএমএফ যে পরামর্শ ও শর্ত দিয়েছে তা অনুসরণ করা প্রয়োজন। তাহলে ঋণের বাকি কিস্তি পাওয়া সহজ হবে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শুধু সুদ ব্যয়ই এক লাখ কোটি টাকার বেশি হবে বলে মনে করছে অর্থবিভাগ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রপ্তানি আয় বাড়ানো ও এবং রেমিটেন্স বৈধপথে আনার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আগামী বাজেটে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার সম্প্রতি জানিয়েছেন, অধিকাংশ রেমিটেন্স অবৈধ পথে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসছে।

এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাপস ব্যবহার করে হুন্ডির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনছে। এর মাধ্যমে বৈধ পথে রেমিটেন্স বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। রেমিটেন্স বাড়লে রিজার্ভ শক্তিশালী হবে একই সঙ্গে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী নিট রিজার্ভ ২৪ বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ৫ লাখ কোটি টাকা ॥ আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ কোটি টাকা  রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সংগ্রহ করতে হবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের বাকি ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা স্থানীয় এবং বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ অনুদানের মাধ্যমে মেটানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৯৪ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন অনুদান এবং বাজেট সহায়তা মোট ১১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া দেশের ব্যাংক ব্যবস্থা  থেকে ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। বাকি ৩০ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও অন্যান্য খাত থেকে ঋণ গ্রহণ করবে সরকার। ডলার সংকটে আমদানি কম হওয়ায় চলতি অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) ও আয়কর আদায় কম হবে। ফলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এমন বাস্তবতা মাথায় নিয়েও আগামী অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান। নতুন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার খুব বেশি বাড়ছে না। আগামী অর্থবছরের জন্য এডিপি নেওয়া হচ্ছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার।

সর্বশেষ - সকল নিউজ