logo
Sunday , 26 March 2023
  1. সকল নিউজ

বিনিয়োগে চটকদার প্রচার – পিকে’র প্রতারণার জালে প্রভাবশালীরাও

প্রতিবেদক
admin
March 26, 2023 3:07 pm

পদ্মা সেতু, শেয়ারবাজার এবং পাঁচতারকা হোটেলে বিনিয়োগের স্বপ্ন দেখিয়ে জালিয়াতি করেছিলেন প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদার ও তার ঘনিষ্ঠরা।

এতদিন জানা গিয়েছিল তাদের প্রতারণার শিকার হয়েছিলেন শুধু সাধারণ মানুষ। কিন্তু যুগান্তরের দীর্ঘ অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে, কারসাজির জালে আটকা পড়েছেন সমাজের অনেক নামিদামি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিও। হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা।

তবে তদন্ত সংস্থার মুখোমুখি হওয়াসহ নানা শঙ্কায় টাকা ফেরত পেতে তেমন কোনো সক্রিয় তৎপরতা দেখাচ্ছেন না তারা।

প্রসঙ্গত, চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন পিকে হালদার ও তার ঘনিষ্ঠরা। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সর্ভিসেস লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড।

অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, যেসব প্রভাবশালী ব্যক্তি পিকে হালদারের চটকদার প্রচারণায় আকৃষ্ট হয়ে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে মোটা অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত এক শীর্ষ নেতার ৫ কোটি, সিটি করপোরেশনের এক মেয়রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১০ কোটি, আরেক মেয়রের আপন ভাতিজার ৩ কোটি, বিভিন্ন কারণে আলোচিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের কয়েক কোটি, সাবেক অর্থমন্ত্রীর ভাইয়ের ৩ কোটি, বর্তমান একজন মন্ত্রীর কয়েক কোটি, দেশের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক পরিবারের প্রায় ১২ কোটি এবং একজন বিখ্যাত জাদুশিল্পীর মোটা অঙ্কের টাকা।

এছাড়া রাষ্ট্রের একজন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তির মেয়ের জামাতা এবং ওয়ান-ইলেভেনের সময় দুর্নীতিবিরোধী টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে ছিলেন-এমন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির টাকাও খোয়া গেছে পিপলস লিজিংয়ে বিনিয়োগের মাধ্যমে।

গুলশান এবং বনানী এলাকার অনেক বিত্তশালীর টাকাও বিনিয়োগ করা হয়েছিল এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। তদন্ত সংস্থার মুখোমুখি হতে হবে-এমন আশঙ্কায় বিনিয়োগ করা টাকা ফিরে পেতে খুব একটা দৌড়ঝাঁপ করছেন না তারা। তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা টাকা ফেরত পেতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হচ্ছে, পিপলস লিজিংয়ে সরকারি তফশিলভুক্ত একটি ব্যাংকও ডিপোজিট রেখেছিল। যার অঙ্ক প্রায় দেড়শ কোটি টাকা। সেই টাকাও খোয়া গেছে।

পিপলস লিজিং থেকেই সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত পিকে হালদার এবং গ্রাহকদের বিষয়ে জানতে চাইলে আদালত থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হাসান শাহেদ ফেরদৌস যুগান্তরকে বলেন, আমরা অত্যন্ত কষ্ট করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ আগের সেই চক্রটি শুধু অর্থই তছরুপ করেনি, সেই সঙ্গে লেনদেনসংক্রান্ত সব ডেটা নষ্ট করে গেছে। আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত সফটওয়ারটিও তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। যে কারণে গ্রাহক এবং ডিপোজিটের সম্পূর্ণ তথ্য এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে কাজ চলছে। আমরা চেষ্টা করছি ছোট ছোট গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে। যাদের বিনিয়োগ ১ লাখ টাকার নিচে।

এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা, অসচ্ছল এবং বয়স্ক কিছু গ্রাহকের টাকাও ফেরত দেওয়ার চেষ্টা চলছে। পিপলস লিজিংয়ের ফান্ডে ৮০ কোটি টাকার মতো আছে জানিয়ে তিনি বলেন, হাজারো গ্রাহকের বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দিতে হলে যে টাকা এখান থেকে ঋণের নামে বের করে দেওয়া হয়েছে, তা পুনরুদ্ধার করতে হবে।

পিপলস লিজিংয়ের এই চেয়ারম্যান যুগান্তরকে আরও জানান, আপাতত ব্যক্তিপর্যায়ে ছোট গ্রাহকরা টাকা পেলেও বড় গ্রাহকদের টাকা পাওয়ার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের অডিট চলছে, তদন্ত চলছে। এরপর পুরো বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলব।

উল্লেখ্য, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। তবে এ সংক্রান্ত অনেক ডকুমেন্ট সরিয়ে ফেলা হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্ট এবং দুদকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়ে গেছে। এছাড়া নবগঠিত বোর্ড কমিটির তরফ থেকে করা তদন্ত টিমও বেশ কিছু তথ্য উদ্ঘাটন করেছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সরকারের অনেক প্রভাবশালী লোকজনকে নিজের সঙ্গে জড়ো করে পিকে হালদার এমনভাবে প্রচার চালিয়েছিলেন যে, সবাই মনে করেছে পিপলস লিজিং প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে তখন বলা হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্যবেক্ষক। যদিও সেই পর্যবেক্ষক নিজেও দুর্নীতি করে সটকে পড়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আরও প্রচার করা হয়েছিল, এই প্রতিষ্ঠানে অর্থ জমা রাখলে তা থাকবে নিরাপদ। আর সেই অর্থ বিনিয়োগের অর্থই হচ্ছে অত্যন্ত লাভজনক খাত। এমনকি পদ্মা সেতুতেও গ্রাহকের অর্থ বিনিয়োগ করা হবে। লভ্যাংশের অর্থ গ্রাহকদের মাঝে সমহারে বণ্টন করে দেওয়া হবে। এমন চটকদার প্রচার-প্রচারণা এবং পিকে হালদারের আশপাশে থাকা ক্ষমতাধর লোকজনকে দেখে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পিপলস লিজিংয়ে বিনিয়োগ করেন।

