logo
Sunday , 22 October 2023
  1. সকল নিউজ

সম্ভাবনাময় দুগ্ধশিল্প

প্রতিবেদক
admin
October 22, 2023 4:19 pm

ডেইরি খাতের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে বাজারজাত করণের ওপর গুরুত্বারোপ করা দরকার। বিশ্ববাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবে এই দাম বৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি শিল্প হলো দুগ্ধশিল্প। যা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির একটি বড় অংশ। পুষ্টিরও অন্যতম বড় উৎস হলো দুধ। দুধে থাকা ল্যাকটোজ মানুষের দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বাড়াতে সহায়ক। গরুর দুধ নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। গরুর দুধে আছে অ্যামাইনো এসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন-ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, কোবাল্ট, কপার, জিঙ্ক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দুধ উৎপাদনের জন্য খ্যাত। আমাদের দেশে দুধের মূল উৎস হলো গাভী। এ ছাড়াও ছাগল, মহিষ থেকেও দুধ আহরণ করা হয়। দেশের জনসংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যার পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক গড়ে ২৫০ মিলিলিটার দুধ প্রয়োজন। বাংলাদেশের মানুষ ২০৮ মিলিলিটার পাচ্ছে। দেশে এখন উৎপাদন ঘাটতি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার টন। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে দুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ভোলা জেলা এবং দ্বিতীয় বৃহৎ দুগ্ধ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা। পাবনায় বছরে সাড়ে চার লাখ টন দুধ উৎপাদন হয়। পাবনায় ডেইরি খামারি রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার। প্রতিদিনের পুষ্টির গুরুত্বপূর্ণ অংশ পূরণ করে দুধ। তা ছাড়া বাঙালির রসনা বিলাসের সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবেই দুধের একটি সম্পর্ক রয়েছে। পিঠা, পুলির আয়োজনে দুধের বিকল্প নেই।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের অভ্যন্তরে দুধের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুধ উৎপাদনও গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন নতুন জাতের গরু পালনের ফলে প্রসারিত হয়েছে দেশের দুগ্ধশিল্প। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৭০ লাখ টন। বহু চ্যালেঞ্জ পার করে দুগ্ধশিল্প বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৫০ লাখ টন, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৪ দশমিক ৬০ লাখ টন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫০ দশমিক ৭০ লাখ টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬০ দশমিক ৯২ লাখ টন, ২০১৫-১৬ তে ৭২ দশমিক ৭৫ লাখ টন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯৪ দশমিক ১ লাখ টন, ২০১৮-১৯ এ ৯৯ দশমিক ২৩ লাখ টন এবং ২০১৯-২০ এ এক কোটি ছয় দশমিক ৮০ লাখ টন দুধ উৎপাদন হয়। এক তথ্যে দেখা যায়, দেশে দুধের বার্ষিক চাহিদা ১৫২ লাখ মেট্রিক টন, যার বিপরীতে উৎপাদন ১০৬ দশমিক ৮ লাখ মেট্রিক টন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩১ সালে ২০০ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০৪১ সালে ৩০০ লাখ মেট্রিক টন নির্ধারিত আছে। অর্থাৎ দেশ দুধ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে। কিন্তু বর্তমান সময়ে বাজারে দুধের দামের সঙ্গে গাভী পরিচালনা ব্যয়ের পার্থক্য বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ক্ষুদ্র খামারি বা যাদের একটি, দুটি গাভী রয়েছে তারা উৎসাহ হারাচ্ছে। এ ছাড়া বাজারজাত করণের অপর্যাপ্ত সুবিধার কারণেও দুধের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন গো-খামারিরা। মূলত বাড়তি দামই এখন মাথাব্যথার কারণ। ডেইরি খাতের শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। সেক্ষেত্রে সঠিকভাবে বাজারজাত করণের ওপর গুরুত্বারোপ করা দরকার।

বিশ্ববাজারে দুগ্ধপণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রভাবে এই দাম বৃদ্ধির ঘটনা ঘটছে। ফলে খামারিদের লোকসানও বাড়ছে এবং খামারের সংখ্যা কমছে। গ্লোবাল ডেইরি ট্রেডের চলতি মাসের প্রথম নিলামে দুগ্ধপণ্যের বৈশ্বিক দাম ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি টনের গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১০৪ ডলারে। এ নিলামে সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ৪২ হাজার ১৫ টন দুগ্ধপণ্য। বিশ্ব অর্থনীতির চলমান সংকটের মধ্যে দুগ্ধপণ্য উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। শীর্ষ উৎপাদন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো এক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। দুগ্ধপণ্যের শীর্ষ ক্রেতা হলো এশিয়ার দেশগুলো।

এর মধ্যে ননিযুক্ত ও ননিবিহীন গুঁড়া দুধ ও মাখনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা উত্তর এশিয়ার দেশগুলো। আমাদের দেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য গো-খামার। পরিকল্পিত খামার ছাড়াও গরু পালন করে অসংখ্য নারী-পুরুষ। গাভী পালন করে এবং দুধ বিক্রি করে গ্রামের অনেকেই আজ স্বাবলম্বী। এক তথ্যে দেখা যায়, সব মিলিয়ে সারা দেশে দুধ দেয় এমন গরু, মহিষ ও ছাগল আছে ১৮ লাখের মতো। সেখান থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে দুধ উৎপাদন হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশে^ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাদ যায়নি গো-খাদ্য। গো-খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়েছে দুগ্ধশিল্পে।

বাজারে দুধের দাম না বাড়ায় খামারিদের জন্য গরু পালন লোকসানে পরিণত হচ্ছে। বিশেষভাবে ছোট খামারিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং অনেকেই গরু বিক্রি করছেন। যা এই শিল্পের জন্য বিশেষভাবে হুমকিস্বরূপ। স্বাভাবিকভাবেই গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ে দুধ উৎপাদনে এবং ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হয়। দুগ্ধশিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনার মধ্যে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি এ পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত বছর বিশ্বের দুগ্ধ দিবসে বাকৃবি’র গবেষণায় জানা যায়, গো-খাদ্য হিসেবে সর্বাধিক ব্যবহৃত খাদ্য উপাদান হলো গমের ভূষি। গত এক বছরে গমের ভূষির দাম ৬২ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গমের ভূষির পাশাপাশি দাম বাড়ছে ভুট্টা, সরিষার খৈল, ধানের কুড়া এবং সয়াবিনের। ভুট্টা ৯০ শতাংশ, সরিষার খৈল ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ, ধানের কুড়া ৩০ দশমিক ৩ শতাংশ, সয়াবিন মিল ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এই মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে দুগ্ধশিল্পে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