logo
Thursday , 17 August 2023
  1. সকল নিউজ

দ্রুতগতিতে চলছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণ কাজ

প্রতিবেদক
admin
August 17, 2023 9:57 am

প্রমত্ত যমুনার বুক চিড়ে নির্মিত হচ্ছে দীর্ঘতম বঙ্গবন্ধু রেল সেতু। পূর্বপাড়ে দৃশ্যমান ২ কি.মি. রেলসেতু। পশ্চিমপারে দ্রুতগতিতে চলছে নির্মাণ কাজ। প্রমত্ত উত্তাল যমুনার বুকে নির্মিত হচ্ছে দেশের মেগা প্রকল্পের অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। এই কর্মকান্ডকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে নদীর দুই পাড়ে দুটি প্যাকেজে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী আর কর্মীদের তত্ত্বাবধানে নতুন দিগন্ত সৃষ্টির লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে চলছে এ কর্মযজ্ঞ। মূল সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের মধ্যে উত্তাল যমুনার বুকে এখন দৃশ্যমান ২ দশমিক ১৫ কিলোমিটার।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পে সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল অংশে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এটিই হবে দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুর নির্মাণে ২০২১ সালের মার্চে সেতুর পিলার নির্মাণে পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। দ্রুতগতিতে নির্মাণ কাজ চলছে। যথাসময়ে কাজ শেষ করা গেলে ২০২৪ সালে এ সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। তখন ঢাকার সাথে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে মানুষের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে আরও গতি আসবে।

জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ডাব্লিউ ডি-১ ও ডাব্লিউ ডি-২ নামে দুটি প্যাকেজে জাপানি ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন। ডাব্লিউ ডি-১ প্যাকেজটি বাস্তবায়ন করছে জাপানি আন্তর্জাতিক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওবাইসি, টোআ কর্পোরশেন ও জেইসি (ওটিজে) জয়েন্ট ভেঞ্চার। টাঙ্গাইলের প্রান্তে সেতুর ২৪ থেকে ৫০ নম্বর পিয়ার পর্যন্ত কাজ করছে তারা। ডাব্লিউ ডি-২ প্যাকেজটি বাস্তবায়নে রয়েছে জাপানের আইএইচআই ও এসএমসিসি জয়েন্ট ভেঞ্চার। সিরাজগঞ্জের প্রান্তে ২৩ থেকে ১ নম্বর পিয়ার পর্যন্ত সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে তারা। সেতুটি নির্মাণে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, নেপাল ও বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। দিন-রাত সমান্তরাল কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের সাব স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার রবিউল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যান বসানো হবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১০০ মিটার। এরইমধ্যে ৩১টি পিলার বসানো হয়েছে। এরই মধ্যে স্প্যান বসানো হয়েছে ২২টি। বাকি ১৯টি বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। পূর্ব পারের কাজ প্রায় শেষের দিকে চলছে পশ্চিমপারের কাজ।

দুটি প্যাকেজের টাঙ্গাইল অংশে ৭৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও সিরাজগঞ্জ অংশে ৫৮ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ সেতু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়েছে ৬৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে ৭ হাজার ৩৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কাজ করছেন। ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। প্রতিদিন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু চালু হওয়ার পর ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। বঙ্গবন্ধু রেল সেতু চালু হলে আর রেল থামিয়ে বসে থাকতে হবে না। কারণ এটি ডবল লাইনের হওয়ায় একইসঙ্গে একাধিক ট্রেন চলাচল করতে পারবে। এতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে মানুষের যাতায়াতের সঙ্গে অঞ্চলের ব্যবসার প্রসার ঘটবে। ১০০ থেকে ১২০ কি.মি. বেগে অবিরাম চলবে রেল।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল-ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হচ্ছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সঠিক সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। পরে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হওয়ায় সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়। এতে যাত্রী ভোগান্তি বাড়ছে। এ সকল সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। রেলসেতুটি নির্মাণ হলে এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি ট্রেন চলাচল করবে। এতে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগে প্রসার ঘটবে। সূচনা হবে নবদিগন্তের।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত