logo
Saturday , 9 September 2023
  1. সকল নিউজ

তফসিলের আগেই চালু হচ্ছে বড় প্রকল্পগুলো

প্রতিবেদক
admin
September 9, 2023 1:19 pm

আগামী জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অক্টোবরের শেষ কিংবা নভেম্বরের শুরুতে তফসিল ঘোষণা করা হবে। কিন্তু তফসিলের আগেই দু-মাসের মধ্যে প্রায় এক ডজন বড় প্রকল্প খুলে দেওয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ প্রকল্পই যোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট।

গত ২ সেপ্টেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি অংশ খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুটের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করবেন। ২০ অক্টোবর এমআরটি লাইন-৬ (মেট্রোরেল) এর আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ খুলে দেওয়া হবে। ২২ অক্টোবর ১৪০টি সেতু ও ১২টি ওভারপাস, ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) এবং সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে তৈরি করা বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করা হবে। অন্য বড় প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প ৭ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হবে। দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধনের তারিখ ঠিক হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে আখাউড়া-আগরতলা ও খুলনা-মোংলা রেললাইন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করা হবে ৭ অক্টোবর। বিআরটি প্রকল্পও উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে।

ভোটের আগে বড় প্রকল্প চালু করাকে নির্বাচনী প্রচার হিসেবে মনে করছেন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় প্রকল্পগুলো উদ্বোধন উপলক্ষে বড় ধরণের গণজমায়েত করবে ক্ষমতাসীন দলটি। যা জনগণের মধ্যে উন্নয়নের বার্তা ছড়িয়ে দিতে সহায়ক হবে।

উদ্বোধন হলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
গত ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষে শেরেবাংলা নগরের পুরনো বাণিজ্য মেলা মাঠে সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।

৩ সেপ্টেম্বর সকাল ছয়টা থেকে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হয় এই উড়ালসড়ক। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এই পথের মোট দৈর্ঘ্য ২২ দশমিক ৫ কিলোমিটার। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে র্যাম্প রয়েছে ১৫টি। র্যাম্পগুলো হচ্ছে- বিমানবন্দরে ২টি, কুড়িলে ৩টি, বনানীতে ৪টি, মহাখালীতে ৩টি, বিজয় সরণিতে ২টি এবং ফার্মগেটে ১টি। ১৫টির মধ্যে ১৩টি র্যাম্প প্রাথমিকভাবে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। এই প্রকল্পের নির্মাণকাল ধরা হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা।

পুরোদমে খুলছে মেট্রোরেল
দেশের প্রথম মেট্রোরেল লাইন এমআরটি ৬ পুরোপুরি খুলছে আগামী মাসে। বর্তমানে উত্তরার উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। আর পরীক্ষামূলকভাবে যাত্রী ছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। তবে আগামী ২০ অক্টোবর মেট্রোরেল আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন। পরদিন থেকেই যাত্রী চলাচল শুরু হয় দেশের প্রথম এই বৈদ্যুতিক ট্রেনে। এখন আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ চালুর অপেক্ষায় আছে ঢাকাবাসী।

দুয়ার খুলছে থার্ড টার্মিনালের
আগামী ৭ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন হবে। তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৮২ শতাংশ শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করার পরিকল্পনা আছে।

আংশিকভাবে উদ্বোধন হলেও যাত্রীরা পুরোপুরিভাবে এই তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারবেন না। পুরো নির্মাণকাজ আগামী বছরের শেষ দিকে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক সংস্থা জাইকা। অবশিষ্ট টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে।

খুলছে কর্ণফুলী টানেল
চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব টানেল আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। কর্ণফুলীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেনবিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এছাড়া মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ফ্লাইওভার থাকবে।

২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকা হয়।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। সব কাজ এখনো শেষ হয়নি। কিন্তু নির্বাচনের আগে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালাতে তড়িঘড়ি করে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর। এরই মধ্যে রেলের দুই অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের কাছে চিঠি দিয়ে একটি ট্রেন চাওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলক চলাচলের আগে ৬ সেপ্টেম্বর ট্রেনটি প্রস্তুত রাখা হবে। এরই মধ্যে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময়ও চেয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের তালিকায় প্রায় তিন হাজার অতিথি থাকছেন বলে জানা গেছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ
সরকারের আরেকটি ফাস্টট্র্যাক প্রকল্প চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ। চলতি মাসের শেষের দিকে রেলপথটি উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে রেলে যাতায়াত করা যাবে। রেলপথটির নির্মাণকাজ দুটি অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে দোহাজারী থেকে চকরিয়া অংশের কাজ করছে সিআরইসি ও তমা কনস্ট্রাকশন। আর চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। ২০১০-এর জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ আছে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত।

তবে সম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় এ রেলপথটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে রেলপথটি পরিকল্পনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বরে উদ্বোধন করা নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংশয়।

আরও দুই রেলপথ
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের সার্বিকভাবে ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পাঁচটি ব্রিজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় খুলনা-মোংলা রেললাইনের উদ্বোধন হতে পারে বলে জানা গেছে। আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্পের ৮৯ শতাংশ কাজ শেষ। রেললাইন বসানোর কাজ প্রায় শেষ। ভবন নির্মাণের ফিনিশিংয়ের কাজ কিছু বাকি আছে। তবে সেপ্টেম্বরের আগেই কাজ শেষ হয়ে যাবে দাবি প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের। আগামী সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই রেললাইনের উদ্বোধন করতে পারেন।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে এ প্রকল্পগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে কিনা- জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তেজগাঁও পর্যন্ত হচ্ছে। কাজ শেষ হয়েছে, আমরা মানুষকে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি। আমরা কী এগুলো ফেলে রাখবো। একটা ফেইজ হয়ে গেছে, চালু করে দিয়েছি। মেট্রোরেল এখন মতিঝিল পর্যন্ত আসবে। এটা তো আরও বিরাট অগ্রগতি, ইলেকশনের সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী টানেল আমাদের শেষ হয়ে গেছে। আমরা রেখে দেব? ১৪০টি সেতুও আমাদের হয়ে গেছে, আমরা তো কাজ করে ফেলেছি। এগুলো তো ভিত্তিপ্রস্তর নয়।’

আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এই প্রকল্পগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের সক্ষমতার উদাহরণ। এগুলো জাতির জন্য উৎসবের উপলক্ষ তৈরি করছে। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিশাল সমাবেশ করে এই উৎসব উদযাপন করব।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘এসব প্রকল্পের মাধ্যমে জনগণকে আকৃষ্ট করবে তারা। কারণ এত বড় প্রকল্প বাংলাদেশে আগে কখনো ছিল না। তবে অনেক প্রকল্পের কাজ এখনো বাকি, ফলে পুরোপুরি সুবিধা পেতে আরও কিছু সময় লাগবে।’

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত