logo
Monday , 14 August 2023
  1. সকল নিউজ

টাকা ও রুপিতে বাণিজ্য অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত

প্রতিবেদক
admin
August 14, 2023 9:39 am

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিনিময় মুদ্রা হিসেবে ভারতীয় রুপি এবং বাংলাদেশী টাকার প্রচলন শুরু হয়েছে। ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে হলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেটা টাকায় বা রুপিতে পরিশোধ করতে পারবেন। আবার বাংলাদেশ  থেকে কোনো পণ্য ভারতীয় কোনো ব্যবসায়ী আমদানি করতে চাইলে, সেটাও রুপিতে বা টাকায় পরিশোধ করতে পারবেন। যদিও প্রাথমিকভাবে ভারতীয় রুপিতে এ ব্যবসা শুরু হয়েছে কিন্তু ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশী টাকাও দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিনিময় মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

একটি পাইলট কর্মসূচি হিসেবে বাংলাদেশের দুটি ব্যাংক (সোনালী ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক) এবং ভারতের দুটি ব্যাংকের (আইসিআইসিআই ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া) মাধ্যমে টাকা ও রুপিতে ব্যবসার এই প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংক এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (এসবিআই) বাংলাদেশে পরিচালিত কান্ট্রি অফিস ইতোমধ্যে ভারতীয় আইসিআইসিআই ব্যাংক এবং এসবিআইতে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। বাংলাদেশের ইস্টার্ন ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকও ভারতে ইতোমধ্যে অ্যাকাউন্ট খুলেছে।
টাকা ও রুপিতে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রতি শুরু হলেও এটা অনেক বছর ধরে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। পৃথিবীর অন্যান্য অনেক অঞ্চলেও এ ধরনের নিজস্ব আঞ্চলিক মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানির ব্যয় পরিশোধ করার নজির আছে এবং এ রকম বিনিময় ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অর্থনীতিতে মুদ্রা ব্যবস্থায়, বিনিময় ব্যবস্থায়, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ক্ষেত্রে একটা বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে এসব অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের বিনিময় মুদ্রা হিসেবে টাকা এবং রুপির ব্যবহারকে উৎসাহিত করেছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ সংকট  মোকাবিলায় ডলারের বিকল্প হিসেবে রুপি এবং টাকার ব্যবহার উভয়ের জন্য লাভজনক এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ  নেই। তবে এখানে  লাভ কার বেশি এবং কার কম- সেটাই হচ্ছে মূল প্রশ্ন। তবে রুপি-টাকার কারবারের এ উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে সবাই স্বাগত জানিয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজ।
এ মহতী কার্যক্রমটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। উল্লেখ্য যে, দুই দেশের সরকারের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বাকি কাজ চূড়ান্ত করতে ভারত থেকে সম্প্রতি একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসেছিল। তারা বাংলাদেশের দুটি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে সব কিছু ঠিকঠাক করে গেছে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের ইস্টার্ন ও ভারতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে  রুপিতে লেনদেন করতে পারবেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা,  সোনালী ব্যাংক অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

ভারত অংশে এ সম্পর্কিত বিষয়ের দায়িত্বে থাকবে দেশটির আইসিআইসি ব্যাংক এবং স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। রুপিতে লেনদেনের চাহিদা বাড়লে পর্যায়ক্রমে অন্য ব্যাংককেও অনুমতি দেবে বাংলাদেশ এবং ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট আমদানির বড় অংশ হয় চীন ও ভারত থেকে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত মোট আমদানির ১৯ শতাংশের বেশি এসেছে ভারত থেকে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটি থেকে আমদানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলার বা আমদানির ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। গত মার্চ পর্যন্ত চীন থেকে এসেছে  মোট আমদানির ২৬ শতাংশের বেশি।

২০২১-২২ অর্থবছরে  দেশটি থেকে আমদানির অঙ্ক ছিল ১ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই কার্যক্রম চালুর পর ব্যাংকগুলো রুপিতে এলসি করতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে অনুমতি দেবে। বাংলাদেশের কোনো ব্যবসায়ী আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে রুপিতে এলসি খুলতে চাইলে তা করতে পারবেন।
বর্তমানে ভারত থেকে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় আসে। অর্থাৎ দুই বিলিয়ন ডলারের লেনদেন হতে পারে রুপিতে। যদিও ভারত থেকে আমদানিতে ব্যয় হয় ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে ভারতে রপ্তানি বাড়াতে পারলে সে হিসাব পালটে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্টরা  বলছেন, ব্যবসায়িকভাবে বাংলাদেশের খুব বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রপ্তানির চেয়ে আমদানি অনেক বেশি। শুধু রুপিতেই নয়, টাকাতেও এমন লেনদেনের সুযোগ থাকা উচিত। তা না হলে এক পক্ষীয় অবস্থা তৈরি হবে। দীর্ঘমেয়াদে সুবিধা করা যাবে না।তবে রুপিতে লেনদেন চালুর ফলে কস্ট অব বিজনেস কিছুটা কমে যাবে। টাকায় লেনদেন চালু হলে আরও সুবিধা হবে। তবে ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, শুধু ভারতই নয়, চায়নিজ কারেন্সি ইউয়ান মুদ্রারও এ সুযোগ দেওয়া উচিত। রাশিয়ার সঙ্গে পেমেন্ট নিয়ে জটিলতা চলছে, এই পেমেন্ট ইন্ডিয়ান কারেন্সিতে পরিশোধ করতে পারলে সুবিধা হবে। তবে অনেকে বলছেন কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা বা নিজস্ব মুদ্রা বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য করার আলোচনা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রা এড়িয়ে দুটি দেশ যখন নিজেদের মধ্যে নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য পরিচালনা করে, আর্থিক পরিভাষায় একে বলা হয় ‘কারেন্সি সোয়াপ ব্যবস্থা।

