রাজধানীবাসীর জন্য স্বস্তির বার্তা নিয়ে পুরোদমে চালু হয়েছে মেট্রোরেল। মতিঝিল থেকে উত্তরা পর্যন্ত সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত আটটা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলছে বিদ্যুৎ চালিত মেট্রোরেল। ঢাকার চিরচেনা যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে অনেকে এখন মেট্রোরেলকে বাহন হিসাবে বেছে নিচ্ছেন। ফলে স্টেশনগুলোতে ভিড় বাড়ছে যাত্রীর। গত দুদিন ধরে স্টেশন ও মেট্রোর বগিগুলোয় যাত্রীর উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এমআরটি পাস ব্যবহারকারীরা টিকিট কাটার ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত ট্রেনে উঠতে পারলেও বিপাকে পড়েছেন অন্যরা। মেট্রোর টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন তারা। তাদের লাইন স্টেশন ছেড়ে সড়ক পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। টিকিট কাটতে দীর্ঘ সময় লাগায় কাউন্টার বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
গত শনিবার থেকে পুরোদমে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে। সেদিন ছুটির দিন হওয়ার পরও মেট্রোরেলের সব স্টেশন যাত্রীতে ছিল ঠাসা। রবিবার এবং সোমবারও একই চিত্র দেখা গেছে। বরং অফিস খোলার পর মেট্রোতে যাত্রীর চাপ আরও বেড়েছে।
সাধারণত রাজধানীতে পিক আওয়ার সকাল নয়টা ও বিকেল পাঁচটা। অফিস শুরু ও শেষের সময়কে কেন্দ্র করে সড়কে এ সময় তীব্র যানজট দেখা যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নগরবাসীর আস্থায় পরিণত হয় মেট্রোরেল। ফলে পিক আওয়ারে স্টেশনগুলোতে ভিড় দেখা যায়। মতিঝিল অংশ পর্যন্ত মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রীর চাপ আরও বেড়েছে। শুধু পিক আওয়ারই নয়, অন্য সময়ও মেট্রোতে যাত্রীর চাপ দেখা যাচ্ছে।
সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সচিবালয় স্টেশনে যাত্রীর প্রচন্ড ভিড় চোখে পড়েছে। সেখানে মোট তিনটি মেশিন ও একটি ম্যানুয়াল বুথের সামনে শতাধিক যাত্রীকে টিকিটের জন্য লাইনে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এছাড়া আগারগাঁও, পল্লবী স্টেশনেও যাত্রীর ব্যাপক চাপ ছিল।
শুধু টিকিট কাটাই নয়; একই চিত্র মেট্রোতে ওঠার সময়ও। টিকিট কাটলেও বগিতে উঠতে পারবেন কিনা তা নিয়ে অনেককে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতে দেখা গেছে। সচিবালয় স্টেশনের যাত্রীরা উঠতে পারলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছার পর কোনো বগিতেই তিল ধরার ঠাঁই ছিল না। এ সময় অনেক যাত্রীকে এক বগির দরজা থেকে অন্য বগির দরজায় দৌড়াতে দেখা যায়।
শাহবাগ স্টেশনে চাপাচাপি করে কিছু যাত্রী উঠতে পারলেও অনেককেই ব্যর্থ হয়ে পরের ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের উদ্দেশে নিরাপত্তা কর্মীদের পরবর্তী মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করতে বলতে শোনা যায়। স্টেশনগুলোতে নামা যাত্রীর তুলনায় অপেক্ষমাণ যাত্রীর সংখ্যা কয়েকগুণ হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
শেওড়াপাড়া যাওয়ার জন্য পঞ্চাশোর্ধ আব্দুল কাদির সচিবালয় স্টেশন থেকে মেট্রোতে উঠেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই যাত্রী বলেন, মেট্রোরেলে ধারণ ক্ষমতার থেকে যাত্রী অনেক বেশি। দুদিন আগে স্টেশনগুলো পুরোপুরি চালু হওয়ার পর যাত্রী অনেক বেড়েছে। সবার লক্ষ্য যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো। তিনি বলেন, এখানে তো তবু ওঠা যায়। উত্তরা ও মিরপুর স্টেশনগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। সেখানে অধিকাংশ ট্রেনে যাত্রীতে ভরা থাকায় ওঠা যায় না। রবিবার বিকেলে আসার সময় দুটা ট্রেন মিস করে তারপর উঠতে পেরেছিলাম।
অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে মেট্রোরেল স্থাপনের পরিকল্পনা নেয় সরকার। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর এমআরটি লাইন ৬-এর উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। মেট্রোরেল চালুর এক বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো অনেক যাত্রী স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাটায় অনভিজ্ঞ। ফলে টিকিট কাটতে দীর্ঘ সময় লাগছে। আর তাতে দীর্ঘ হচ্ছে টিকিট কাটার লাইন।
টিকিট মেশিনে সকল নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেককে অন্যের সহযোগিতা নিয়ে টিকিট কাটতে হচ্ছে। ফলে সময় লাগছে। তাছাড়া একের অধিক নোট না দেওয়ার জন্য বলা হলেও অনেককেই একই ভুল করতে দেখা গেছে। ফলে একই কাজ একাধিকবার করতে হচ্ছে এবং দ্বিগুণ সময় লাগছে।
মেশিনে দেওয়ার পর ময়লা ও ছেঁড়া টাকা ফেরত দেওয়ায়ও বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। এছাড়া মেশিনে ভাঙতি অর্থ না থাকায়ও বারবার অর্থ ফেরত দিতে দেখা যায়। এসব কারণে টিকিটের লাইন লম্বা হচ্ছে।
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের চলাচল শুরু হয় ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর। এর একদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন করেন। আর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে যাত্রী চলাচল শুরু হয় গত ৫ নভেম্বর।
এতদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করছে সকাল সাতটা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলছে সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। কিন্তু গত শনিবার উত্তরা থেকে মতিঝিল অংশে সকাল সাতটা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করছে।
এখন অফিসের সময়ে মেট্রোরেল চলছে ১০ মিনিট পরপর এবং অফপিকের সময় চলছে ১২ মিনিট পরপর। নতুন সূচির প্রথম দিন থেকেই মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। যানজট ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতেই যাত্রীদের অনেকে মেট্রোরেল পছন্দের বাহন হিসেবে বেছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।