logo
Wednesday , 23 August 2023
  1. সকল নিউজ

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান : নতুন শর্তে বেড়েছে বিদেশিদের আগ্রহ

প্রতিবেদক
admin
August 23, 2023 9:30 am

অবশেষে দেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিয়েছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ।মূলত বর্তমান জা্বলানি সংকট, স্থলভাগের গ্যাসে মজুত হ্রাস ও উচ্চ ডলার মূল্যে আমদানি অনিশ্চয়তায় সমুদ্রের সম্পদ ব্যবহারে সরকারকে আগ্রহী করে তুলেছে। তাই বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চুক্তির শর্ত পরিবর্তন করে নতুন পিএসসি-২০২৩ দিয়েছে সরকার।

পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ তৈরি মডেল পিএসসি বা চুক্তিনামা সংশোধন করে নতুন শর্ত দেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক শীর্ষ তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রহী করে তুলেছে।এ বিষয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, সংশোধিত পিএসসি চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, টু-ডি জরিপের তথ্য পেলে নভেম্বরের মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হবে। তবে জাতীয় জ্বালানি সচিব জানান, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই দরপত্র আহ্ববানের প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে, সমুদ্রে খনিজ অনুসন্ধানে আগ্রহ জানিয়েছে শীর্ষ আন্তর্জাতিক মার্কিন প্রতিষ্ঠান এক্সন মবিল। ইতোমধ্যেই সংশোধিত শর্তে প্রতিষ্ঠানটি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ২ দফা চিঠি দিয়েছে পেট্রোবাংলাকে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘এক্সন মবিলের অফারটা বিবেচনার মধ্যে আছে। আমরা একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে তাদের প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করব। এরপর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এবার মনে হচ্ছে, এক্সন মবিল বেশ সিরিয়াসলি এগিয়ে এসেছে’।

অন্যদিকে, শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতসহ দেশের প্রধান জ্বালানি মূলত নিজস্ব গ্যাস। কিন্তু ক্রমাগত এর মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঘাটতি মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বাড়িয়েছে সরকার। যার উৎপাদন ব্যয় নিজস্ব গ্যাসের থেকে প্রায় ২৫ গুণ বেশি। অন্যদিকে বিশ্ব জ্বালানি বাজারের অস্থিতিশীলতা ও সরকারের আর্থিক অবস্থান চুক্তি সংশোধনে বাধ্য করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়াও সমুদ্রের খনিজ অনুসন্ধানে বিদেশি বিনিয়োগের বিকল্প নেই। তাই প্রয়োজনীয় ছাড় দিয়ে হলেও জ্বালানি চাহিদা মেটানোর এটাই সুযোগ। সরকার এই সুযোগটাই নিচ্ছে বলেও জানান তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি-খনিজসম্পদ বিশ্লেষক বদরুল ইমাম বলেন, এবার এক্সন মবিলের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান অনুসন্ধানের জন্য বিশাল বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে, যা খুবই ইতিবাচক। তারা বড় অংকের বিনিয়োগ করতে চায়। এটা আমাদের গ্রহণ করা উচিত। প্রথমত সমুদ্রে টাকা বিনিয়োগের মতো অবস্থা দেশের নেই। দ্বিতীয়ত দেশের মজুত জ্বালানি যে হারে কমছে, এতে নতুন জ্বালানির উৎস সন্ধানও জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে সংশোধিত শর্ত অনুমোদনের মাধ্যমে দ্রুত কাজ শুরু করা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য এর আগেও ২০১২ সালের চার বিদেশি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করেও পরবর্তীতে কাজ বন্ধ করে দেয়। এরপর বহুবার আগের পিএসসিতে বিদেশিদের অনুসন্ধানে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। মূলত শর্তের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহ দেখায়নি। যদিও ২০১৯ সালে আরও একবার পিএসসি সংশোধন করা হয়, কিন্তু এতেও কোনো লাভ হয়নি।

অবশেষে পিএসসির পুরনো শর্তগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। সংশোধিত শর্তের খসড়ায় আগের চেয়ে গ্যাসের দাম এবং ভাগাভাগির পরিমাণে পরিবর্তন আনা হয়। এতেই অনুসন্ধানী প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ তৈরি হয় বলে জানান বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিপিসির তথ্যনুযায়ী, জুলাইয়ের শেষ দিকে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মডেল পিএসসি-২০২৩ অনুমোদন করা হয়। এবারের তৈরি পিএসসি প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে কাজ করা গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান উড ম্যাকেনজির পরামর্শ অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে। এখন চূড়ান্ত হওয়ায় প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

এ বিষয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি এক্সন বা আরও অনেক কোম্পানি আমাদের কাছে আগ্রহ দেখিয়েছে। এক্সন আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে দুইবার। তারাও আরেকটি সার্ভে শুরু করতে চায় এবং প্রাথমিকভাবে এক্সন ১০-৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় বলেও জানান তিনি।

এ বিষযে পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট বিভাগে সূত্র জানিয়েছে, নতুন পিএসসিতে প্রাইস মেকানিজম ও প্রাইস ফ্যাক্টর পরিবর্তন করা হয়েছে। কস্ট রিকভারিতে আর্লি প্রভিশন রাখা হয়েছে। গ্যাসের দাম ধরা হয়েছে ব্রন্ট ইনডেক্সিংয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে। উৎপাদনে আইওসির (ইন্টারন্যাশনাল অয়েল কোম্পানি) জন্য অংশীদারিত্ব মোটের ওপর ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কস্ট রিকভারি যাতে তাড়াতাড়ি হয় সেই ব্যাপারটা সংশোধন করা হয়েছে। এদিকে এক্সন মবিলসহ চীন ও ইউরোপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও আগ্রহ জানিয়েছে। আগামী মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরের পর যে কোনো সময় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হতে পারে।

নতুন পিএসসির ভিত্তিতে গভীর সমুদ্রের জ্বালানি উত্তোলনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যয় উঠে আসলে ৬৫ শতাংশ জ্বালানি পাওয়া যাবে। সেই হিসাবে বিনিয়োগের অর্থ পেতে ৫-৭ বছর সময় লাগতে পারে। তবে এর আগ পর্যন্ত অন্তত ৩৫ শতাংশ জ্বালানির ভাগ পাওয়া যাবে। এ ছাড়াও নতুন শর্তে অনুসন্ধানকারী কোম্পানির অংশের গ্যাস আগে স্থানীয় বাজারে অগ্রাধিকার পাবে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