এক মাস, তিন মাস, ছয় মাস, এক বছর বা ততোধিক সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ সুদের নিশ্চয়তা পেয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চস্তরের ব্যক্তিরা পিপলস লিজিংয়ে এফডিআর করেন। কিন্তু তাদের সেই অর্থ আজ আর কোথাও নেই।

শূন্য হয়ে গেছে পিপলস লিজিংসহ পিকে হালদার নিয়ন্ত্রিত চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। সেসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের জমানো প্রায় সমুদয় টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দেখিয়ে পিকে হালদার ও তার সহযোগীদের হাতবদল হয়ে বেশির ভাগ অর্থই চলে গেছে দেশের বাইরে। সেই অর্থের একটি অংশ নিয়ে ভারতে ধরা পড়েছেন পিকে হালদার। সেখানে তার বিচার চলছে। বাংলাদেশে তাকে ফিরিয়ে এনে দুদকের মামলায় বিচার শেষ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, যেসব সাধারণ গ্রাহকের টাকা খোয়া গেছে, তারা চার বছর ধরে পিপলস লিজিংসহ আইন-আদালত, তদন্ত সংস্থাসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। উলটো তারা অনেক জায়গায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন উচ্চপর্যায়ের গ্রাহক সিটি সেন্টারের ১৭তলা থেকে গ্লাস ভেঙে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পিকে হালদার চক্র তাকে উলটো পুলিশে ধরিয়ে দেয়। তদন্তকারী সংস্থার কাছে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন কয়েকজন গ্রাহক। যাদের মধ্যে নারী গ্রাহকও রয়েছেন। তারা তাদের সেসব কথা যুগান্তরের কাছে তুলে ধরেছেন। এছাড়া আদালতের কাছেও জানিয়েছেন।

একজন নারী গ্রাহক অভিযোগ করে যুগান্তরকে বলেন, তার সঞ্চিত সব অর্থ পিকে হালদার চক্রের হাতে দিয়ে নিঃস্ব হলেও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডেকে নিয়ে একটি তদন্ত সংস্থা তাকে হয়রানি করেছে। তিনি তখন হয়রানির বিষয়টি সব ডিপোজিটরকে ফোন করে জানান। এ কারণে তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে পিপলস লিজিংয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় যুগান্তরের। তাদের মধ্যে একজন সুরাইয়া। যিনি প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা পিকে চক্রের কারসাজিতে হারিয়ে এখন পথে পথে ঘুরছেন।

কীভাবে এবং কত টাকা তিনি তাদের হাতে তুলে দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পিকে চক্রের প্রচার-প্রচারণার ধরনটি এমন চকচকে-ঝকঝকে ছিল যে, বোঝার উপায় ছিল না এরা দুর্বৃত্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক যেখানে তাদের আশকারা দিচ্ছে, আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম অন্তত ঠকব না। কিন্তু ঘটেছে শতভাগ উলটো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারির মধ্যেই পুরো প্রতিষ্ঠানের টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেল পিকে চক্র।

ওই বিনিয়োগকারী আরও বলেন, অর্থকষ্টে এখন আমি আমার সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে পারি না। পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার খরচও জোগান দিতে পারি না। আমার পুরো পরিবারের প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ছয় মাসের জন্য এফডিআর করে রেখেছিলাম। যার মধ্যে আমার বাবার পেনশনের টাকাও ছিল।

এছাড়া করোনার সময় আমার চাকরি চলে যাওয়ায় ওই কোম্পানি থেকে সমুদয় পাওনাদি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকাও জমা রাখি। এখন আমাদের কী হবে, কোথাও থেকে কোনো ধরনের ভালো খবর পাচ্ছি না। আমরা ২০১ জন গ্রাহক মিলে যে রিট করেছিলাম, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত পিপলস লিজিং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। আমাদের রিটের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থেকে পুনরুজ্জীবিত করেছে কোর্ট।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত

ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস আজ তিন ডিজিটাল প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীতে চলমান ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষের মধ্যেও কী পেলাম?

নিরপেক্ষ দেশগুলোকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য করছে যুক্তরাষ্ট্র

পদ্মা সেতু রেল সংযোগে ডিএসসিসির কাজ ৬৬ কোটি টাকার হদিস নেই

শাহজালালে ৯টি সোনার বারসহ নারী যাত্রী আটক

মির্জা ফখরুল জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চান : তথ্যমন্ত্রী

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে বিএনপি চুপ থাকার কারণ বললেন প্রধানমন্ত্রী

কৃষিতে সরকারের ঈর্ষণীয় সাফল্য

পাকিস্তানে বন্যায় ক্ষতি হাজার কোটি ডলার, তীব্র খাদ্যসংকটের আশঙ্কা

টেকসই উন্নয়নে চাই কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা : প্রধানমন্ত্রী