logo
Monday , 9 October 2023
  1. সকল নিউজ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে যশোর

প্রতিবেদক
admin
October 9, 2023 4:15 pm

সারাদেশে বাড়ছে রেলপথ। নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন অঞ্চল। স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে ট্রেন যাবে যশোর। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে এই রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথটি আগামীকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই রেলপথের মাধ্যমে নতুন করে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল এই চারটি জেলা রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এবং খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এই রেলপথ দুটি আগামী নভেম্বরে চালু হচ্ছে।

আগামী ৯ নভেম্বর খুলনা-মোংলা ও ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা নতুন করে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রাম নতুন করে যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলায় রেললাইন সম্প্রসারণে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চল রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। এর মধ্যে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশটি আগামী ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া নভেম্বরে আরও দুই প্রকল্প উদ্বোধন করা হবে। এগুলো হলো আগামী ৯ অক্টোবর খুলনা-মোংলা ও ১২ নভেম্বর দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। এটা দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হবে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, নতুন এই রেলপথ নির্মাণের মাধ্যমে সারাদেশের রেল নেটওয়ার্ক তিন হাজার ২১৭ কিলোমিটারে উন্নীত হবে, যা বর্তমানে রয়েছে মোট দুই হাজার ৯৫৬ কিলোমিটার। এই রেলপথ চালুর মাধ্যমে ২৬২ কিলোমিটার রুট বৃদ্ধি পাবে। আগামী ১০ অক্টোবর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ চালু হচ্ছে। এ ছাড়া নভেম্বরে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ এবং খুলনা থেকে মোংলা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার নতুন এই রেলপথ যুক্ত হবে রেল নেটওয়ার্কে। রেলপথ চালুর ফলে রেলওয়ের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আরেকটি মাইলফলক বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প ॥ বর্তমান সরকারের যোগাযোগ অবকাঠামোর একটি মেগাপ্রকল্প পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৩ শতাংশ। তবে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এই অংশে ঢাকা-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন বসানোর পুরো কাজ শেষ হয়েছে। আগামীকাল ১০ অক্টোবর পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে নতুন চারটি জেলা- মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হবে। পাশাপাশি বিদ্যমান ভাঙ্গা-পাচুরিয়া রাজবাড়ী রেলপথটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ এই রেলপথের সুবিধা পাবে। এ ছাড়া যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণকাজ শেষে ঢাকা-কলকাতা রুটের মৈত্রী এক্সপ্রেসসহ একাধিক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ট্রেন এই রুটে চলাচল করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ ॥ রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে পর্যটননগরী কক্সবাজারের রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হয়েছে। এই রেলপথটি আগামী ১২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রেলপথটিও আন্তর্জাতিক রেলওয়ে রুট ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের অন্তর্ভুক্ত। তাই দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার কারণে রামু থেকে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রকল্পে ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পটি দুটি অংশে ভাগ করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে দোহাজারী-চকরিয়া পর্যন্ত প্রথম অংশে যৌথভাবে কাজ করছে চীনের সিআরইসি ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। এ ছাড়া চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের কাজ যৌথভাবে করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের সিসিইসিসি ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। প্রকল্পটির আওতায় দোহাজারী থেকে রামু ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ভ্রমণ করতে পারবে পর্যটকরা।

খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প ॥ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে পর্যটক আকর্ষণ ও বন্দরের পণ্য পরিবহন আরও সহজ করতে ৭৩ বছর পর রেলপথ যুক্ত হচ্ছে মোংলা সমুদ্রবন্দরে। এ জন্য খুলনা-মোংলা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৯ নভেম্বর এই রেলপথটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রেলপথ চালু হলে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন করে। দুই দফা ডিপিপি সংশোধনের পর প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় ঋণ রয়েছে দুই হাজার ৯৪৮ কোটি এক লাখ ৮৪ হাজার টাকা। বাকি এক হাজার ৩১২ কোটি ৮৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকা সরকারি ফান্ড থেকে ব্যয় হয়। খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পটি তিনটি ভাগে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্যাকেজ-১ রেললাইন নির্মাণ, প্যাকেজ-২ রূপসা নদীর ওপর রেল সেতু, প্যাকেজ-৩ টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং সিস্টেম। প্রকল্পের আওতায় লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। রূপসা নদীর ওপর নির্মাণ করা পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রূপসা রেল সেতু। এই সেতুর কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘মোংলা সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য খুলনা থেকে বাগেরটহাটের মোংলা পোর্ট পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। বর্তমানে প্রকল্পের নির্মাণ অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। এই রেলপথের মাধ্যমে খুলণার পাঁচটি উপজেলা ও বাগেরহাটের চারটি উপজেলায় নতুন রেললাইন যুক্ত হবে।’ আগামী ৯ নভেম্বর প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা রয়েছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ - সকল নিউজ