logo
Monday , 28 August 2023
  1. সকল নিউজ

সর্বজনীন পেনশন স্কিম : সামাজিক সুরক্ষার নিশ্চয়তা

প্রতিবেদক
admin
August 28, 2023 9:33 am

চালু হলো বহুল প্রতীক্ষিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম। সামাজিক সুরক্ষার নিশ্চিয়তা প্রদানে সরকারের ২০০৮ সালে দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হলো চলতি মাসের ১৭ আগস্ট। দেশের সর্বসাধারণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এটি বেশ ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। সমাজের সর্বস্তরের সামগ্রিক উন্নয়ন ছাড়া একটি দেশের উন্নতি কখনো সম্ভব নয়। আর সর্বজনীন পেনশন স্কিম এমনই একটি পদক্ষেপ যা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে তার সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা প্রদান করবে। আপাতত শ্রমবাজারের ১০ কোটি মানুষকে অন্তর্ভক্ত করতে  চারটি আলাদা স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন-ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়েছে। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা।

এর মধ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য প্রবাস স্কিম; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি; রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সমতা স্কিম। তবে বেকারদের জন্য এখনো কোনো স্কিম চালু হয়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৮ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যমতে, দেশে ৪ কোটি ৮২ লাখ প্রকৃত বেকার, যাঁদের স্থায়ী কর্ম ও সঞ্চয়ের মতো আয় নেই। স্কিমে আরেকটি অসামঞ্জস্য হচ্ছে এককালীন আনুতোষিক বা গ্র্যাচুইটি না থাকা। বেসরকারি বা শ্রমনির্ভর দীর্ঘ চাকরিজীবনের পরে এককালীন বড় একটা অঙ্ক না পেলে মানুষের নিজস্ব আবাসনের মতো বড় স্বপ্নগুলো অপূর্ণই থাকবে, এ বিষয়ে আরও বিবেচনা করা প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি পেনশনব্যবস্থা বৈষম্যহীন করা দরকার।

