logo
Sunday , 17 September 2023
  1. সকল নিউজ

কার স্বার্থ দেখছে বিটিআরসি

প্রতিবেদক
admin
September 17, 2023 10:01 am

দেশে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ১১ কোটি ৮৮ লাখ প্রায়। এর মধ্যে ৬৯ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য তিন দিনের প্যাকেজ কেনেন। এই জনপ্রিয় ডেটা প্যাক বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ১৫ দিন মেয়াদের প্যাকেজও থাকছে না। পাশাপাশি প্যাকেজের ধরন ও প্রমোশনাল এসএমএসের সংখ্যা কমানো হয়েছে। গত ৩ সেপ্টেম্বর মোবাইল অপারেটরদের এ নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে অপারেটরদের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের ডেটা প্যাক কেনে। এদের মধ্যে বড় অংশই কেনে স্বল্প মেয়াদের প্যাকেজ। বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট ছোট ডেটা প্যাকের চাহিদা বেশি। প্রবাসী আত্মীয়র সঙ্গে যোগাযোগ করতে, মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করতে তিন দিন মেয়াদের ডেটা কেনেন অধিকাংশ গ্রাহক। তারা বলছেন, বিটিআরসির নতুন সিদ্ধান্ত গ্রাহকবান্ধব নয়। এই সিদ্ধান্ত দেশের ইন্টারনেটের ব্যবহার কমিয়ে দেবে বলে আশঙ্কা করছে মোবাইল কোম্পানিগুলো। নিম্ন আয়ের মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করবে। বাধাগ্রস্ত হবে সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা।

সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে মোবাইল অপারেটরগুলো ৩, ৭, ১৫, ৩০ দিন ও আনলমিটেড মেয়াদের ৯৫ ধরনের প্যাকেজ ছাড়তে পারে। নতুন নির্দেশনা অনুসারে প্যাকেজের মেয়াদ হবে ৭ দিন, ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড। সব মিলিয়ে অপারেটরপ্রতি প্যাকেজের সংখ্যা হবে সর্বোচ্চ ৪০টি। বর্তমানে রবির ডেটা প্যাকেজ রয়েছে ৯৫ ধরনের। গ্রামীণফোনের ৮০টি, বাংলালিংকের ৬৫ এবং টেলিটকের ৬০টি ইন্টারনেট প্যাকেজ আছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো দিনে তিনটি প্রমোশনাল এসএমএস দিতে পারবে, আগে ছিল চারটি। এখন সাত দিনের প্যাক ব্যবহার করেন মাত্র ১৬.৮৪ শতাংশ গ্রাহক আর ৩০ দিনের প্যাক ব্যবহার করেন ১০.১১ শতাংশ। ব্যবহারকারী অল্প হলেও এই প্যাক চালু রাখছে বিটিআরসি। আর গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় সাশ্রয়ী প্যাক বন্ধ করে দিচ্ছে। যা স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলেন মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সমকালকে বলেন, মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজের সংখ্যা এত বেশি, যা গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে। সংখ্যা কমিয়ে আনায় গ্রাহকরা সহজেই নিজের পছন্দের ডেটা প্যাকেজ কিনতে পারবেন।

২০২২ সালের মার্চে কয়েকশ ধরনের প্যাকেজ থেকে অপারেটরদের ডেটা প্যাকের সংখ্যা ৯৫টিতে নামিয়ে আনে বিটিআরসি। এরপরও ডেটা প্যাকেজ নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগ যাচাই করতে বিটিআরসি একটি কমিটি করে। সেই কমিটি গত মে মাসে মোবাইল অপারেটরগুলোর কাছ থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল মাসের সব ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ ও গ্রাহকদের সেবা তথ্য সংগ্রহ করে। পরে মে-জুন মাসে গ্রাহক জরিপ চালায়। গত ৩০ মে মোবাইল অপারেটর, গ্রাহক, টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, আইনজীবীসহ খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে। সবার মতামত পর্যালোচনা করে গত ৩ সেপ্টেম্বর নতুন নির্দেশিকা জারি করে বিটিআরসি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে জরিপের ওপর ভিত্তি করে বিটিআরসি এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে মূলত অংশ নিয়েছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা। প্রান্তিক মানুষের প্রতিনিধিত্ব এতে ছিল না। স্বল্প আয়ের এসব মানুষ তিন দিনের প্যাকেজ বেশি ব্যবহার করে। এ প্যাকেজ বন্ধ হলে গ্রাহকদের খরচ বেড়ে যাবে। তাদের কমপক্ষে সাত দিনের প্যাকেজ কিনতে হবে, যার দাম বেশি। এ কারণে সার্বিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার কমে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

বিটিআরসির জরিপ অনুযায়ী, ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ গ্রাহক ৪০ থেকে ৫০টি প্যাকেজের পক্ষে। অন্যদিকে ৭১ থেকে ৮৫টি প্যাকেজের পক্ষে ছিলেন ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ গ্রাহক।

গ্রামীণফোনের মুখপাত্র হোসেন সাদাত বলেন, গ্রামীণফোন দেশের সব আইনকানুন মেনে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপ সম্পর্কে অবগত এবং বর্তমানে এটি বিশ্লেষণ করছি।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, বর্তমানে অপারেটরভেদে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্রাহক তিন দিন বা এরও কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন। এ অবস্থায় প্যাকেজ সংখ্যা ৪০-এ বেঁধে দেওয়া হলে তা প্রায় ১২ কোটি গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্যাকেজ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ন করবে। আমরা মনে করি, গ্রাহকের নিজস্ব চাহিদা ও ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে প্যাকেজ সংখ্যা নির্ধারণে কোনো সীমা থাকা উচিত নয়।

সর্বশেষ - সকল নিউজ