logo
Monday , 23 October 2023
  1. সকল নিউজ

বিএনপির মহাযাত্রা : রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক? নাকি ভয়ঙ্কর কিছুর অপেক্ষায় বাংলাদেশ

প্রতিবেদক
admin
October 23, 2023 4:19 pm

গত ১৫ বছরে নানারকম হাস্যকর কর্মসূচির পর এবার বাজারে এলো ‘মহাযাত্রা’ কর্মসূচি। আগামী ২৮শে অক্টোবর ‘মহাযাত্রা’ শুরু হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন ঐদিন থেকে আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন ছাড়া ঘরে ফিরবে না কেউ। ২০১৩ সালে তার নেত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী আদায় ছাড়া ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু এসিবিহীন রাজপথ পছন্দ না হওয়ায় ঘরে না ফেরার দাবি বেশিদিন টেকেনি। ২০১৪ সালে আবারও খালেদা জিয়া এবং রুহুল কবির রিজভী ঘর ছেড়ে অফিসে বসত গড়েন। বিএনপি কার্যালয়ে এত লোকের ভিড়ে মন টেকেনি খালেদা জিয়ার, কাউকে কিছু না বলে আবার ঘরে ফেরেন তিনি। বিএনপি কার্যালয় রিজভীর স্থায়ী ঠিকানা।

কর্মীরা বলেন, রিজভী নিজ বাড়িতে ঠাঁই পান না বলে তিনি দলীয় কার্যালয়ে সংসার গুছিয়ে নিয়েছেন। ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া কারান্তরীণ হলে রিজভী অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যালয়ে থাকা শুরু করেন। তবে তিনি বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের মতো মনের অজান্তে অদৃশ্য হয়ে যাননি। বিএনপির অনেক নেতাই ঘর ছেড়ে ‘স্বেচ্ছাগুম’ হয়েছেন মামলা থেকে বাঁচতে। কেউ বিদেশে জুয়ার টেবিলে ব্যস্ত। বিরোধী রাজনীতিবিদদের বেশিরভাগই নিজ বাড়িতে থাকেন না। বিএনপি নেতারা বিশেষ প্রয়োজনে দূতাবাসেও ঠাঁই নেন। যেমন, পিলখানার ট্র্যাজেডির দিন খুব ভোরে খালেদা জিয়া পাকিস্থান দূতাবাসে বেশ কিছুদিনের জন্য আশ্রয় নেন পুত্র তারেকের নির্দেশে। আর এখন তো বিএনপি নেতাদের দলীয় কার্যালয়ে পাওয়া না গেলে অনেকেই মার্কিন দূতাবাসে খোঁজ নেন। তাই ফখরুলের ঘরে না ফেরার ঘোষণায় নতুনত্ব নাই।

মহাযাত্রা রঙ্গ :

‘মহাযাত্রা’ বলতে ফখরুল কী বোঝাতে চেয়েছেন, এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে রঙ্গ রসিকতা চলছে। হিন্দুধর্মে তীর্থযাত্রাকেও মহাযাত্রা বলা হয়। জীবনের অন্তিম সময়ে অনেক ধর্মপ্রাণ হিন্দু তীর্থে চলে যান চিরতরে। মৃত্যুর পর শবযাত্রাকেও মহাযাত্রা বলা হয়। ফখরুল আসলে কোন ‘মহাযাত্রা’র কথা বলেছেন? তিনি কি আন্দোলনের নামে যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করবেন? নাকি ২৮শে অক্টোবরই হবে বিএনপির শবযাত্রা? তবে বিএনপির এই মহাযাত্রা কারো না কারো মরণযাত্রা হবে তা নিশ্চিত। এই মহাযাত্রার যা ঘটতে পারে- প্রথমত, ফখরুল বলছেন এর মাধ্যমে সরকারের মরণযাত্রা ঘটবে। দ্বিতীয়ত, এই যাত্রায় আসলে কিছুই হবে না। আগের কর্মসূচিগুলোর মত আরেকটি হাস্যকর যাত্রাপালার মঞ্চস্থ হবে, জাতি বিনোদন পাবে। তৃতীয়ত, এই মহাযাত্রা বিএনপির রাজনীতির কফিনে শেষ পেরেক বা মরণযাত্রা। ভুল আন্দোলনে বিএনপির চূড়ান্ত মৃত্যু ঘটবে মহাযাত্রার মাধ্যমে।

