logo
Saturday , 19 August 2023
  1. সকল নিউজ

সেপ্টেম্বরে আসছে নেপালের বিদ্যুৎ

প্রতিবেদক
admin
August 19, 2023 9:47 am

তুলনামূলক সাশ্রয়ী দামে নেপাল থেকে ভারতের ওপর দিয়ে জলবিদ্যুৎ আমদানি করবে বাংলাদেশ। চলতি মাসে ত্রিদেশীয় চুক্তি শেষে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমদানিকৃত ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করছেন কর্মকর্তারা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রমতে, ২৫ বছর মেয়াদে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কারিগরি ও অন্যান্য বিষয় ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হলেও বিদ্যুতের দাম কত হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। তবে ভারত থেকে আমদানিকৃত অন্যান্য বিদ্যুতের তুলনায় এই দাম অনেক কম হবে বলে কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সরকারের যে লক্ষ্য রয়েছে সেটি পূরণেও কিছুটা সহায়ক হবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

নেপালের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত না থাকায় দেশটি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করতে হবে। ভারতের বহরমপুর হয়ে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা দিয়ে দেশে ওই বিদ্যুৎ আনতে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে। ইতিমধ্যে সঞ্চালন লাইন বিদ্যুৎ পরিবহনের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।

জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘দ্রুত চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশ-নেপাল দুই পক্ষ থেকেই চেষ্টা চলছে। ভারতও রাজি আছে। সুতরাং আশা করি আর কোনো সমস্যা হবে না।’

‘ড্রাই সিজনে’ (শুষ্ক মৌসুমে) ওদের (নেপালের) নিজেদেরই বিদ্যুতের সংকট দেখা দেয়। এজন্য তারা চাচ্ছে ‘ওয়েট সিজন’ (আর্দ্র বা বর্ষা মৌসুমে) থাকতে থাকতেই চুক্তি সই করতে। আমাদেরও এখন বিদ্যুতের ঘাটতি আছে। শীতকাল এলে আবার চাহিদা কমে যাবে। সুতরাং তাদের আর আমাদের দুই পক্ষেরই মেলে। ওদের এখন উৎপাদন ‘সারপ্লাস’ চাহিদার চেয়েও বেশি। আবার আমাদেরও চাহিদা আছে। কিছুদিন পর তাদের উৎপাদন কমে যাবে। তখন আমাদেরও চাহিদা কমে যাবে। ফলে এ সময় চুক্তি করলে দুপক্ষেরই লাভ। এটি নো লেটার দেন সেপ্টেম্বর (সেপ্টেম্বরের পরে নয়)। কারণ এরপর নেপালের ‘ড্রাই সিজন’ চলে আসছে, যোগ করেন তিনি।

মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, সঞ্চালন লাইন ও অন্য আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি শেষ হওয়ায় চুক্তির পরপরই নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, নেপাল এ মাসের মধ্যেই চুক্তি করতে চাচ্ছে। এখন পিডিবির প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করছে। কারণ পিডিবির সঙ্গেই এই চুক্তি সই হবে। নেপালের ইচ্ছে দ্রুত চুক্তি করে যেন এই মৌসুমে অন্তত কিছু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়।

সারা বছরই কি নেপাল থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নেপাল তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে যদি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে চায় তাহলে আমরা বছরে ছয় মাস বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারব। কিন্তু তারা যদি আমাদের মতো চিন্তা করে, অর্থাৎ আমরা অনেক কিছুই খেতে পারি না, কিন্তু আবার সেটা রপ্তানি করি। তাহলে নেপাল থেকে প্রায় সারা বছরই বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।’

কয়লা ও গ্যাসের চেয়ে এবং আমদানি করা অন্যান্য বিদ্যুতের চেয়ে নেপালের বিদ্যুতের দাম কম পড়বে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা হতে পারে। তবে এটি এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে জানতে পিডিবির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। অন্য কর্মকর্তারাও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভারতীয় সঞ্চালন লাইন ব্যবহারের জন্য সে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগাম লিমিটেডকে (এনভিভিএন) প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ভারতীয় মুদ্রায় ৪০ থেকে ৫৫ পয়সা করে পরিশোধ করতে হতে পারে। পাশাপাশি সার্ভিস চার্জ হিসেবে প্রতি ইউনিট ভারতীয় মুদ্রায় আরও ৪ থেকে ৭ পয়সা দিতে হবে বাংলাদেশকে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

বর্তমানে নেপালের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭০০ মেগাওয়াট। দেশটির নির্মাণাধীন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামী বছরগুলোতে প্রতি বছর ১০০০ থেকে ১২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ যোগ হবে নিজেদের জাতীয় গ্রিডে। অন্যদিকে নেপালের অভ্যন্তরীণ ব্যবহারও প্রতি বছর ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট করে বাড়বে। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ রপ্তানির চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে। এটি হলে বাংলাদেশে রপ্তানির মতো উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ নেপালের থাকবে না। এসব বিষয় বিবেচনা করে জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে নেপালের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিতে ৩০ বছর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতির (সভারেন গ্যারান্টি) বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে বিদ্যুৎ বিভাগকে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ ছাড়া নেপালে বাস্তবায়নাধীন ভারতের জিএমআর গ্রুপের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে শিগগির একটি চুক্তি সই হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও ভবিষ্যতে শীত মৌসুমে যখন দেশে চাহিদা কমে যায় তখন উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ নেপালে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

সূত্রমতে, নেপাল এবং বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে নেপালে ৬৮৩ মেগাওয়াট সানকোশি-৩ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে একমত হয়েছে দুই দেশ। ওই কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার ব্যাপারে দুই দেশ একমত হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই হতে পারে।

নেপালে আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে ২০১৯ সালে জিএমআরের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (পিপিএ) সই করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। গত বছরের ২৫ অক্টোবর নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বলেছেন, নেপাল এ মুহূর্তে বাংলাদেশকে ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তবে তাদের বিদ্যুৎ খাতে একটি মেগা প্রকল্প শেষ হওয়ার পর এর পরিমাণ আরও বাড়বে।

সর্বশেষ - সকল নিউজ