এখন সেই ব্যবস্থায় লেনদেনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। অবশ্য এ যাত্রায় প্রথমে শুধু রুপিতে লেনদেন শুরু হবে। অর্থাৎ ডলারের পরিবর্তে রুপিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলে লেনদেন করবে। পরবর্তীতে টাকায় লেনদেনে বিষয়টি অনুমোদন দেওয়া হবে। ভারত অবশ্য মার্কিন ডলারের পাশাপাশি নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে অনেক দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য শুরু করেছে। তবে দেশটি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু করতে যাচ্ছে রুপিতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। দুই দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি থাকায় কিছুটা হলেও মার্কিন ডলারের ওপর চাপ কমবে এবং দুই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেই স্বস্তি আসবে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যায়ক্রমে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি যত বাড়বে, রুপিতে বাণিজ্যের সম্ভাবনা তত বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও মনে করছে, এ পদ্ধতি চালু করা গেলে ভারতকে বাণিজ্যিক লেনদেনে যে পরিমাণ অর্থ দিতে হতো, তার একটি অংশ আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দিতে হবে না। ফলে রিজার্ভের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমবে। এতে এক্সচেঞ্জ রেটের ক্রস কনভারশন কিছুটা কমে আসবে। ব্যবসার খরচও কমবে। তবে এটি চালু হওয়ার পর বোঝা যাবে আসলে কতটা সাশ্রয় হচ্ছে। যদিও বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। তিনি বলেছেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আসলে একক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা ভালো নয়।

তা নানা সমস্যা তৈরি করে। সে ক্ষেত্রে এই উদ্যোগটি অবশ্যই ভালো। তবে এটি সুব্যবস্থার মাধ্যমে করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। রুপিতে বাণিজ্য প্রাথমিকভাবে ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। কাঁচামাল আমদানির জন্য সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পোশাক রপ্তানিকারকরা সহজেই ভারত থেকে রুপিতে কাঁচামাল কিনতে পারবেন। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি বলেছেন, ‘এই উদ্যোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। ডলারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কিছুটা কমাবে। ফলে ব্যবসার খরচও কমবে।’

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি বলেছেন, ‘আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হতে যাওয়া  দ্বৈত মুদ্রা কার্ড ডলারে রূপান্তরের ফলে বিনিময় হারের ক্ষতি কমাবে। টাকা-রুপি কার্ড ২ দেশের ভ্রমণকারীর জন্য উপকারীও হবে।’ এভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন টাকা-রুপির কারবার শুরু হওয়ার বিষয়টিকে অত্যন্ত ইতিবাচক জায়গা থেকে দেখছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের একটা বড় পার্থক্য, যা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যেমন গত অর্থবছরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাতটির পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। কেননা, বাংলাদেশ আমদানি করেছে ১২ বিলিয়ন ডলারের পণ্যদ্রব্য কিন্তু রপ্তানি করেছে মাত্র ২ বিলিয়ন ডলার। ফলে এ আমদানি-রপ্তানি মধ্যকার বিস্তর  বৈষম্যের কারণে লাভের অঙ্ক ভারতের গোলায় বেশি যাবে।

তবে এর অনেক ইতিবাচক দিকও আছে। যদি ১২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ ভারতকে ডলারের বিনিময়ে রুপি বা টাকায় পরিশোধ করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে রিজার্ভের ওপর থেকে একটা বড় মাপের চাপ কমবে। এছাড়া প্রতি বছর প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশী বিভিন্ন কারণে (প্রধানত চিকিৎসা এবং ভ্রমণ) ভারতে গমন করে। তাদেরও একটা বড় মাপের আর্থিক সাশ্রয় হবে, কেননা কনভার্সন কস্ট হিসেবে ৪ থেকে ৬ শতাংশ আগে ক্ষতি হতো, সেটা এখন থেকে আর হবে না। ডুয়েল মানি কার্ডস চালু হলে তার দ্বারাও বাংলাদেশ এবং ভারতের জনগণও নানাভাবে উপকৃত হবেন এবং টাকা-রুপির চালু হওয়া এ কারবার ভবিষ্যতে আরও বহু সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। এখন সময় বলে দেবে, এ সুযোগ আমরা কতটা কাজে লাগাতে পারি।

সর্বশেষ - সকল নিউজ

আপনার জন্য নির্বাচিত

খালেদার পাশে যুবলীগ নেত্রী: বেরিয়ে এলো আসল রহস্য!

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার শ্রদ্ধা নিবেদন

বিএনপির রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে গ্রুপিং

আওয়ামী লীগই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে – আলজাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী

তেলের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করা ছিল ভুল: বাণিজ্যমন্ত্রী

রমজান মাসে এক কোটি মানুষ পাবে খাদ্যপণ্য: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

বন্যা দুর্গতদের ৫০ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা দেবে জাতিসংঘ

দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে

দূরদর্শিতার অভাবে ডুবতে বসেছে বিআইডব্লিউটিসি

উপ-নির্বাচনে প্রমাণ হলো আ’লীগের আমলে ভোট সুষ্ঠু হয়: প্রধানমন্ত্রী