ফখরুল বলছেন আর কোনো ছাড় নয়, সরকারের পতন ঘটিয়ে তারা ঘরে ফিরবেন। তার কাছে প্রশ্ন, আন্দোলন কি ৯০ মিনিটের ফুটবল ম্যাচ, নাকি টি-২০ ক্রিকেট ম্যাচ? সময় বেঁধে দিয়ে সরকার ফেলে দেয়া যায়? রাজনীতি কি এতই সস্তা হয়ে গেছে আজকাল? আন্দোলন সম্পর্কে সবচেয়ে মূল্যবান কথা বলেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘আন্দোলন গাছের ফল নয়। আন্দোলন মুখ দিয়ে বললেই করা যায় না। আন্দোলনের জন্য জনমত সৃষ্টি করতে হয়। আন্দোলনের জন্য নিঃস্বার্থ কর্মী থাকতে হয়। ত্যাগী মানুষ দরকার। আর সর্বোপরি জনগণের সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ সমর্থন থাকা দরকার।’

বিএনপির কি এসব আছে? যদি থাকত, অনেক আগেই তাদের আন্দোলনের একটা ফলাফল দেখা যেত। আন্দোলনের প্রধান উপকরণ- জনগণই নাই তাদের সাথে।

বিএনপির মহাযাত্রায় সাফল্যের সম্ভাবনা কতটা? সফল হলে জাতি আদৌ কিছু পাবে?

বিএনপি কি এত বছরে আন্দোলনের তেমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পেরেছে? জনগণ কি তাদের আন্দোলনে একাত্ম হয়েছে? হাজার-হাজার কর্মী জড়ো করলেই সরকারের পতন ঘটবে? বিএনপির আন্দোলনের মূল দাবী- নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এই সরকার ব্যবস্থা চালু হলে জনগণের লাভ কী? তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে কি রাতারাতি চাল, ডাল, পেঁয়াজ, ডিম, আলুর দাম কমে যাবে? সেই সরকার ঢাকার যানজট দূর করবে? অনির্বাচিত এই সরকার কি অর্থপাচার-হুন্ডি বন্ধ ও খেলাপী ঋণ আদায় করতে পারবে? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর নাই।

বিএনপি নেতারা বলবেন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি ভালো নির্বাচন দিবে। দেশে জনগণের সরকার আসবে। দূর্নীতি বন্ধ হবে, বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ হবে। অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে… ইত্যাদি। সত্যি কি তা সম্ভব? ২০০১ সালের অক্টোবরেই বিএনপি-জামায়াত বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। তখন জনগণ কী পেয়েছিল? খুন-ধর্ষণ-সন্ত্রাস, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবনের অরাজকতা, দূর্নীতি, লুটপাট, বাজার সিন্ডিকেট ছাড়া কী দিয়েছিল তারা?

বিএনপি নেতারা এখন দাবী করছেন দেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ১০টি আসনও পাবে না, ক্ষমতায় যাবে বিএনপি। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এলে কী কী করবে, দেশের মানুষ চোখ বন্ধ করেই তা বলে দিতে পারে। প্রথমেই বিএনপি তাদের দুই প্রধান নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা বাতিল করে সব মামলা থেকে অব্যহতি দিতে দেশের আইন-কানুন, আদালত ও বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ১৭ বছরের ক্ষুধার্ত। ক্ষমতায় গিয়ে প্রথম দিন থেকেই লুটপাটে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

পারলে পদ্মাসেতুর পিলার, মেট্রোরেল, পারমাণবিক চুল্লি পর্যন্ত খুলে নিয়ে বেচে দিতে পারে। বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীরা দেশের সব ব্যাংক লুট নেবে, অর্থপাচার করবে। দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, এই সরকার না থাকলে আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাদের ভাগ্যের উন্নতি হবে না, বরং অবনতি হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। কারণ তারা বিএনপির আমল দেখেছে। তাই বিএনপির আন্দোলন-কর্মসূচিতে জনগণের আগ্রহ নাই। আর জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো আন্দোলন সফল হয়না, সরকারের পতন দূরে থাক।

