logo
Tuesday , 21 February 2023
  1. সকল নিউজ

চট্টগ্রামে কোন্দল নিরসনে কঠোর বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

প্রতিবেদক
admin
February 21, 2023 12:29 pm

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগে গ্রুপিং-কোন্দল বন্ধে কঠোর বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রয়োজনে সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে তৃণমূল কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তৃণমূল সম্মেলন শেষ হওয়ার পর নগর নেতৃত্বে কারা আসবেন সেটা তিনি নিজেই দেখবেন। গণভবনে নগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত এক বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা রোববার এসব কথা বলেন। বৈঠকে যোগ দেওয়া একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে নাছির বিরোধী কয়েকজন নেতা বলেন, নিয়মনীতি না মেনে মাহতাব-নাছির তৃণমূল কমিটি গঠন করছেন। তাই তারা চান আগে নগর নেতৃত্ব নির্বাচন, পরে তৃণমূল কমিটি গঠন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাদের এ প্রস্তাব নাকচ করে গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্মেলনের পক্ষে মত দেন। তৃণমূল কমিটি গঠন যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে হচ্ছে তার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।

জানা গেছে, এদিন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ১৯ নেতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করেন। নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে সাত নেতা গণভবনে যান। তার সঙ্গে অন্যদের মধ্যে ছিলেন সহসভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, নগর কমিটির সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম প্রমুখ। অন্যদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ছাড়াও সহসভাপতি নঈম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, সদস্য বেলাল উদ্দিন, বিজয় কিষাণ চৌধুরীসহ ১২ জন।

সূত্র জানান, নাছিরবিরোধী হিসাবে পরিচিত নেতারা তিন বছর ধরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছিলেন। নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক নানা বিষয় ও গ্রুপিং কোন্দল সম্পর্কে কথা বলার জন্যই তারা দলীয় প্রধানের সাক্ষাৎ চেয়ে আসছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের গণভবনে ডেকে পাঠান। একই সঙ্গে তিনি ডেকে পাঠান নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককেও। মূলত একপক্ষের সঙ্গে কথা না বলে দুইপক্ষের অভিযোগ-অনুযোগ শুনে সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্যই বৈঠকের এ ব্যবস্থা করেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত থাকা অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল সোমবার যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে না। তৃণমূলে কমিটি গঠন নিয়ে চলছে বিশৃঙ্খলা। এসব বিষয়ে দলীয় প্রধানকে জানানো এবং সংগঠনকে গতিশীল করতে নির্দেশনা নেওয়ার জন্যই আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে আসছিলাম। করোনাসহ নানা কারণে প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে পারেননি। সর্বশেষ রোববার ডেকে পাঠালে আমরা আমাদের অভিযোগ-অনুযোগগুলো তাকে বলেছি। নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল কমিটি গঠনে যে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা চলছে, ত্যাগীরা স্থান পাচ্ছে না সেটাও বলেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি তৃণমূল কমিটিতে ত্যাগীদের স্থান দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাইকে বলেছেন, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকবে। যোগ্য লোক যাতে যোগ্যতম স্থান পায় সেটি দেখতে হবে।

আ জ ম নাছির উদ্দীন বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু পদে পদে নানা বাধা বিপত্তির কারণে তা সম্ভব হচ্ছিল না। একটি পক্ষ চেয়েছিল তৃণমূল সম্মেলন না করেই যেনতেন একটি কমিটি নিয়ে আসতে। তাই ওই পক্ষটি সাংগঠনিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে আসছিল। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তিনি নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তৃণমূল সম্মেলন শেষ করেই গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নগর সম্মেলন আয়োজন করা হবে বলে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানকে অবহিত করেন। দলীয় প্রধান তার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করে তৃণমূল সম্মেলন দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। নগর সম্মেলন বা নেতা কে নির্বাচিত হবে সেটা প্রধানমন্ত্রী নিজেই দেখবেন বলে বৈঠকে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০০৫ সালে। তখন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন কাজী ইনামুল হক দানু। ইনামুল হক দানু মারা যাওয়ার পর ২০১৩ সালে কেন্দ্র থেকে যে কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়, সেখানে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর কমিটির প্রথম সহসভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বর্তমানে নগর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সম্মেলন হচ্ছে। ১৩২টি ইউনিটের মধ্যে ১১০টি ইউনিট কমিটি গঠন হয়েছে। ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে ৫টির সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। ১৫টি থানা কমিটি রয়েছে, পর্যায়ক্রমে এসব থানা কমিটিও হবে। এরপরই নগর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, রোজার আগে-পরে তৃণমূল সম্মেলন শেষ করে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে নগর সম্মেলন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে তাদের। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংগঠনকে গুছিয়ে ফেলতে চান তারা।

সর্বশেষ - সকল নিউজ