logo
Sunday , 5 March 2023
  1. সকল নিউজ

তিস্তা থেকে আরো পানি সরানোর আয়োজন পশ্চিমবঙ্গের

প্রতিবেদক
admin
March 5, 2023 9:23 am

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের অধীনে আরো দুটি খাল খননের জন্য শুক্রবার প্রায় এক হাজার একর জমি বুঝে পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সেচ বিভাগ। এই পদক্ষেপ ভারতের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় আরো বেশি কৃষিজমি সেচের আওতায় আনতে সাহায্য করলেও বাংলাদেশকে বিপর্যস্ত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানিসংকট নিরসনে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় গতকাল শনিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে তিস্তার কোনো বিষয় মন্ত্রণালয়ের নথিতে আসেনি। এসংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

পত্রিকায় বলা হয়, গত শুক্রবার জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে প্রায় এক হাজার একর জমি অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেছে। এই জমি তিস্তার বাম তীরে দুটি খাল খনন করতে প্রশাসনকে সহায়তা করবে। এ ছাড়া জলপাইগুড়ি জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আরেকটি নদী জলঢাকা থেকে পানি সেচের জন্য খালের দিকে প্রবাহিত করা হবে।

অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলেছে, ‘পরিকল্পনা অনুসারে, তিস্তা ও জলঢাকা থেকে পানি তোলার জন্য কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ খাল খনন করা হবে। তিস্তার বাম তীরে আরো একটি খাল খনন করা হবে, যার দৈর্ঘ্য হবে ১৫ কিলোমিটার।’ প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, খালগুলো খনন করা হলে সেখানকার প্রায় এক লাখ কৃষক সেচের সুবিধা পাবেন।

তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পটি ১৯৭৫ সালে ভারতের উত্তরাঞ্চলের ৯.২২ লাখ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে চালু করা হয়েছিল। ব্যারাজটি জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় অবস্থিত। পরিকল্পনা ছিল তিস্তা থেকে নদীর দুই তীরের খালের মাধ্যমে পানি পাঠানোর। পথে খালগুলো সেই অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত অন্যান্য নদী থেকেও পানি পাবে। তবে প্রকল্পটির মাধ্যমে এখন মাত্র ১.০৪ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। সেচমন্ত্রী ভৌমিক শুক্রবার বলেছেন, ‘জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন খাল খননের জন্য আমাদের কাছে এক হাজার একর জায়গা হস্তান্তর করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার (২০০৯ সালে) এটিকে একটি জাতীয় প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছিল, কিন্তু তহবিল সরবরাহ করেনি। তহবিল না পেলেও আমরা পর্যায়ক্রমে কাজ (খালের নেটওয়ার্ক তৈরি) শেষ করার চেষ্টা করব।’

এদিকে ২০ বছরেরও বেশি সময় পর তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের অধীনে নতুন খাল খনন করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত ঢাকার দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণে নয়াদিল্লি ও ঢাকা তিস্তার পানি ভাগাভাগির জন্য চুক্তি করতে পারেনি।

একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেছেন, তিস্তা প্রকল্পের আওতা বাড়িয়ে মমতা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে দেশটির উত্তরাঞ্চলের নদীর পানি দরকার। শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের একজন শিক্ষক বলেছেন, ‘এখন যখন সরকার সেচ নেটওয়ার্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে, এটা স্পষ্ট যে তিস্তা থেকে আরো বেশি পানি নতুন খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হবে। এর মানে হলো, শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের জন্য কম পানি পাওয়া যাবে।’

উল্লেখ্য, গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তায় প্রায় ১০০ কিউসেক (কিউবিক মিটার প্রতি সেকেন্ড) পানি পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, ভারত ও বাংলাদেশে কৃষিজমিতে সেচের জন্য প্রায় এক হাজার ৬০০ কিউসেক পানি প্রয়োজন।

সর্বশেষ - সকল নিউজ