সংক্ষেপে এই কার্যক্রমে প্রবেশের উপায় : সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য ‘ইউপেনশন’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। আগ্রহীদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধনের সময় কয়েকটি ধাপ মেনে চলতে হবে। প্রথমে ‘ইউপেনশন’ ওয়েবসাইটে ঢুকতে হবে। এরপর ‘পেনশনার রেজিস্ট্রেশন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে। একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে। প্রত্যয়ন অংশ সাবধানে পূরণ করতে হবে। কোনো ভুল তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরত যোগ্য হবে না। প্রত্যয়ন পাতার নিচে ‘আমি সম্মত আছি’ অপশনে ক্লিক করলেই এই ধাপ শেষ হবে।
আবেদনকারীর বার্ষিক আয়ের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে এবং নিজের পেশা, বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম সিলেক্ট করতে হবে। শেষে ‘স্কিম তথ্য’ নামে আরেকটি পেজ আসবে। এখানে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের সময় বেছে নিতে হবে।  চাঁদা পরিশোধের জন্য মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক তিনটি অপশন থাকবে। এবার দিতে হবে ব্যাংক তথ্য।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে গ্রাহকদের প্রিমিয়াম ট্রেজারি বিল, আর্থিকভাবে শক্তিশালী বাণিজ্যিক ব্যাংক ও লাভজনক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে ন্যাশনাল পেনশন অথরিটি (এনপিএ)। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক সব ঋণের ওপর থেকে সীমা তুলে নিয়েছে, তাই সুনাম থাকা ব্যাংকগুলোর ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করলে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে। পাশাপাশি লাভজনক প্রকল্পগুলোয় বিনিয়োগ করা হলে সেখান থেকে ভালো পরিমাণে মুনাফা আসতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’র আওতায় কিস্তির মেয়াদ ২ হাজার, ৩ হাজার ও ৫ হাজার টাকা। বেসরকারি খাত তাদের কর্মীদের মাসিক কিস্তির ৫০ শতাংশ দেবেন।এনপিএ শ্রম আইন সংশোধন করে বেসরকারি খাতের নিয়োগকারীদের জন্য ‘প্রগতি’তে কর্মীদের তালিকাভুক্তি বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। ‘সমতা’ প্যাকেজটি অতিদরিদ্রদের জন্য সাজানো হয়েছে। এর মাসিক কিস্তি ১ হাজার টাকা। সরকার ৫০০ টাকা দেবে এবং বাকি ৫০০ টাকা দেবেন পেনশনভোগী। প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ‘প্রবাস’ স্কিমে মাসিক কিস্তির পরিমাণ থাকবে ৫ হাজার, ৭ হাজার ৫০০ ও ১০ হাজার টাকা। তাদের বৈদেশিক মুদ্রায় কিস্তি জমা দিতে হবে।
অন্যান্য দেশের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা : প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে জাতীয় পেনশনব্যবস্থা (এনপিএস) চালু করা হয়। শুরুতে সামরিক বিভাগ ছাড়া শুধু কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মচারীদের জন্য চালু করা হয় এটি। গ্রাহক ও নিয়োগকর্তা বা সরকার নির্দিষ্ট পরিমাণে চাঁদা দেয় এনপিএসে, যা পরে লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হয়। এতে ৬০ বছর বয়সে অবসরে যাওয়ার সময় ৬০ শতাংশ অর্থ নগদে তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। বাকি ৪০ শতাংশ অর্থের পেনশন প্রদানের সুযোগ তৈরি করা হয়। ভারত ২০০৯ সালের ১ মে দেশের ভেতরে ও বাইরে থাকা ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী সব নাগরিকের জন্য পেনশনব্যবস্থা উন্মুক্ত করে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও পেনশন-সুবিধায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা রাখা হয়।চীনে মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ কর্মক্ষম। দেশটিতে তিন ধরনের পেনশনব্যবস্থা চালু রয়েছে। শহরে কর্মরতদের জন্য আরবান পেনশন সিস্টেম (ইউপিএস), সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সিভিল ও পাবলিক সার্ভিস পেনশন সিস্টেম (সিপিএসপিএস) এবং গ্রামে বেসরকারি চাকরিতে নিয়োজিতদের জন্য রুরাল পেনশন সিস্টেম (আরপিএস) চালু রয়েছে দেশটিতে। ইউপিএস বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক-দুই ধরনেরই রয়েছে। এদিকে সরকারি ক্ষেত্রে ডিবি এবং গ্রাম ও শহুরেদের ক্ষেত্রে ডিসি পদ্ধতি চালু রয়েছে চীনে।
যুক্তরাজ্যে চার ধরনের পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর। দেশটিতে রাষ্ট্রীয়, পেশাগত, ব্যক্তিগত ও আনফান্ডেড-এই চার ধরনের পেনশনব্যবস্থা চালু রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পেনশনেও রয়েছে রাষ্ট্রীয় অবসর ভাতা, সম্পূরক পেনশন ও পেনশন ক্রেডিট নামক তিনটি অংশ। রাষ্ট্রীয় অবসর ভাতার আওতায় যাঁদের বার্ষিক আয় ৯ হাজার ৫০০ পাউন্ডের বেশি, তাঁদের বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হয় জাতীয় বিমায়। যাঁদের আয় রাষ্ট্রনির্ধারিত নিম্ন আয়সীমার নিচে তাঁদের দেওয়া হয় সম্পূরক পেনশন। এটা ঐচ্ছিক। উন্নত দেশ হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে বাজেট থেকে সবাইকে পেনশন দেওয়া হয়। জাপান, হংকং, কোরিয়া ও তাইওয়ানের পরিস্থিতিও উন্নত দেশগুলোর মতোই। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম পেনশন সংস্কার করছে। ফিলিপাইন, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া অংশগ্রহণমূলক পেনশন পদ্ধতি শুরু করেছে।বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম সপ্তাহেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাঁদা পরিশোধ করেছেন সাড়ে ৮ হাজারের বেশি মানুষ। তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। প্রতিদিনই বাড়ছে এই সংখ্যা।
বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে বলেই আশা করা যায়। স্কিম স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হওয়া দরকার। এই মহৎ কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজন দক্ষ জনবল। অতীতে আমরা আর্থিক খাতে লক্ষ্য করেছি নানা রকম দুর্নীতি । যা মানুষের মধ্যে চরম হতাশা তৈরি করেছে। তাই জনকল্যাণে পরিচালিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম স্বচ্ছতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত

মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া ২ গোলা পড়লো বাংলাদেশে

তুরাগ তীরে দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত আজ

মানুষের মধ্যে টিকা নিয়ে দ্বিধা কেটে গেছে: প্রধানমন্ত্রী

নারীদেরকে বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা লাভের সুযোগ দিতে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

আগস্ট মাস এলেই বিএনপির ঘাতক চরিত্র বেপরোয়া হয়ে ওঠে: কাদের

জিয়াউর রহমানই বাঙালি জাতিকে বিভক্ত করেছেন: কৃষিমন্ত্রী

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ : বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্কে হবে নতুন দিগন্তের সূচনা

মোংলা থেকে খুলনা রুটে রেল চলবে অক্টোবরের শেষে

আইএমএফের পূর্বাভাস এ বছর দেশের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ শতাংশ

নির্মাণ ব্যয়ের চেয়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বেশি টোল আদায়