মহাযাত্রা আন্দোলন, জাতির জন্য বিনোদন :

মহাযাত্রা কর্মসূচি কি নিছক বিনোদন? বিএনপি মূলত আন্দোলনের রোমান্টিকতায় মজেছে একদল ভাঁড়ের কারণে। বিদেশে পলাতক ইউটিউমার, ফেসবুকাররা নানারকম পলিটিক্যাল হাইপোথিসিস দিয়ে বিএনপিকে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে, সরকার পতনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে। ফেসবুক-ইউটিউবের ভিডিও থেকে আয়-রোজগার ভালো, তাই আজকাল দেশে বসেও অর্বাচীনরা জ্যোতিষীর মতো ভবিষ্যদ্বাণী করছে। এরা মির্জা ফখরুল নির্দেশিত মহা-যাত্রাপালার ভাঁড়। এই উজবুকরা বিএনপি কর্মীদের চাঙ্গা করতে নানারকম আজগুবি তথ্য দেয়।

যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার নাকি অমুক তারিখের মধ্যে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলেছেন। আর এই তথ্য আফরিন শুধুমাত্র এক ভাঁড়ের কানে কানে বলে গেছেন! গুজবসেলের এসব উদ্ভট গল্পের জোরে ফখরুলও ভাবছেন কর্মসূচির ডাক দিলেই পুজার মধ্যে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন। তাই ২৮শে অক্টোবরের ‘মহাযাত্রা’র ডাক দিলেন তিনি। এটা জাতির জন্য ১০ই ডিসেম্বরের মত যদি আরেক বিনোদন বয়ে আনে, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই আনন্দ-বিনোদনের মাঝে আসলে নাশকতার ছক আঁকা হচ্ছে কি না, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিএনপি ও তার দোসরদের অতীত ইতিহাস হলো রক্তমাখা ইতিহাস।

মহাযাত্রা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এবং বিএনপির পল্টিবাজি :

ক্ষমতাগর্ভে জন্ম নেয়া বিএনপি দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে। জল ছাড়া যেমন মাছ বাঁচে না, তেমনি ক্ষমতা ছাড়া বিএনপিও মুমুর্ষ। রোগশোকে কাতর। এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে কি বিএনপি বাঁচবে? আজ থেকে ৩০ বছর আগে বিএনপি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। ১৯৯৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে।

মূলতঃ মাগুরা উপ-নির্বাচনে নজিরবিহীন কারচুপির প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়টি সামনে আসে। মাগুরার পর মিরপুরের উপ-নির্বাচন কারচুপি সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে। সেসময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একে ‘সাময়িক ব্যবস্থা’ হিসেবে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ তার মূল প্রস্তাবে তিন মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল বিএনপি।

জাতীয় সংসদে তৎকালীন সংসদ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছিলেন- ‘একমাত্র পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।’ তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও দার্শনিক বক্তব্য করেছিলেন বিএনপির নেতা এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান।

‘৯৫ সালের অক্টোবরে জাতীয় সংসদে তিনি বলেছিলেন- “কী আশ্চর্য কথা, আমাদেরকে জনগণ ভোট দেয় ৫ বছর দেশ চালানোর জন্য। ৫ বছর আমরা দেশ চালাইতে পারি, কিন্তু আমরা নির্বাচন করতে পারব না! তাহলে এই সংসদে আমরা ৩শ জন জনপ্রতিনিধি চুর, আমরা শয়তান। ৫ বছর দেশ চালাই আমরা শয়তানরা। আর ৯০ দিন দেশ চালাইব ফিরিস্তারা! কী আজব কথা মাননীয় স্পীকার! আমরা শয়তান, আর ৩শ শয়তানরে নির্বাচন করবে ১০ জন ফিরিস্তা? এই ফিরিস্তারা কোহান থেকে পয়দা হইল, এই ফিরিস্তারা কারা? মাননীয় স্পীকার এই সিস্টেমে অফিসিয়ালি রাজনীতিবীদদের চুর এবং ডেভিল বানানো হইছে, এটা হইতে পারে না। ১০ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টামন্ডলী থাকবে নিরপেক্ষ ব্যক্তি। তারা কোন ফেরেস্তা?”

মহাযাত্রার নামে তত্ত্বাবধায়ক ভূতের ঘাড়ে চেপে ক্ষমতার দখল চায় বিএনপি :

বিএনপির বিরোধিতার পরেও তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের মার্চে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যুক্ত হয় সংবিধানে। শুরু থেকে এই ব্যবস্থা নিজেদের পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় অনেক ফাঁকফোকর ছিলো। যা দিয়েই একে অকার্যকর করা হয়। ‘৯৬-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অকার্যকরের চেষ্টা করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও কুখ্যাত রাজাকার আবদুর রহমান বিশ্বাস। তিনি সেনাবাহিনীকে বিএনপির পক্ষে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। ফলে সেনাবাহিনীতে শুরু হয় বিদ্রোহ।

রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে না জানিয়েই সেনাপ্রধান জেনারেল নাসিমকে বরখাস্ত করেন। ফলে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্টি হয় অনিশ্চয়তা। সেসময় প্রধান উপদেষ্টা বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি সামাল না দিলে দেশে ক্যু ঘটত এবং আরেকটি সামরিক শাসনের অধ্যায় চালু হতো। আগে থেকেই সবাই জানতো লতিফুর রহমান হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি তার সাথে আঁতাত করে। দায়িত্ব নিয়েই তিনি এমন পদক্ষেপ নেন, যাতে পাতানো ছকে নির্বাচন হয় এবং জয় পায় বিএনপি। বিএনপি-জামায়াত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সেসব ফাঁকফোকর পুরোপুরি ব্যবহার করেই ক্ষমতায় যেতে সক্ষম হয়।

ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে উদ্যোগ নেয় ফাঁকফোকর বন্ধ করতে। সেজন্য ‘একান্ত বিশ্বস্ত ও অনুগত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন জরুরি হয়। প্রধান বিচারপতি পদে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হয় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। যেন সাবেক বিএনপি নেতা কে.এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া যায়। দেশব্যাপী তীব্র আন্দোলনের মুখে কে.এম হাসান তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হতে অস্বীকৃতি জানালে বিএনপি তার গৃহভূত্য রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করে। এতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার উদ্দেশ্যটাই ব্যাহত হয়। জনমনে এই ব্যবস্থা অগ্রহযোগ্য বলে প্রতিষ্ঠা পায়।

এই সরকার ব্যবস্থা জনগণ আর চায় না- বুঝতে পেরে ২০০৭ সালে বিরাজনীতিকরণের প্রবক্তা সুশীলরা গর্ত থেকে মাথাচাড়া দিয়ে বেরিয়ে আসে। ১১ই জানুয়ারি চরম রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে সেনাবাহিনীর সমর্থনে তারা ক্ষমতা দখল করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জিয়া-এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখলের মত ১/১১ সরকারের ক্ষমতা গ্রহণও অসাংবিধানিক। ২ বছর কোনো ম্যান্ডেট ছাড়া সেই দুষ্টচক্র এদেশে রাজত্ব করে। প্রমাণিত হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশের জন্য একটি ভয়ঙ্কর ব্যবস্থা। জনগণের অধিকার হরণের পথ উন্মুক্ত করে দেয় সুযোগ সন্ধানীদের।

বিএনপি সেই বাতিল পদ্ধতি এবং গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত- তত্ত্বাবধায়ক ভূতটিকে গোরস্থান থেকে তুলে আনতে চায় কেন? আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠাতে? সেই ভূতের ঘাড়ে চেপে ক্ষমতা দখলের জন্য? ২০০৭ সালের অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, অনির্বাচিত সরকার সকল রাজনৈতিক দলের জন্যই ক্ষতিকর। এটি মূলত গর্তে লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর পিশাচদের হাতে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রক্ষমতা তুলে দিয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে ধ্বংস করার সুযোগ করে দেয়া। আরেকটি ১/১১ ঘটলে দেশ পুরোপুরি রাজনীতিশূন্য হয়ে যাবে। তখন বিএনপিরও অস্তিত্ব থাকবে না। বিএনপি কি আসলে নিজেদেরই ‘শবযাত্রা’ দেখতে চায়?

সর্বশেষ - সকল নিউজ